জুলাই মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৭৩ জন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছে ১ হাজার ২৫৬ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৯৪ জন, শিশু ৭৬ জন। গত মাসে ৫১১টি সড়ক দুর্ঘটনায় এসব ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এই তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৮৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৮৩ জন, যা মোট নিহতের ৩১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৪৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৮ জন, অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এই সময়ে ১৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, ২৩ জন আহত এবং ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছে। একই সাথে ১০টি ছাগলের মৃত্যু হয়েছে।
দুর্ঘটনায় যানবাহন ভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনায় যানবাহন ভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৮৩ জন যা দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বাস যাত্রী ৪৯ জন যা ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি আরোহী ৩৬ জন যা ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, জীপ আরোহী ২৩ জন যা ৪ শতাংশ, থ্রি-হুইলার যাত্রী যেমন ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, ম্যাক্সি-লেগুনায় ১০৩ জন যা ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী যেমন নসিমন, ভটভটি, টমটম, মাহিন্দ্র, লাটাহাম্বায় ২২ জন যা ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান আরোহী ১১ জন যা ১ দশমিক ৯১ শতাংশ নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২০৮টি (৪০ দশমিক ৭০ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৯৬টি (৩৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৬১টি (১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৪২টি (৮ দশমিক ২১ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি (০ দশমিক ৭৮ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাসমূহের ৯৮টি (১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১৭টি (৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৪৪টি (২৮ দশমিক ১৮ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেয়া, ৩৩টি (৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৯টি (৩ দশমিক ৭১ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, ড্রামট্রাক, ফায়ার ব্রিগেড গাড়ি, লং ভেহিক্যাল, রোলার মেশিন গাড়ি ২৭ দশমিক ১৭ শতাংশ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, পাজেরো, জীপ ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২২ দশমিক ২০ শতাংশ, থ্রি-হুইলার ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, লেগুনা, টেম্পু, ম্যাক্সি, মিশুক ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন নসিমন, ভটভটি, টমটম, মাহিন্দ্র, লাটাহাম্বা ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, বাইসাইকেল,প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ২ দশমিক ০২ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৮৮৭ টি। (বাস ১৭৪, ট্রাক ১৩৬, কাভার্ডভ্যান ৩১, পিকআপ ৩৮, ট্রাক্টর ১৪, ট্রলি ৯, লরি ৩, ড্রাম ট্রাক ৩, তেলবাহী ভাউচার ১, লং ভেহিক্যাল ১, রোলার মেশিন গাড়ি ১, ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ২, নির্মাণ সামগ্রীর ট্রাক ১, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ১, মাইক্রোবাস ১৯, প্রাইভেটকার ১৬, অ্যাম্বুলেন্স ২, জীপ ৩, পাজেরো ২, মোটরসাইকেল ১৯৭, থ্রি-হুইলার ১৬১ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-টেম্পু-ম্যাক্সি-মিশুক), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩৩ (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২১ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ১৮ টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, সকালে ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ, দুপুরে ২৬ দশমিক ০২ শতাংশ, বিকালে ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং রাতে ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগীয় পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগীয় পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা হয়েছে ৩৪ দশমিক ০৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ , রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১২ দশমিক ১৩ শতাংশ, প্রাণহানি ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৭৪টি দুর্ঘটনায় ১৭০ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২০টি দুর্ঘটনায় ৩১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলা’য় সবচেয়ে বেশি ৪২টি দুর্ঘটনায় ৪০ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর ও বান্দরবান জেলায়। এই ২টি জেলায় সামান্য মাত্রার ৫ টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ৩২টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত এবং ৩৭ জন আহত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন