কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় সৎ মায়ের সহযোগিতায় এক পিতা তার শিশু কন্যাকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। উপজেলার বাঘরাইট শিমুলতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই শিশুর পিতা ইকবাল (৩৮) উপজেলার বাঘরাইট শিমুলতলী এলাকার নিজামুদ্দিনের ছেলে। তার দু’জন স্ত্রী রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর চার সন্তান ও দ্বিতীয় স্ত্রীর এক সন্তান। প্রথম স্ত্রী সৌদি আরব প্রবাসী। ঘটনার পর থেকে ইকবাল ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাবেয়া পলাতক রয়েছে।
১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ভিডিওর প্রথম ২ সেকেন্ডে শোনা যাচ্ছে পিতা ইকবাল তার নিজের মোবাইল ফোনটি ভিডিও রেকর্ড চালু করে কাউকে বলছে এভাবে ধরে রেকর্ড কর।
এরপর ভিডিওর অর্ধেক অংশে দেখা যাচ্ছে বাচ্চা মেয়েটি (স্বর্ণার) আত্মচিৎকার করে বলছে আব্বা আর কইতাম না, কইতাম না…। কিন্তু এরপরও বাবা শিশু মেয়ে স্বর্ণাকে নির্যাতন করেই যাচ্ছে। ভিডিটির এক পর্যায়ে দেখা যায় পাষণ্ড বাবা ইকবাল তার পা দিয়ে স্বর্ণার মুখে চেপে ধরে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। এরপর এক মেয়ে এসে স্বর্ণাকে উদ্ধার করে।
প্রতিবেশীরা জানায়, কয়েকদিন আগে ইকবাল তার মোবাইল ফোনের ভিডিও ক্যামেরা চালু করে দ্বিতীয় স্ত্রী রাবেয়ার হাতে দিয়ে প্রথম স্ত্রী হালিমার তৃতীয় সন্তান স্বর্ণাকে নির্যাতন করে। পরে সেই ভিডিও প্রথম স্ত্রী হালিমার ইমোতে পাঠায় ইকবাল। এরপর হালিমা তার সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে প্রবাসী বাংলাদেশি একজনের সহযোগিতা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্ট করেন। পরে সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে ওঠে। যা জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। পাষণ্ড পিতা ইকবাল ও তার সহযোগী সৎ মা রাবেয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয় সমাজকর্মী শাওন পারভেজ বলেন, বাবা কর্তৃক শিশু মেয়েকে নির্যাতনের ভিডিওটি ফেসবুকে দেখে মর্মাহত হয়েছি। এভাবে কেউ শিশুদের নির্যাতন করতে পারে? প্রশাসনের কাছে আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
কটিয়াদী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কমিশনার মাহফুজুর রহমান মিঠু জানান, ইকবাল প্রায়ই সময় তার বাচ্চাদেরকে এভাবে নির্যাতন করে। তিন বছর আগেও আমি এখানে এসে সামাজিকভাবে তার বিচার করছি। তার পরেও সে সংশোধন হয়নি। ইকবাল দু’টি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রী সৌদি আরবে রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর সন্তানদেরকে সে খুবই নির্মম নির্যাতন করে। নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তার চেয়েও বেশি নির্যাতন সে করে। আমরা এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস. এম. শাহাদাত হোসেন জানান, গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে আমি একটি ভিডিও ক্লিপ পাই। তাৎক্ষণিক পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি ভিকটিমের পরিবারের সাথে কথা বলি। আলোচনা করে ঘটনাটি আমার কাছে নির্মম মনে হলো। পরে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সাথেও আলোচনা করি। পুলিশ সুপার নির্দেশ দেয় নির্যাতনকারী বাবাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে। এই নির্দেশনা মতে আমি নির্যাতনকারী ওই বাবাকে গ্রেপ্তারে জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। গ্রেপ্তারের পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।