তর্কাতীতভাবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে পেলের নাম অনেকেই বলে থাকেন। একজন দুর্দান্ত প্লে মেকার হিসেবে ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। গোল করাতেও ছিলেন পারদর্শী, হয়ে গেছেন ফুটবলের মহারাজা।
ফিফার ‘সর্বকালের সেরা’, ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির ‘বিংশ শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ’ হয়েছিলেন পেলে। ফুটবলের মানদণ্ড হিসেবে অনেকেই তাকে বিবেচনা করে থাকেন।
বিশ্বকাপজয়ী সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হওয়া থেকে শুরু করে সেলেসাওদের হয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আন্তর্জাতিক গোল করাসহ বেশ কিছু দুর্দান্ত উচ্চতা অর্জন করেন পেলে। এই কিংবদন্তির একাধিক রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেননি। চলুন একনজরে দেখে নেয়া যাক, ফুটবল সম্রাটের সকল রেকর্ড।
# মাত্র ১৬ বছর নয় মাস বয়সে ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামেন। ব্রাজিল সেই খেলায় ২-১ গোলে জিতেছিল। অভিষেক ম্যাচেই ব্রাজিলের প্রথম গোলটি তিনিই করেছিলেন। সবচেয়ে কম বয়সে সেলেসাওদের জার্সিতে গোল করার সেই রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেননি।
# ১৯৫৮ বিশ্বকাপে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে তার বিশ্বকাপ অভিষেক হয়। ড্রিবলিং আর গতি দেখিয়ে ঠিকই কোচের মন জয় করেন।
# নক আউট পর্বের খেলায় ওয়েলসের বিপক্ষে পেলের করা ম্যাচের একমাত্র গোলেই সেমিফাইনালে পৌঁছায় ব্রাজিল। এটাই ছিল তার প্রথম বিশ্বকাপ গোল। ১৯ জুন হওয়া সেই ম্যাচে পেলের গোলটি এখনো বিশেষ এক কারণে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৭ বছর ২৩৯ দিন বয়সে তিনি গোলটি করেছিলেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোল করার এই রেকর্ড ৬৪ বছর ধরে আজও অক্ষত রয়েছে।
# ১৯৫৮ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে শক্তিশালী ফ্রান্সকে পায় সেলেসাওরা। এদিন যেন গোটা বিশ্ববাসীকেই অবাক করে দেন পেলে। তার হ্যাটট্রিকে ফ্রান্সকে ৫-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ব্রাজিল। সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। বালকবীর পেলে ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন। ওই আসরে করেন মোট ৬ গোল।
# পেলে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে সর্বাধিক তিনবার (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০) বিশ্বকাপ জয় করেছেন।
# ফিফার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, পেলে ১,৩৬৩টি ম্যাচ খেলে ১,২৮১টি গোল করেছেন, কিন্তু এর ভেতর কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক ম্যাচ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সান্তোস এবং নিউইয়র্ক কসমসের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ ছিল। এদিকে, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বলছে, পেলে ১,৩৬৩ ম্যাচে ১,২৮৯টি গোল করেছেন।
# দ্য রেক স্পোর্ট সকার স্ট্যাটিস্টিকস ফাউন্ডেশন (আরএসএসএসএফ) জানিয়েছে, শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের উপর ভিত্তি করে ৮৩১ ম্যাচে পেলের অফিসিয়াল গোলের সংখ্যা ৭৬৭। তবে অনানুষ্ঠানিক ম্যাচগুলো হিসাবে আনলে ১,৩৭৫ ম্যাচে তার মোট গোল ১,২৮৪টি।
# স্বদেশি ক্লাব সান্তোসের হয়ে ৬৫৯টি অফিসিয়াল ম্যাচে ৬৪৩ গোল করেছিলেন।
# জাতীয় দলের হয়ে ৯২ ম্যাচে সর্বাধিক ৭৭ গোল তার। ৬০ বছর ধরে তিনি এককভাবে ব্রাজিলের সর্বাধিক গোলদাতা ছিলেন। চলতি বছর কাতার বিশ্বকাপে তার রেকর্ড স্পর্শ করেছেন নেইমার। বিশ্বকাপে পেলের তার গোল রয়েছে এক ডজন।
# ১৯৭১ সালে সাও পাওলোতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি জাতীয় দলের হয়ে শেষ গোলটি করেছিলেন। ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়।
# ১৯৭৭ সালে অবসর নেয়ার পরও সাবেক এই দুটবলার সারাবিশ্বে এখনও সবচেয়ে পরিচিত ও সম্মানিত ব্যক্তিদের একজন।
# পেলে তার পুরো ফুটবল ক্যারিয়ারে তার হাতে মাত্র একবারই অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরেছিলেন। ক্লাব ও দেশের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করার জন্য তাকে যখনই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সেটা তিনি সবসময় প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু এই ঘটনার ব্যতিক্রম হয় পেলের ৫০ বছর বয়সে। সেটা ছিল ১৯৯০ সালের, জাতীয় ফুটবল থেকে তার অবসর নেয়ার ১৯ বছর পরে! সেবার ব্রাজিলের সাথে বাকি বিশ্বের একটি প্রীতি ম্যাচ হয়েছিল মিলানে। তাতে অংশ নিয়েছিলেন পেলে। তার ৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই ম্যাচের আয়োজন করা হয়। প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিট তিনি মাঠে ছিলেন।