২০২৩ সাল বাংলাদেশের দারুণ কাটবে: সাক্ষাৎকারে মিরাজ

চট্টগ্রাম থেকে: নেতৃত্বে থাকলে ওয়ানডে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ‘ঘোষণা’ দিয়ে ভারতে যাওয়ার কথা অনেক আগেই বলেছেন তামিম ইকবাল। ২০২৩ বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে অন্যদের মাঝেও ছড়াচ্ছে এমন বিশ্বাস। সম্প্রতি ভারতকে ওয়ানডে সিরিজে হারানোর নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও স্বপ্ন বুনছেন বিশ্বজয়ের।

চট্টগ্রামে বিপিএল দল ফরচুন বরিশালের টিম হোটেলে বসে চ্যানেল আই অনলাইনকে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সম্ভাবনার আদ্যোপান্ত।

সাকিব আল হাসান অলরাউন্ডার হওয়াতে বাড়তি ব্যাটার খেলানোর সুযোগ থাকে। আপনার ব্যাটিং পজিশন উপরে শিফট হলে আরও একটা অপশন বাড়বে। এটা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য কতটা সুফল বয়ে আনবে?
মিরাজ: একটা দলে যখন অলরাউন্ডার বেশি থাকে তখন সমন্বয় করা অনেক সহজ হয়ে যায়। সাকিব ভাই তো সবসময় বাংলাদেশের জন্য বড় একটা ভূমিকা রাখে। সে খেললে দুইটা জিনিসই পাওয়া যায় বাংলাদেশ দলে। ব্যাটিং ও বোলিং। সাকিব ভাই যখন না খেলে তখন বাড়তি বোলার আনতে হয়, একজন ব্যাটসম্যান কম খেলাতে হয়। অনেক ইস্যু থাকে ওখানে। আমিও চেষ্টা করছি নিজেকে ওইভাবে উন্নতি করার জন্য। যদি সার্ভিস দিতে পারি ব্যাটিং-বোলিং দুটোই, তাহলে দলের জন্য অনেক বড় সুবিধা হবে। আমাদের ব্যাটিং লাইনআপ কিন্তু অনেক বড়। আমাদের কিন্তু আট-নয় নম্বরেও ব্যাটসম্যান থাকে। অলরাউন্ডার থাকলে অনেক বেশি অপশন থাকে এবং দল অনেক উপকৃত হয়।

তামিম বলেছেন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিততে খেলবে। যেহেতু অলরাউন্ডার বাড়ছে দলে সে আশাটা আপনিও করছেন কিনা?
মিরাজ: নিঃসন্দেহে, আমরা ওয়ানডেতে ভালো ক্রিকেট খেলছি অনেকদিন ধরে। আমরা যেভাবে এই সংস্করণটা খেলছি আর অনেক বড় বড় দলের সঙ্গে যেভাবে জিতছি, তাতে আমরা আশা দেখতে পারি। যখন বড় বড় দলকে হারাতে পারবো, সিরিজ জিততে পারবো, তখন সম্ভাবনাও থাকবে। আমরা সাউথ আফ্রিকায় সিরিজ জিতে এসেছি। ভারতের সঙ্গে সিরিজ জিতলাম। ধারাবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা অবশ্যই স্বপ্ন দেখতে পারি, আমরা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হবো। আমাদের দলে কিন্তু অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরা আছে। আমি, লিটন দা, মোস্তাফিজসহ অন্যরা যারা আছে তারাও কিন্তু অনেক অভিজ্ঞ। অনেকদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে। ৫ বছরেরও বেশি। আর যারা আছে সাকিব ভাই, বড় ভাইরা যারা আছে তাদের তো চার-পাঁচটা বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের দলের কম্বিনেশন অনেক ভালো। স্বপ্ন দেখি, ২০২৩ সাল বাংলাদেশের জন্য দারুণ কাটবে। অবশ্যই স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হবে।

ওয়ানডেতে অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বর থেকে সাকিবকে টপকে এক নম্বরে ওঠার স্বপ্ন দেখেন কিনা?
মিরাজ: একটা জিনিস দেখেন, এক নম্বর পজিশনে যেতে গেলে তো আমাকে অনেক স্ট্রাগল করতে হবে, অনেক ভালো করতে হবে। তবে সাকিব ভাই এখনও পারফরম্যান্স করছে, সে তো পারফর্ম করে সবসময়ই। সাকিব ভাই একদিনে এক নম্বর ধরে রাখেনি, টানা ৮-১০ বছর ধরে নম্বর ওয়ান অলরাউন্ডারে আছে। সাকিব ভাই আছে যতদিন, আমি মনে করি সাকিব ভাই-ই থাকবে। সে যতদিন খেলবে। যখন অবসরে যাবে, তখন একটা সুযোগ আসবে আমার জন্য।

নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার হতে কী চ্যালেঞ্জ দেখেন?
মিরাজ: আমি যেখানে ব্যাটিং করি সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে বড় স্কোর করা কিন্তু সম্ভব না। যদি উপরে ব্যাটিং করি, আমার জন্য সুযোগ থাকবে। আট নম্বরে ব্যাটিং করে কখনো অনেক বড় স্কোর করতে পারবো না। বাংলাদেশ দল যদি ফল না করে। আর এইরকম হলেও সবদিন ভালো খেলা সম্ভব না। খেলোয়াড়দের তো সবদিন একইরকম যায় না। জিনিসটা এটাই, উপরে ব্যাটিং করলে একটা সুযোগ থাকে। তবে এখন এই মুহূর্তে আমার কাছে মনে হয় না সুযোগ আছে।

