২২০ টাকার কমে মাছ নেই, ইলিশের কেজি দু’হাজার

২২০ টাকার নিচে বাজারে এখন কোন মাছ নেই। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আমিষের চাহিদা মেটানো চাষের পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া এখন দুশ’র গণ্ডি ছাড়িয়েছে। প্রতিকেজি পাঙ্গাস দুইশ’ বিশ থেকে আড়াইশ’, তেলাপিয়া আড়াইশ’ থেকে দুইশ’ আশি টাকা, কৈ দুইশ’ ত্রিশ থেকে আড়াইশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহ ব্যবধানে এসব মাছের দাম বেড়েছে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা। সব থেকে বেশি বেড়েছে ইলিশ মাছের দাম। কেজিতে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা। রাজধানীর বাজারগুলোতে ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম এখন দুই হাজার টাকা। সপ্তাহ খানেক আগেও যা ছিল আঠারশ’ টাকা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারে ইলিশ মাছ কিনতে এসেছেন শাহিনুর রহমান। ইলিশের দাম শুনে ‘ধাক্কা’ খেয়েছেন তিনি। বলেন: বাসায় মেহমান আসবে বলে ইলিশ মাছ কিনতে এসেছি। কিন্তু ১ কেজি ওজনের ইলিশ দু’হাজার টাকা চাইছে। কয়েকটা দোকান ঘুরলাম, কম নাই।তাই বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে।

সম্প্রতি ২০ মে থেকে পরবর্তী ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। যার কারণে বাজারে সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ থাকায় চাপ বেড়েছে মিঠা পানির মাছের ওপর। আবার নদী গুলোতে পানি বাড়তে থাকায় পর্যাপ্ত মাছের আমদানি নেই বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

রামপুরা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আক্কাস আলী বলছেন, সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় মাছের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগেও যে মাছের দাম ছিল এখন তা কেজিতে একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা বেশি। আবার নদীতে পানি বাড়ছে, তেমন একটা মাছ ধরা পড়ছে না।

মাছের দামের এ ঊর্ধ্বগতি সহসাই কমবে না বলে জানাচ্ছেন কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মোল্লা। তিনি বলছেন, এখন আর মাছের দাম কমবে না। সমুদ্রের মাছ আসছে না। নদীর মাছও কম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও এক থেকে দেড় মাস লাগবে। এখন দাম কমার কোন সম্ভবনা নেই।

সামুদ্রিক মাছ বাজারে যা আছে তা খুবই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। রুপচাঁদা প্রতিকেজি চৌদ্দশ’, কোরাল পাঁচশ’, চাপিলা তিনশ’, রিঠা সাতশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আর নদীর মাছের মধ্যে বোয়াল পাঁচশ’, মলা চারশ’, চিংড়ি আটশ’ থেকে চৌদ্দশ’, পাঙ্গাস এক হাজার, আইড় সাতশ’, বাইম আটশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর হাতিপুল বাজারে পরিবারের জন্য মাছ কিনতে এসেছেন তোফাজ্জল হোসেন। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলছেন: প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আমরা ক্রেতা আমাদের আর কি করার আছে, কিনে খাইতে হবে। আগে যা কিনতে পারতাম এখন তার থেকে কম কিনতে হচ্ছে। খেতে তো হবে। কিন্তু সব কিছু বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে। মাছ খাওয়া তো আর বন্ধ করতে পারব না। অন্য খরচ থেকে কাটছাট করে এখানে যোগ করতে হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতাদের সিন্ডিকেটের কথাও বলছেন আরেক ক্রেতা সাকিব সিদ্দিক। তিনি বলছেন, একেক বাজারে মাছের দাম একেক রকম। এক বাজারের সব বিক্রেতাই একই দাম চায়। তারা সিন্ডিকেট করে রাখে। দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর সঠিক মনিটরিং না থাকার বলি হচ্ছি আমরা।

চাষের মাছেও স্বস্তি নেই বাজারের। কেজির ওপরে রুই মাছ সাড়ে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা আর কেজির নিচে মাছের কেজি সাড়ে তিনশ’ টাকা। শিং ও পাবদা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা প্রতিকেজি।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ও ক্রাস্টাসিয়ান্স (কঠিন আবরণযুক্ত জলজ প্রাণী, কাঁকড়া) এর জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং মাছের মজুদ সংরক্ষণ সুষ্ঠু ও সহনশীল আহরণ নিশ্চিত করার স্বার্থে ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর এ সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে।

এর সুফল হিসেবেই প্রজনন মৌসুমের পর জেলেরা বিপুল পরিমাণ মাছ আহরণ করতে পারে বলে সরকারের তরফে বলা হয়।

চিংড়িতেলাপিয়াপাঙ্গাস