জলবায়ু পরিবর্তন: সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করল সুইস নারীরা

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সরকারি নীতি তাদের জীবন ও স্বাস্থ্যের অধিকার লঙ্ঘন করছে দাবি করে সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ২ হাজারেরও বেশি সুইস নারী।

বিবিসি জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত (ইসিএইচআর) মানবাধিকারের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে  মামলার শুনানি করতে যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের তাপমাত্রা বৈশ্বিক তাপমাত্রার গড় থেকে দ্রুত বেড়ে চলেছে এবং সেখানে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ অনুভূত হচ্ছে।

সুইস নারী যারা ক্লাব অফ ক্লাইমেট সিনিয়রস হিসেবে পরিচিত এবং যাদের গড় বয়স ৭৩, তারা জানাচ্ছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন তাদের মানবাধিকার, স্বাস্থ্য এমনকি তাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। প্রমাণ হিসেবে তারা তাদের মেডিকেল রেকর্ড আদালতে দেখাতে যাচ্ছে। তারা সুইজারল্যান্ডকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হতে বলছে।

এলিজাবেথ স্টার্ন নামের একজন সুইস নারী জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই আমাদের বেশির ভাগ তাপপ্রবাহ হয় এতে বয়স্ক মহিলারা বেশি ভোগেন। এই তাপপ্রবাহের কারণে তারা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আগেই মারা যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “কেউ কেউ বলছেন, আপনি কেন অভিযোগ করছেন, যেভাবেই হোক আপনি মারা যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা মরতে চাই না। সুইস সরকার আমাদের জন্য একটি শালীন জলবায়ু নীতি নিয়ে আসতে পারেনি।”

ইউরোপিয়ান ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অবজারভেটরি জানিয়েছে, গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ইউরোপ জুড়ে জনস্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে। গত ২০ বছরে ইউরোপে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে তাপজনিত মৃত্যুর হার ৩০% এরও বেশি বেড়েছে। সুইস সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাবের বিষয়টি অস্বীকার করে নি। তবে তারা জানিয়েছে, বিষয়টি শুধুমাত্র বয়স্ক মহিলাদের স্বাস্থ্যের সাথেই বিশেষভাবে যুক্ত হতে পারে না।

সুইস নারীরা মামলায় সফল হলে এটি ইউরোপীয় আদালতের ৪৬ সদস্য রাষ্ট্রের প্রত্যেকটির জন্য একটি নজির স্থাপন করবে। জলবায়ু বিজ্ঞানীদের মতে, আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ পরিণতি এড়াতে চাই তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির গতি কমিয়ে আনতে হবে। তারা বলছেন, ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে।

যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা না যায়, তবে ইউরোপ চরম বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়াও গ্রীষ্মে দাবানলের ঝুঁকি বাড়াতে পারে যেমনটি গত গ্রীষ্মে ইউরোপে দেখা গেছে। ফ্রান্স এবং জার্মানিতে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় সাতগুণ বেশি জমি পুড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনসুইজারল্যান্ড