ক্রাচে ভর দিয়ে নিজের ছবি দেখতে এলেন সাদেক

বুধবার দুপুর। পৌনে ২টা। বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সের লবি। টিকেট কাউন্টারের সামনে পায়চারি করতে দেখা গেল অন্তত জনা ত্রিশেক মানুষকে। তাদের হাতে সিনেপ্লেক্সের ভেতরে প্রবেশের টিকেট! তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, এরআগে কখনই তারা সিনেপ্লেক্সে গিয়ে ছবি দেখেননি। একসঙ্গে তারা এসেছেন আদিম ছবিটি দেখতে।

এরমধ্যে একজনকে দেখা গেল ক্রাচে ভর দিয়ে এদিক সেদিক পায়চারি করতে। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবীতে প্রবেশদ্বারের দিকে এগিয়ে আসতেই কথা হয় তার সাথে। জানালেন, তার নাম সাদেক। থাকেন টঙ্গী রেলস্টেশন সংলগ্ন ব্যাংক মাঠ বস্তিতে। মূলত যুবরাজ শামীমের ‘আদিম’ ছবিটি দেখতেই এদিন টঙ্গী থেকে বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে এসেছেন। এই ছবিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

সাদেক জানান, তিনি একা নন, আদিম দেখতে এদিন টঙ্গী ব্যাংক মাঠ বস্তির অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন আসেন। যাদের বেশীর ভাগই কোনো না কোনো ভাবে ‘আদিম’ ছবিটির সাথে জড়িত। কেউ অভিনয় করেছেন, কেউ বা আদিম নির্মাণের সময় নানা ফরমায়েশ করেছেন। এসময় ব্যাংক মাঠ বস্তি থেকে আসা বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তারা প্রত্যেকেই চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন, সিনেপ্লেক্স কিংবা এরকম কোনো আধুনিক প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে তারা কখনও ছবি দেখেননি।

পরিচালক যুবরাজ শামীম এসময় জানান, ব্যাংক মাঠ বস্তির মানুষগুলোর কাছে আমি বরাবরই ঋণী। তারা আমাকে সহযোগিতা না করলে আদিম নির্মাণ হয়তো আরও কঠিন হতো। সিনেমা হলে মুক্তির অন্যতম একটা উদ্দেশ্য হলো, সেই মানুষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বড় পর্দায় সিনেমাটি দেখা। সেজন্য বুধবার সবাইকে টঙ্গী থেকে নিয়ে এসেছি আদিম দেখাতে। ছবিটি দেখতে আসা নিয়ে ব্যাংক মাঠ বস্তির মানুষগুলোর মধ্যে যে উচ্ছ্বাস দেখেছি, মনে হয়েছে আদিম নিয়ে আমার আর পাওয়ার কিছু নেই।

কলাকুশলীদের নিয়ে এদিন স্টার সিনেপ্লেক্সে দুপুর ২টা ২০ মিনিটের শো দেখেন নির্মাতা। শো’তে ছিলেন সাধারণ দর্শকও। সিনেমা শেষে কলাকুশলীদের পেয়ে সাধারণ দর্শক মাতেন সেলফিতে। ছবির প্রধান তিন কুশলী বাদশা, সোহাগী ও দুলালকে ছাড়াও সাদেকের অভিনয়ের প্রশংসা করেন অনেকে। দর্শকসারিতে থাকা গুণী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক হায়দার রিজভীও চলচ্চিত্রটির প্রশংসা করেন।

আদিমের নির্মাতা ছাড়াও তিনি ছবির কলাকুশলীদের অভিনন্দন জানান। শুনেন সিনেমাটির নির্মাণ সময়ের অভিজ্ঞতার গল্পও।

২৬ মে মুক্তির দিনেই দর্শকের সাথে বসে আদিম দেখেছেন বাদশা, সোহাগী ও দুলাল। কিন্তু বুধবার প্রথমবার নিজেকে বড়পর্দায় আবিস্কার করলেন সাদেক। শো শেষে আপ্লুত সাদেক বললেন, ‘অন্যরকম অনুভূতি হলো। জীবনে কখনও কল্পনা করিনি, আমার অভিনীত ছবি হলে এসে দেখবো। যুবরাজ ভাইকে ধন্যবাদ।’

কথায় কথায় সাদেক জানান, আমি এখন ল্যাংড়া মানুষ। আগে আমার পা ঠিকই ছিলো। ট্রাকের ড্রাইভার ছিলাম। একটা দুর্ঘটনায় পা কেটে ফেলতে হয়। এরপর থেকে ভিক্ষা ই আমার পেশা। এরকম একটা মানুষকে যুবরাজ ভাই অভিনয় করালেন। বিভিন্ন দেশে শুনেছি ছবিটি দেখে মানুষ প্রশংসাও করেছে। এটা কতোজনের ভাগ্যে জুটে!

বিদায় নেয়ার আগে সাদেক বলে গেলেন, কখনও যদি সুযোগ হয়, কেউ যদি তাকে অভিনয়ে নিতে চান, তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন ভালো কাজ করার।

নির্মাতা জানান, বৃহস্পতিবার (১ জুন) শেষবারের মতো রাজধানীতে দেখা যাবে আদিম। এই পুরো সপ্তাহ ছবিটি চলেছে বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্স ও যমুনা ব্লকবাস্টারে। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহেও ‘আদিম’ চলবে নারায়ণগঞ্জ সিনেস্কোপে।

অভিনয়কালালিড বিনোদনল্যাংড়াসাদেকসিনেমাসোহাগী