‘কেঁদো না বাবা, আমি তোমার জন্য বিশ্বকাপ জিতব’

পেলের বয়স তখন মাত্র নয় বছর। ১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে হেরে ঘরের মাঠে শিরোপা হাতছাড়ার বেদনায় পুড়ে ছারখার হয় গোটা ব্রাজিল। সেই হৃদয়বিদারক হারে আশ্চর্য-স্তব্ধ হয়েছিল ব্রাজিল; যাকে মারাকানজো (মারাকানা বিপর্যয়) হিসেবে অভিহিত করা হয়।

২০১৪ সালে ফিফাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মারাকানা বিপর্যয় নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করেছিলেন পেলে। বাবাকে কাঁদতে দেখার সেই দৃশ্য তার ভেতর তৈরি করেছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

সেই পরাজয়ের কারণে প্রথম আমি আমার বাবাকে কাঁদতে দেখেছিলাম। আমার মনে আছে, তাকে বলেছিলাম: ‘কেঁদো না বাবা, আমি তোমার জন্য বিশ্বকাপ জিতব।’

ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি অবশ্য এটাও স্বীকার করেছিলেন যে বাবাকে আসলে তিনি সান্ত্বনা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টাই অল্প বয়সে করেছিলেন। কারণ বাবাকে কাঁদতে দেখার মুহূর্তে কী বলবেন বালক পেলে তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

ফুটবল ঈশ্বর অবশ্য নয় বছরের সেই বালকের মুখ থেকে বের হওয়া কথাটাকেই যেন নিয়তির লিখন বানিয়ে ছাড়লেন। আট বছর পর ১৯৫৮ ব্রাজিল বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ডাক পেলেন কালো মানিক খ্যাত ফুটবলার। অথচ তিনি নিজে ধারণাও করেননি এতো অল্প বয়সে বিশ্বকাপ খেলবেন। ৬ গোল করে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হবেন। একটি জাতিকে প্রথম শিরোপা জয়ের উদযাপনে হাসাবেন।

একটি তথ্যচিত্রে পেলে নিজেই বলেছিলেন সেই দিনটির কথা, যেদিন বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার খবর প্রথম শোনেন। তথ্যচিত্রের বরাত দিয়ে দ্য সান তাদের প্রকাশিত এক খবরে জানায়, সেদিন পেলের বাবা রেডিওতে দল ঘোষণার খবর শুনছিলেন। হঠাৎ তার কানে ছেলের নাম আসে। তিনি কিছুটা অবাক হন। কিছুক্ষণ বাদে প্রতিবেশীরা উল্লাস করতে করতে বাড়ি চলে আসেন। সবকিছু শুনে বাবার মতো পেলেও মনে করেন, হয়তো ভুল করে তার নামটি ঘোষিত হয়েছে! সন্ধ্যা হওয়ার আগেই অবশ্য পেলের ভুল ভেঙে যায়। তিনি নিশ্চিত হয়ে যান, বিশ্বকাপ তাকে ডাকছে।

পেলে তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, আমার পরিবারকে নিয়েই প্রথম চিন্তাটা হচ্ছিল এমন- তারা কি জানতো যে আমরা চ্যাম্পিয়ন? আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু টেলিফোন ছিল না। আমি বারবার বলতে থাকলাম, ‘আমাকে আমার বাবার সাথে বলতে হবে, আমাকে আমার বাবার সাথে বলতে হবে।’

দেশে ফিরে যাওয়ার পরে বাবার সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণ করে পেলে আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, ‘আমি আমার বাবাকে আবারও কাঁদতে দেখেছিলাম, তবে এবার আনন্দে।’

পেলেব্রাজিললিড স্পোর্টসসুইডেন বিশ্বকাপ-১৯৫৮