জিতলেই সেমিফাইনালে চলে যাবে- এমন সম্ভাবনাকে সামনে রেখে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। শেষ চারে পৌঁছানোর সুযোগটা ব্যাটিংয়ের পর ফিল্ডিংয়েও কাজে লাগাতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। ৫ উইকেটের জয়ে গ্রুপ-২ থেকে ভারতের পর সেমিতে খেলা নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান।
রোববার অ্যাডিলেড ওভালে টসে জেতা বাংলাদেশ ভালো শুরু করলেও পরে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ৮ উইকেটে ১২৭ রানের বেশি জমাতে পারেনি। জবাবে পাকিস্তান ১১ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছায়।
৫ ম্যাচে পাকিস্তানের পয়েন্ট ৬, রানরেট +১.০২৮। এক ম্যাচ কম খেলে ৬ পয়েন্টে থাকা ভারতের রানরেট +০.৭৩০। শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারাতে পারলে ৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে টিম ইন্ডিয়া। বৃষ্টিতে ম্যাচ পণ্ড হলেও তারা ৭ পয়েন্ট পেয়ে গ্রুপ সেরাই হবে। বড় ব্যবধানে হেরে বসলে রানরেটে এগিয়ে থাকায় পাকিস্তান হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন।
১২৮ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে পাকিস্তান শূন্য রানেই উইকেট হারাতে পারত। তাসকিনের বলে রিজওয়ানের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন সোহান। তাতে ওপেনিং জুটিতে পাকিস্তান ৫৭ রান তুলে ফেলার সুযোগ পায়।
নাসুম আহমেদের বলে সুইপ করতে গিয়ে মোস্তাফিজের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন বাবর আজম। ৩৩ বলে ২ চারে অধিনায়ক করেন ২৫ রান। ইবাদত হোসেনের দ্বাদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে পয়েন্টে শান্তর তালুবন্দি হন ৩২ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ৩২ রান করা রিজওয়ান।
একই ওভারে ঘটে নাটকীয় কাণ্ড। নেওয়াজের প্যাডে বল লাগলে লেগ বিফোরের জোরাল আবেদন ওঠে। নেওয়াজ দৌড়ে রান নিতে গিয়ে উইকেটের মাঝে চলে আসেন। শর্ট থার্ডম্যানে থাকা শান্ত সরাসরি উইকেটে বল লাগাতে পারলেই হতো রানআউট। সেটি না হয়ে ওভার থ্রোতে বল সীমানার বাইরে যায়। অতিরিক্ত ৪ রান পায় পাকিস্তান।
সাকিবের করা ১৫তম ওভারে লিটনের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন ৪ রান করা নেওয়াজ। ১৬তম ওভারে এসে তাসকিন বিলিয়ে দেন ১৬ রান। এতে জয়ের জন্য পাকিস্তানের সামনে সমীকরণ দাঁড়ায় ২৪ বলে ১৮ রান।
পরের ওভারে সাকিব বল হাতে নিয়ে ১১ রান ব্যয় করেন। পঞ্চম বলে তুলে নেন ১৮ বলে এক চার ও ২ ছক্কায় ৩১ রান করা মোহাম্মাদ হারিসের উইকেট।
পাকিস্তানের যখন দরকার ১৮ বলে ৭ রান, বল হাতে নেন মোস্তাফিজ। ৫ রান খরচায় নেন ইফতিখারের উইকেট। ইবাদত হোসেনের বলে শান মাসুদ দৌড়ে ২ রান নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১১ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি সেমির টিকিত কাটে পাকিস্তান।
একটি করে উইকেট নেন নাসুম, সাকিব, মোস্তাফিজ ও ইবাদত।
দিনের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী সাউথ আফ্রিকাকে ১৩ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালের সমীকরণ নাটকীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। ডাচদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু প্রোটিয়াদের হারে শেষ চারে যাওয়ার সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল টাইগাররা।
বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে ভালোই শুরু করে। ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচে লিটন খেলেছিলেন ২৭ বলে ৬০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু করেছিলেন। শাহিন আফ্রিদির বলে পুল শটে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে মারা ছক্কা ইঙ্গিত দিচ্ছিল। পরে শর্ট ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মাসুদের হাতে ধরা পড়ে লিটনের ইনিংস ৮ বলে ১০ রানেই শেষ হয়।
শাদাবের করা একাদশ ওভারে রিভার্স সুইপ খেলে পয়েন্টে মাসুদের হাতে ধরা পড়েন সৌম্য সরকার। ১৭ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ২০ রান করা সৌম্য মাঠ ছাড়লে আসেন সাকিব। পরের বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে বল তার বুটে লাগে। এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল আগে ব্যাটে হালকা ছুঁয়েছিল। বিস্ময়করভাবে তৃতীয় আম্পায়ারও সাকিবের আউটের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন। যা ঘিরে উঠেছে বিতর্ক।
আউটের পর সাকিবের যেন কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। ডাগ আউটে থাকা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের হতভম্ব চেহারাও টিভি পর্দায় ধরা পড়ে। সাকিব এসে দুই ফিল্ড আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। গ্যালারিতে দর্শকরা বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সাকিব বেরিয়ে যেতে যেতে ফিরে এসে আবারও কথা বলেন আম্পায়ারদের সাথে। শেষ পর্যন্ত রানের খাতা না খোলা সাকিবকে আফসোস নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়।
সাকিবের বিতর্ক ওঠা আউটের পর ফিফটি তুলে নেন শান্ত। ৪৮ বলে ৭ চারে ৫৪ রান করে তিনি ইফতিখারের বলে বোল্ড হন। রানের খাতা খোলার আগে শান্ত জীবন পেয়েছিলেন। তার ক্যাচ নিতে পারেননি শাদাব। ব্যক্তিগত ২০ রানে থাকা শান্তর ক্যাচ মিস করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।
ছয়ে ব্যাট করতে নামা মোসাদ্দেক হোসেন ১১ বল খেলে করে যান মাত্র ৫ রান। ১৭তম ওভারে শাহিন আফ্রিদির ইয়র্কার বলে হন বোল্ড। একই ওভারে শূন্য রানে নুরুল হাসান সোহান ডিপ পয়েন্টে মোহাম্মাদ হারিসের ক্যাচ হন।
শাহিন আফ্রিদি পরের ওভারে তুলেন এক রান করা তাসকিন আহমেদের উইকেট। মিড অফে ক্যাচ ধরেন বাবর আজম। হারিসের করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে চার মেরে আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে এক হাজার রান পূরণ করেন আফিফ। পঞ্চম বলে ওয়াসিমের হাতে ধরা পড়েন ৬ বলে এক চারে ৭ রান করা নাসুম। আফিফ ২০ বলে ৩ চারে ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
পাকিস্তানের পক্ষে ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন শাহিন আফ্রিদি। শাদাব খান দুটি ও একটি করে উইকেট পান হারিস রউফ ও ইফতিখার আহমেদ।