গান ও সুরের মূর্ছনায় কানাডায় নজরুল সঙ্গীতসন্ধ্যা

বাঙালি জাতিসত্তার প্রকৃত পরিচয় ও বাঙালিয়ানাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ধরে রাখতে এবং আবহমান বাংলার কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের সাথে সেতুবন্ধন তৈরি করতে এবং সাম্য, বিদ্রোহ ও ভালোবাসার কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উপলক্ষ্যে বর্ণিল আয়োজনে কানাডার ক্যালগেরির প্রবাসী বাঙালিরা উদযাপন করল ‘নজরুল সংগীতসন্ধ্যা।’

কানাডার স্থানীয় সময় শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় ক্যালগেরির ফলকনরিজ কমিউনিটি সেন্টারে প্রবাসীদের এই আনন্দঘন মুহূর্তকে স্মরণীয় করতে ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ নজরুল সন্ধ্যায় যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত বাংলাদেশ নজরুল সঙ্গীত সংস্থা’র সাধারণ সম্পাদক এবং ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়াতনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী খাইরুল আনাম শাকিল।

বরফাচ্ছন্ন কানাডা বছরের এই সময়টাতে প্রকৃতি ভিন্ন অবয়বে নতুন চেহারায় জেগে উঠলেও প্রকৃতিতে বিরাজ করে চাঞ্চল্য আর অস্থিরতার আমেজ। চারদিকে গাছগাছালিতে নতুন রূপ। এমনি এক পরিবেশে শিল্পী শাকিল নজরুলকে ধরলেন কণ্ঠে। ক্যালগেরির ফলকনরিজ কমিউনিটি সেন্টার কেঁপে উঠলো, নড়ে উঠলো, নেচে উঠলো তার কন্ঠে। সুর ও বাণীর মালা দিয়ে বাঁধলেন শ্রোতাভর্তি দর্শকদের।

বহু সম্প্রদায়ের দেশ কানাডায় দিনটি গতানুগতিক মনে হলেও প্রবাসী বাঙ্গালীদের কাছে ছিল সম্পূর্ণ আলাদা, আবেগ-অনুভূতি-উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠা মাধুর্যমণ্ডিত একটি সন্ধ্যা, যেন নিজেকে নজরুলীয় ভালোবাসায় সমর্পিত ও উদ্ভাসিত করা। কর্মময় একঘেঁয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে প্রবাসী বাঙালিরা সুরে ও বাণীর মালায় ছুঁয়েছিল একে অপরকে।

প্রবাসের মাটিতে প্রবাসীরা ‘আবার ভালোবাসার সাধ জাগে…. ‘লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া মজনু গো আঁখি খোলো’; ‘আসলো যখন ফুলের ফাগুন গুলবাগে ফুল চায় বিদায়’—এসব গানের সুরে হারিয়ে খোঁজে ফিরে শৈশবের সেই দিনগুলিকে।

কমিউনিটি সেন্টারে সংগীত প্রেমী নারী পুরুষের পদচারণায় হৃদয় মন ভরে উঠেছিল অন্যরকম এক আবেগ ভালোবাসার মিলনমেলায়। প্রেমময়, সাম্যবাদী, মানবিক চেতনার কবির নজরুল সন্ধ্যা প্রবাসীদের মাঝে মাতৃভূমি এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক চর্চার ধারাকে আরো সমৃদ্ধ করবে—এমন আশা আয়োজকদের।

অনুষ্ঠানের আয়োজক ইকবাল রহমান জানান, আসছে ২৪ মে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যে ক্যালগেরিতে ভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা নজরুলকে তুলে ধরেছি, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং প্রবাসীদের মাঝে নজরুলের চেতনাকে জাগ্রত করবে।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক খায়ের খোন্দকার রুবেল জানান, খুব ভালো লাগছে প্রবাসে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এ রকম একটা আয়োজন করতে পেরে। আমাদের প্রিয় শিল্পী খাইরুল আনাম শাকিলের সুর-বাণীর মালায় আমরা মুগ্ধ। প্রবাসে ভিন্ন এ আয়োজন আমাদের সংস্কৃতির বলয়কে আরও সুদীর্ঘ করবে—এমনটাই আমার বিশ্বাস।

সংগীতশিল্পী সোহাগ হাসান বলেন, প্রবাসে এ ধরনের আয়োজনে আমরা সত্যিই অভিভূত। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার অনবদ্য সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন।

বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অফ ক্যালগেরি’র সাধারণ সম্পাদক শুভ্র দাস শুভ্র বলেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে শুধু প্রবাসে নয়, সারা বিশ্বের মানুষের মাঝে তিনি জাগ্রত থাকবেন।

বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী খাইরুল আনাম শাকিল জানান, প্রবাসে নজরুল সঙ্গীত সন্ধ্যার এই আয়োজনে প্রবাসীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে আমি অভিভূত। ক্যালগেরির প্রবাসী বাঙ্গালীদের দেশপ্রেম ও সংস্কৃতির প্রতি যে ভালোবাসা তা গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। আশা করি, ভবিষ্যতেও এই চর্চা অব্যাহত থাকবে এবং আমাদের নতুন প্রজন্মের হাতে নজরুলের যা কিছু রচনা, যা কিছু সৃষ্টি ভালো অনুবাদের মাধ্যমে তা তুলে দিতে হবে।

দ্রোহ, প্রেম, ধর্মীয় অনুপ্রেরণা ও সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলামের একেকটি দীপ্তিমান শব্দবর্ধন সেই বূটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে বাঙালি কে উজ্জীবিত করেছে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত। বাঙালির আন্দোলনে তাঁর সৃষ্টি আজও সমানভাবে প্রেরণা যোগায়। আবার নজরুলের প্রেম অথবা বিরহ হদয় জোড়া কিংবা ভাঙ্গার কালে বাঙালির আশ্রয়স্থল। বৈচিত্র্যময় সময়ের মসজিদের এই মুয়াজ্জিন যেমন একসময় বাঙালির ঈদ উৎসবকে রঙিন করে তোলে তেমনি তাঁর শ্যামা সঙ্গীত আজ ও অতুলনীয় পূজা অর্চনায়। চুরুলিয়ার দুখু মিয়া শুধু কানাডা নয় সারা বিশ্বে তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে অমর হয়ে থাকবেন এমনটাই প্রবাসী বাঙালিদের প্রত্যাশা।

বিজ্ঞাপন

কানাডা প্রবাসী বাঙালিকানাডায় নজরুল সঙ্গীতসন্ধ্যাবাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অফ ক্যালগেরি