লা লিগার সভাপতি হাভিয়ের তেবাস ক্রমাগত বর্ণবাদের শিকার হতে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে নিয়ে করা একটি টুইটের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তেবাসের মতে, তার করা টুইটের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
লা লিগা সভাপতি বলেছেন, ‘বেশিরভাগ মানুষ যখন একটি বার্তার নির্দিষ্ট অর্থ বোঝে, তার মানে দাঁড়ায় তারাই সঠিক। এজন্য আমার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। কারণ আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে বার্তা লিখেছিলাম, তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ বোঝাতে পারিনি। বিশেষ করে ব্রাজিলে।’
‘আমার উদ্দেশ্য ভিনিসিয়াসকে আক্রমণ করা ছিল না। বরং স্পষ্ট করে বোঝাতে চাচ্ছিলাম যে, ভিনিসিয়াস মাত্র একমাস আগে লা লিগার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপকে সমর্থন করে একটি ভিডিও তৈরি করেছিলেন।’
গ্যালারিতে থাকা যেসব দর্শক ফুটবলারদের আক্রমণ করে বর্ণবাদী স্লোগান দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে নিজের হাত-পা বাঁধা বলেই জানান তেবাস। একইসঙ্গে বলেছেন, স্প্যানিশ ফেডারেশনের (আরএফইএফ) বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আরও বেশি কাজ করা উচিৎ। কারণ লিগের বর্তমানে সেই কর্তৃত্ব নেই।
‘চলতি মৌসুমে বর্ণবাদী আচরণ সংক্রান্ত নয়টি রিপোর্ট করা হয়েছে। এরমধ্যে আটটি ভিনিকে অপমানের জন্য হয়েছে। আমরা সবসময় এসব উন্মাদদের চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে অভিযোগ দায়ের করি। তারা সংখ্যায় যত কমই হোক না কেনো, আমরা তাদের চিহ্নিত করতে নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাই।’
‘ফেডারেশন এবং লা লিগা দুটি আলাদা সত্ত্বা। স্টেডিয়াম থেকে লোকদের বের করে দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। এটা ফেডারেশন করে থাকে। অপরাধীদের অনুমোদন ও শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা স্টেডিয়াম বন্ধ করে দেবো, ভক্তদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবো। তবে স্টেডিয়ামের বাইরে থেকেও আমাদের দায়িত্ব আছে।’
‘আমরা বর্ণবাদ সম্পর্কে অভিযোগ দায়ের করেছি, যা শুধু জরিমানা প্রদানের মধ্য দিয়েই শেষ করা হয়েছে। আশা করি আমাদের ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হবে। যদি আমাদের ব্যবস্থা নেয়ার কর্তৃত্ব থাকত, কয়েকমাসের মধ্যে স্টেডিয়ামগুলোতে বর্ণবাদের অবসান ঘটাতাম।’
গত রোববার রাতে ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে রিয়ালের হারা ম্যাচে আবারও বর্ণবাদী আক্রমণের মুখে পড়েছেন ভিনিসিয়াস। তিক্ত অভিজ্ঞতার পর মেজাজ হারিয়ে লাল কার্ড দেখেছেন। পরে অবশ্য সেটি প্রত্যাহারও করেছে লা লিগা কর্তৃপক্ষ।
ম্যাচ শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভিনিসিয়াস লিখেছিলেন, ‘এমন ঘটনা প্রথমবার নয়, দ্বিতীয়বারও না, তৃতীয়বারও নয়। অনেকবার হয়েছে। লা লিগায় বর্ণবাদ স্বাভাবিক বিষয় যেন। প্রতিযোগিতার আয়োজকরা মনে করে এটাই স্বাভাবিক। ফেডারেশনও তাই মনে করে। প্রতিপক্ষরা এটাকে উৎসাহিত করে।’
‘স্পেন একটি সুন্দর দেশ, যারা আমাকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং আমি তাদের ভালোবাসি। কিন্তু তারা একটি বর্ণবাদী দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে রপ্তানি করতে উঠেপড়ে লেগেছে। আমি স্প্যানিয়ার্ডদের জন্য দুঃখিত, যারা আমার সাথে একমত নন। কিন্তু আজ ব্রাজিলে বর্ণবাদীদের দেশ হিসেবে স্পেন পরিচিত।’
ভিনির পোস্টের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে লা লিগা বিবৃতি দেয়। বলেছিল, ‘তারা বছরের পর বছর ধরে এই ধরণের(বর্ণবাদী) আচরণের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। পাশাপাশি খেলার ইতিবাচক মূল্যবোধকে প্রচার করছে। কেবল খেলার মাঠেই নয়, এর বাইরেও।’
লা লিগা কর্তৃপক্ষের এই বিবৃতির পর ভিনিসিয়াসের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের জবাব দিতে এসেছিলেন লিগটির সভাপতি হাভিয়ের তেবাসও। বর্ণবাদের এমন ঘটনায় লিগ কর্তৃপক্ষ ভিনির থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পায়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
‘বর্ণবাদের ব্যাপারে লা লিগা কী করতে পারে এই ব্যাপারে আপনাকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি নিজের অনুরোধে দেয়া দুটি তারিখে উপস্থিত হননি। লা লিগার সমালোচনা ও অপমান করার আগে নিজেকে সঠিকভাবে জানাতে শিখুন। নিজেকে অন্যের সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার হতে দেবেন না এবং আপনি নিশ্চিত করুন আমরা একসাথে যে কাজটি করছি তা আপনি বুঝতে পেরেছেন।’
লা লিগা প্রধানের সেই বক্তব্যের পর ভিনিসিয়াস আরও চটে যান। আবারও ক্ষোভের কথা লেখেন। তেবাসকে একরকম ধুয়েই দিয়েছিলেন ব্রাজিলীয় তারকা।
‘আবারও! বর্ণবাদীদের সমালোচনা করার পরিবর্তে উল্টো লা লিগার সভাপতি আমাকে পাল্টা আক্রমণ করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থিত হয়েছেন। আপনি যত কথাই বলুন এবং কিছুই না পড়ার ভান করুন না কেনো, লা লিগার ভাবমূর্তিতে আঘাত লাগবেই। আপনি আপনার পোস্টের কমেন্ট পড়ুন, অবাক হবেন।’
‘এমন কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে দূরে রাখা মানে আপনি নিজেও বর্ণবাদীদের সমান। আমি আপনার বন্ধু নই যে, বর্ণবাদের বিষয় নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করব। আমি চাই এর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিন এবং আমি এর শাস্তি চাই।’
বিজ্ঞাপন