নরসিংদীর শিবপুরে নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার ৩ মাস পর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খান (৭০) মারা গেছেন।
বুধবার (৩১ মে) বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
হারুনুর রশিদ খানের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তার ভাতিজা ফজলে রাব্বি খান।
হারুনুর রশিদ খানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঁইয়া রাখিলের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শিবপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজ গেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তোলে স্লোগান দেন। সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কামারটেক, চৈতন্যা ও সৃষ্টিগড় এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
হারুনুর রশিদ খানের ভাতিজা ফজলে রাব্বি খান বলেন, ‘ঘটনার দিন হারুনুর রশিদ খানের পিঠে বিদ্ধ হওয়া দুটি গুলি বের করে আনা হলেও তার শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। এর প্রভাবে তার প্রস্রাবে সংক্রমণসহ হৃৎপিণ্ড ও কিডনিতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসার জন্য ৭ মে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯ মে শুক্রবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর পর থেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টেই ছিলেন তিনি। আজ বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমার বাবা শিবপুরের সাবেক সংসদ সদস্য রবিউল আউয়াল খানকেও দুর্বৃত্তরা ১৯৮৬ সালের ২৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগের দলীয় সমাবেশ করে ফেরার পথে গুলি করে হত্যা করে।’
ফজলে রাব্বি খান আরও বলেন, হারুনুর রশিদ খানকে হত্যার উদ্দেশ্যে যারা গুলি করেছেন, তাদের গ্রেপ্তারে কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি যারা মদদ দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তারাও প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের সঙ্গে মিটিংসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে বেড়াচ্ছেন। এগুলো দেখে ও শুনে তার চাচা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। আর সেই কষ্ট নিয়েই আজকে তিনি মারা গেলেন।
চেয়ারম্যানের পরিবার ও পুলিশ জানায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ছয়টার দিকে শিবপুরে নিজ বাড়িতে হারুনুর রশিদকে গুলি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার পিঠ থেকে দুটি গুলি বের করা হয়। এর পর থেকেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মে মাসজুড়েই তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন।
ঘটনার দিন রাতেই নরসিংদী জেলা পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ৪ জনকে আটক করে।
ঘটনার দু’দিন পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান তাপস বাদি হয়ে পুটিয়া এলাকার আরিফ সরকারকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ও অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলার আসামীরা হলেন- পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার (৪০), পূর্ব সৈয়দনগর এলাকার মো. মহসীন মিয়া (৪২), কামারগাও এলাকার ইরান মোল্লা (৩০), মুনসেফেরচর এলাকার শাকিল (৩৫), কামারগার এলাকার হুমায়ুন (৩২) ও নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার গাড়ি চালক নূর মোহাম্মদ (৪৮)।
এজাহারনামীয় আসামীরা স্থানীয় সাংসদ জহিরুল হক ভূঞা মোহন ও তার ছোট ভাই জেলা যুবলীগের সহসভাপতি জোনায়েদুল হক ভূঞা জুনুর ঘনিষ্ঠ। এর পর পুলিশ এজারহারনামীয় ২ জনসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় গত ৭ মার্চ মো. ফরহাদ হোসেন ওরফে মোফাজ্জল হোসেন সরকার (৩৪) ও আরিফুল ইসলাম আরিফকে (২৮) মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মতিঝিল জোনের বিশেষ টিম। এসময় তাদের কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি রিভলবার ও ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশের কাছে তাদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে। পাশাপাশি তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান আসাদের সম্পৃক্ততার তথ্য দেন।
শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে এজাহারনামীয় দু’জন। এজাহারনামীয়দের মধ্যে নূর মোহাম্মদ নামের একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আরেক এজাহারভুক্ত আসামী শাকিল কারাগারে রয়েছে। আর এজাহারনামীয় প্রধান আসামীসহ ৪ জন দুবাইয়ে অবস্থান করছে। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এই মামলাটি হত্যা মামলায় পরিণত হবে।
বিজ্ঞাপন