খুলে গেল স্বপ্নের দুয়ার

পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

অবশেষে অপেক্ষার অবসান হলো। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে খুলে গেল স্বপ্নের দুয়ার। বাংলাদেশের সামর্থ্য, সক্ষমতা আর সাহসের প্রতীক; দেশের অহংকার, বিশ্বের বিস্ময় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার সকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন তিনি।

এসময় পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট ও ১০০ টাকার স্মারক মুদ্রা উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি পদ্মা সেতুর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। দেশবাসীকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে শত প্রতিকূলতার মধ্যে দেশবাসী শক্তি-সাহস যোগাতে সাহায্য করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পদ্মা সেতুর বিশাল কর্মযজ্ঞের শুরু ষড়যন্ত্র শুরু হয়, মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়। সে যন্ত্রণা সংশ্লিষ্টরা সবাই অমানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বহুমুখী পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলেই নিজেদের অর্থে সেতু নির্মাণের জেদ চাপে। জনগণই আমার সাহসের ঠিকানা পদ্মা সেতু নির্মাণে শক্তি দেবার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে স্যালুট।পদ্মা সেতু শুধু একটু সেতু নয়, পুরো জাতিকে অপমানের প্রতিশোধ।

বাংলাদেশের মানুষ আজ গর্বিত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমিও আজ আনন্দিত, উদ্বেলিত। এ সেতু শুধু সেতু নয়, এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের সক্ষমতা ও মর্যাদার প্রতীক।

‘বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রেখে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের সহায়তায় তৈরি করেছি। বাংলাদেশের জনগনই হচ্ছে আমার সাহসের ঠিকানা।’

মাওয়া পয়েন্ট থেকে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও দ্বিতীয় ম্যুরালের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন তিনি। দুপুর ১২টায় মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে জনসভায় যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এর আগে তিনি হেলিকপ্টারযোগে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মাওয়া পয়েন্টে কর্মসূচিতে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে ৫টায় হেলিকপ্টারে জাজিরা পয়েন্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজে ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর অংশ দৃশ্যমান হয়। পরে একের পর এক ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১টি স্প্যান। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে বহুমুখী ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ কাঠামো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করেন। তিনি পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেন। জাপান সরকার দুটি নদীর ওপর সেতু নির্মাণে সম্মত হয়। যেহেতু পদ্মা নদী একটি শক্তিশালী নদী যার প্রবল স্রোত, জাপান পদ্মা নদী জরিপ শুরু করে এবং তারা তার অনুরোধে রূপসা নদীতে নির্মাণ কাজ শুরু করে। জাপান ২০০১ সালে পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষা প্রতিবেদন বাংলাদেশের কাছে জমা দেয়। জাপানি জরিপে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টকে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। জরিপের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেতু প্রকল্পে শুরুতে রেলের সুবিধা ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রেলওয়ের সুবিধা রেখে সেতুর চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করা হয়।

পদ্মা সেতুপদ্মা সেতু উদ্বোধনপদ্মা সেতুর উদ্বোধনপদ্মার খবরপদ্মাসেতুপ্রধানমন্ত্রীপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা