অবশেষে শিরোপা, চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া

টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ-২০২১

২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে খেলা বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। সেবছর একটি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ হওয়ার কথা থাকলেও মাঠে গড়ায়নি। একবছর পর আরব আমিরাতে আয়োজিত হয় সেই বিশ্বআসরটি। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে গিয়ে আশা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। সুপার টেনের চারটি ম্যাচেই বাজেভাবে হেরে যায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। কোয়ালিফায়ার রাউন্ডেও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা করেছিল টাইগাররা। অন্যদিকে পাঁচটি ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়ার হাতে ধরা দেয় টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ট্রফি।

আসরে শুধু বাংলাদেশই নয়, প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেনি এশিয়ান জায়ান্ট ভারতও। প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই ছিটকে যায় টুর্নামেন্টের হট-ফেভারিটরা। আশা জাগিয়েছিল পাকিস্তান। গ্রুপপর্বের সবগুলো ম্যাচ দাপটের সাথে জিতে শেষপর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে হোঁচট খায় বাবর আজমের দল।

গ্রুপপর্বের সবগুলো ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের টিকিট কেটেছিল ইংল্যান্ড। সেমিতে কিউই বাধা টপকাতে ব্যর্থ হয় ইয়ন মরগানের দল।

বড় মঞ্চের দল হিসেবে টুর্নামেন্টে নিজেদের আবারও প্রমাণ করে অস্ট্রেলিয়া। শুরুর দিকে কিছুটা দুর্বল মনে হলেও ধীরে ধীরে খোলস পাল্টাতে থাকে অ্যারন ফিঞ্চের দল। বছরজুড়ে অফফর্মে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার হঠাৎ ব্যাট হাতে ফর্ম খুঁজে পান। ম্যাথু ওয়েড, মার্কাস স্টয়নিসের দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ের সাথে যোগ হয় অ্যাডাম জাম্পার ঘূর্ণি। সবাইকে চমকে দিয়ে সপ্তম আসরে এসে প্রথমবারের মতো টি-টুয়েন্টির শিরোপা জিতে ফেরে অজিরা।

ফাইনালে অজিদের প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। দলীয় পরফরম্যান্সে উপর ভিত্তি করে পুরো টুর্নামেন্টে দাপুটে ক্রিকেটই খেলেছিল কিউইরা।

২০২১ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন বাবর আজম। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে টুর্নামেন্টে ক্রিকেটপ্রেমীদের মন মাতিয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ৬ ম্যাচে ৬০ গড়ে ৩০৩ রান করেছিলেন।

সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় বাবরের পরেই ওয়ার্নার। টুর্নামেন্টের শেষদিকে ফর্ম খুঁজে পাওয়া ব্যাটার অজিদের বিশ্বকাপ জেতাতে রেখেছেন বিরাট ভূমিকা। তালিকার তিনে ছিলেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান।

আসরের শীর্ষ ১০ রান সংগ্রাহক: বাবর আজম (৬ ম্যাচে ৩০৩), ডেভিড ওয়ার্নার (৭ ম্যাচে ২৮৯), মোহাম্মদ রিজওয়ান (৬ ম্যাচে ২৮১), জস বাটলার (৬ ম্যাচে ২৬৯), চারিথ আশালাঙ্কা (৬ ম্যাচে ২৩১), ডেভিড ভিসে (৮ ম্যাচে ২২৭), পাথুম নিশাঙ্কা (৮ ম্যাচে ২২১), কেন উইলিয়ামসন (৭ ম্যাচে ২১৬), ড্যারিল মিচেল (৭ ম্যাচে ২০৮), মার্টিন গাপটিল (৭ ম্যাচে ২০৮)।

২০২১ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক ভানিডু হাসারাঙ্গা। লঙ্কান স্পিনারের ঝুলিতে যায় ১৬ উইকেট। ১৩ উইকেট নিয়ে অজি স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। ট্রেন্ট বোল্টও নিয়েছিলেন সমান উইকেট।

তালিকার চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার।

শীর্ষ ১০ উইকেট শিকারি: ভানিডু হাসারাঙ্গা (৮ ম্যাচে ১৬টি), অ্যাডাম জাম্পা (৭ ম্যাচে ১৩টি), ট্রেন্ট বোল্ট (৭ ম্যাচে ১৩টি), সাকিব আল হাসান (৬ ম্যাচে ১১টি), জশ হ্যাজেলউড (৭ ম্যাচে ১১টি), এনরিখ নর্টজে (৫ ম্যাচে ৯টি), শাদাব খান (৬ ম্যাচে ৯টি), আদিল রশিদ (৬ ম্যাচে ৯টি), ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস (৫ ম্যাচে ৯টি), জশ ডেভি (৫ ম্যাচে ৯টি)।

এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের হিসেবে সবার উপরে ছিলেন জস বাটলার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচে ৬৭ বলে ১০১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিলেন ডানহাতি ইংলিশ ব্যাটার। শুধু সর্বোচ্চ রানই নয়, সবশেষ অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপটিতে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানও তিনিই।

২০২১ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ছিল ২১০ রান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচে বিশাল সংগ্রহটি ছিল ভরতের। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯০ রান করে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল আফগানিস্তান।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৪৪ রানে অলআউট হয়ে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড গড়েছিল নেদারল্যান্ডস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৫ রানে অলআউট হয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

আসরে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জেতার রেকর্ডটা আফগানিস্তানের। রশিদ খানদের ১৯০ রানের জবাবে ৬০ রানে অলআউট হয়েছিল স্কটল্যান্ড। পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে বাংলাদেশের ৮৪ রানের জয় দ্বিতীয় স্থানে।

এক ম্যাচে ৫ উইকেটের রেকর্ড দুই বোলারের, অ্যাডাম জাম্প ও মুজিব উর রহমানের। গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন জাম্পা, মুজিবের ৫ উইকেট এসেছিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান।

অনন্য এক রেকর্ড গড়েছিলেন আইরিশ পেসার কার্টিস ক্যাম্ফের। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ালিফায়ারের ম্যাচে ৪ বলে ৪ উইকেট নিয়ে টি-টুয়েন্টির ইতিহাসের প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিক গড়েছিলেন ডানহতি পেসার।

এক ম্যাচে সর্বাধিক রান দেয়ার লজ্জার রেকর্ড গড়েছিলেন মিচেল স্টার্ক। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে রেকর্ডটি গড়েছিলেন অজি পেসার।

ছোট সংস্করণের বিশ্বকাপ মানেই চার-ছক্কার খেলা। সবচেয়ে বেশি ছয় মেরে দর্শকদের বিনোদিত করেছিলেন জস বাটলার। ৬ ম্যাচে তার ছয় ছিল ১৩টি। ১২টি ছক্কা হাঁকিয়ে পরেই মোহাম্মদ রিজওয়ান।

সবচেয়ে বেশি ক্যাচ লুফে নিয়েছিলেন ম্যাকলয়েড। ৭ ম্যাচে ৮টি ক্যাচ নিয়েছিলেন স্কটিশ ওপেনার। উইকেটরক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন ম্যাথু ওয়েড। ৭ ম্যাচে ৯টি ডিসমিসাল নামের পাশে নিয়েছিলেন অজি উইকেটরক্ষক।

বিজ্ঞাপন

টি-টুয়েন্টি অস্ট্রেলিয়াটি-টুয়েন্টি নিউজিল্যান্ডটি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ-২০১০ফিরে দেখাবোল্টরিজওয়ান