ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের পর বিভাগীয় শহর সিলেটে অনুষ্ঠিত হলো ‘উজান বইযাত্রা’।
‘উজান বইযাত্রা’র এই আয়োজনে ছিল আলোচনা, কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও বইমেলা। আলোচকরা প্রকাশনা সংস্থা উজানের অনুবাদ বই ‘কোরিয়ার গল্প’ ও ‘কোরিয়ার কবিতা’ নিয়ে আলোচনা করেন। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নগরীর জিন্দাবাজারে নজরুল একাডেমিতে শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এই বইযাত্রার আলোচনায় অতিথি আলোচক কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিন বলেন, ‘গল্প ও কবিতার মতোই অনুবাদও আলাদা একটি সাহিত্য মাধ্যম। কোনো অনুবাদ শতভাগ হয় না। শতভাগ সফল অনুবাদ বলেও কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ হিসেবে আমরা সবাই অপর-প্রাণ। আমাদের সেই জিনিস ভালো লাগে যা আমার মতো নয়, যা অন্যরকম। এই কারণেই আমাদের বিদেশি খাবার, বিদেশি চলচ্চিত্র ও শিল্প-সাহিত্য ভালো লাগে। অনুবাদ আমাদের অপরকে নিজের করে নেওয়ার এবং অন্যের সঙ্গে সংযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ করে দেয়।’ কোরিয়ার সাহিত্য অনুবাদের মাধ্যমে সেই ধরনের সংযোগ ও সমন্বয়ে আমরা সমৃদ্ধ হব বলে জানান তিনি।
কবি ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. জফির সেতু বলেন, ‘চরম দারিদ্র্য ও বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে উন্নতির শীর্ষের দিকে যাত্রা করা দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার মন ও মননের হদিস নিতে আমরা তাদের চলচ্চিত্র, নাটক, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছি।’ তিনি বলেন, ‘অনেক দিন আমাদের এশিয়ার সাহিত্যের দিকে খেয়াল ছিল না। আমরা দূরের খবর নিয়েছি, কিন্তু আমাদের মনিপুরী, চাকমা, মারমাদের সাহিত্যের খবর নিইনি। এখন এসে সেই অবস্থার পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। নানা জনজাতির শিল্প-সাহিত্যের নজর ও মনোযোগ পড়ছে আমাদের।’
কবি ও প্রাবন্ধিক মোস্তাক আহমাদ দীন বলেন, ‘বাংলাসাহিত্যের কবি ও লেখকদের বিশ শতকের নব্বই ও শূন্য দশকের পরে একটা পরিবর্তন এসেছে। তারা তাদের স্থানিক বৈশিষ্ট্যকে সাহিত্যে তুলে ধরতে চাইছেন। কোরিয়ার গল্প এবং কোরিয়ার কবিতায় আমরা সেই স্থানিকতার প্রতিফলন দেখছি। উজান প্রকাশনের কাছে আমরা ভবিষ্যতে কোরিয়ার সাহিত্যের শুরু দিকের রচনাগুলোর অনুবাদ চাইব।’
অনুষ্ঠানে সভাপতি লেখক অধ্যাপক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেন, ‘অনুবাদ আমাদের সত্তাকে সম্প্রসারিত করে।’ অন্যান্য অনুবাদ গ্রন্থের মতোই এই দুটি অনুবাদ বইও আমাদের পাঠকদের সত্তাকে সম্প্রসারিত করবে এবং পাঠককে আরও বেশি পাঠে উদ্বুদ্ধ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন লোকগবেষক ও সাংবাদিক সুমনকুমার দাশ, কবি মুহম্মদ ইমদাদ, কবি ও শিক্ষক প্রণবকান্তি দেব। তারা কোরিয়ার সাহিত্যের আরও অনুবাদ হোক এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
‘উজান বইযাত্রা ও বইমেলা’র এই আয়োজনে আলোচনার পাশাপাশি ছিল ‘কোরিয়ার কবিতা’ বই থেকে আবৃত্তি। আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী আল আমিন এবং সান্ত্বনা দাস। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সঞ্জয় কুমার নাথ। এই আয়োজনে ছিল উজান প্রকাশনের বই নিয়ে বিশেষ বইমেলা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের কবি-সাহিত্যিক এবং শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের লোকজন।
বাংলাভাষায় অনূদিত ‘কোরিয়ার গল্প’ ও ‘কোরিয়ার কবিতা’ বই দুটি নিয়ে ‘উজান বইযাত্রা ও বইমেলা’র আয়োজন এর আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। পরবর্তীতে একই ধরনের আয়োজন থাকবে রাজশাহীতে।