রিকশা চালক থেকে ইত্যাদির মঞ্চে গানের সুযোগ পেয়ে ভাগ্য খুলে যায় আকবরের। ২০০৩ সাল থেকে তিনি গান করে পরিচিতি অর্জন করেন।
সেই সুবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে গান করেছেন আকবর। তবে জীবনের শেষ সাত বছর নানা রকম অসুস্থতায় ভোগেন এই শিল্পী।
বছর খানেক আগে আকবর যখন রাজধানীর পিজি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তখন চ্যানেল আই অনলাইনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘ফেসবুকে অনেকেই শিল্পীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে। এটা দেখে আমি ভীষণ কষ্ট পাই।’
দর্শক শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে অনুরোধ করে আকবর বলেছিলেন, প্লিজ আপনারা শিল্পীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করবেন না।
আকবর আরও বলেছিলেন, কাউকে নিয়ে বাজে কথা বলার আগে ভেবে চিন্তে বলা উচিত। দেশের বড় বড় শিল্পীরা সবাই চলে যাচ্ছে। আপনারা অবহেলা কইরেন না। আপনাদের দোয়া পেলে আমাদের ভালো লাগে।
সেই সাক্ষাৎকারে আকবর এও বলেছিলেন, সব শিল্পীরা খারাপ না। সবাই খারাপ হলে এই পৃথিবী থাকতো না। আমি আকবর মানুষটা খারাপ না। আমি খুনি না, কোনো দোষ করিনি। রাস্তায় চলেছি, গান করেছি কিন্তু কখনো কারও ক্ষতি করিনি। দয়া করে আমাকে কেউ খারাপ কথা বলবেন না। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে অনেকদিন গান করি। আবার মানুষের মধ্যে গিয়ে গান করি।
সেদিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাঁদছিলেন আর কথা বলছিলেন আকবর। তার শরীরজুড়ে ছিল ঘা। তিনি বলছিলেন, অসহ্য যন্ত্রণা সইছেন।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আকবর সুস্থ হয়ে আবার গানে ফিরতে চাইছিলেন আকবর। কথায় কথায় মৃত্য ভয় পাচ্ছিলেন। আর বলছিলেন, আমার যদি কিছু হয় তবে একমাত্র মেয়ে অথৈ-এর কী হবে!
কান্নায় ভেঙে পড়ে আকবর তখন বলেন, এই মেয়েটা ছাড়া আমার রক্তের আর কেউ। আমি চলে গেলে আমার মাকে কে দেখবে! আমার মা লেখাপড়ায় ভালো। নিজ যোগ্যতায় আমার মা ভালো স্কুলে পড়তে পারবে। আমার মা একেবারে অবুঝ শিশুর মতো। এই মায়ের জন্য হলেও আমি বাঁচতে চাই। দেশের মানুষদেরও বলছি, আমি যদি না থাকি আমার এই মাকে আপনারা দেখবেন।
৫৩ বছর বয়সে রবিবার ৩টার দিকে দুপুরে রাজধানীর পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আকবর। সোমবার (১৪ নভেম্বর) জন্ম শহর যশোরে মায়ের কবরের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত হবেন ‘হাত পাখার বাতাস’ খ্যাত শিল্পী।
বিজ্ঞাপন