সব ফরম্যাটে খেলতে পারা- এটা কি আপনাকে অনুপ্রাণিত করছে?
মিরাজ: একটা জিনিস দেখেন, সবসময়ই চিন্তা করি যে তিন সংস্করণের খেলোয়াড় হবো। আমার যখন টেস্ট ডেব্যু হয়েছিল, তখন একটা জিনিস চিন্তা করেছিলাম যে কীভাবে টেস্ট ক্রিকেটে নিজের অবস্থান তৈরি করব। যেন ধারাবাহিকভাবে টেস্ট ম্যাচটা খেলতে পারি। তখন কিন্তু চিন্তা করিনি ওয়ানডেতে থিতু হবো বা টি-টুয়েন্টিতে ফিক্সড হবো। যখন একটা ফরম্যাট খেলেছি তখন চিন্তা করেছি এই ফরম্যাটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব। যখন ডে বাই ডে এটাকে আয়ত্ত করলাম, চিন্তা করলাম টিম ম্যানেজমেন্ট আমার প্রতি আস্থা রাখল যে ধারাবাহিকভাবে টেস্ট টিমে ভালো করছি বা টিমের খেলোয়াড়। যখন প্রতিনিয়ত খেলছি তখন আমার চিন্তা আসলে কীভাবে উন্নতি করতে পারি ওয়ানডে ক্রিকেটে। তখন চিন্তা করছি কীভাবে ওডিআইটা উন্নতি করতে পারি, কীভাবে খেলতে পারি। কোন কোন ডিপার্টমেন্টে আমার ভালো করতে হবে। কীভাবে আমাকে খেলতে হবে। আমার রোলটা কী। এটা নিয়ে চিন্তা করলাম, চিন্তা করে পথ বের করলাম, কোথায় আমার উন্নতি করতে হবে, আমার কী উন্নতি করতে হবে। তাহলে ওডিআই টিমে খেলব। একদিনে তো সম্ভব না, ডে বাই ডে খেলতে খেলতে সমাধানগুলো বের করলাম। আর চিন্তা করলাম টি-টুয়েন্টিতে খেলব। এই ফরম্যাটে প্রথমদিকে সল্যুশন বের করতে পারিনি- এটি আসলে কীভাবে খেলতে হয়। এখন ব্যাটিংয়ে মাইন্ড পরিষ্কার যে টি-টুয়েন্টিতে কীভাবে খেলতে পারব। তবে বোলিংয়ে মনে করি আমার উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে এবং অনেক কনফিউসডও থাকি, কোন লেন্থে কীভাবে বল করতে হবে। মাঝেমাঝে হয়, মাঝেমাঝে হয় না। কন্টিনিউ যেন হয় এটা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি।

বিপিএলে ওপেনার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছেন। বরিশালের হয় ভালোও করছেন। দলও টানা জয় পাচ্ছে। অলরাউন্ডারদের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বাড়তি চাহিদা। আপনিও নিশ্চয়ই বিদেশি লিগে খেলার স্বপ্ন দেখেন?
মিরাজ: অবশ্যই, খেলতে অবশ্যই আগ্রহ জাগে। তবে আন্তর্জাতিক খেলা থাকলে তো খেলতে পারব না। আমাকে ওই সুযোগটা দেয়া হবে না। তবে সুযোগ থাকলে অবশ্যই খেলব। বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেললে অনেক সাহস, অনেক অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। বিশেষ করে সাকিব ভাই এতো অভিজ্ঞ কেনো, সে এতো বাইরে অনেক লিগ খেলেছে, এই জন্য সে অনেক অভিজ্ঞ। অভিজ্ঞতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বড় বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করাটাও একটা অভিজ্ঞতার ব্যাপার। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো এমনই হয়, অনেক অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।

বড় বড় ক্রিকেটার অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে চলে যাওয়ায় বিপিএল মিডিওকার টুর্নামেন্ট হয়ে যাচ্ছে কিনা?
মিরাজ: একটা সময় কিন্তু বিপিএল অনেক ভালো ছিল। এখন বিশ্বের সব জায়গায় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হচ্ছে। খেলোয়াড় পাওয়াও মুশকিল। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা যেভাবে টিম করছে আর করোনার কারণে গত দুই বছরে আমাদের দেশের অবস্থাও ভালো ছিল না। বিশ্বের পরিস্থিতিই অন্যরকম ছিল। এরমাঝে বিপিএল খেলাটা যে হচ্ছে, না হওয়ার চেয়ে তো হওয়া ভালো। এর মাধ্যমে আমরা খেলোয়াড়রা বেনিফিটেড হচ্ছি এবং যারা এর সাথে জড়িত আছে আম্পায়ার্স থেকে শুরু করে। এখন যে ক্রাইসিস চলছে তার মধ্যেও যে স্পন্সররা সাহস করে আসছে, সমর্থন দিচ্ছে তাতে তাদেরকে ক্রেডিট দিতে চাই। তারা যদি না আসতো তাহলে খেলাও হতো না, আর খেলা না হলে গ্যাপ পড়ে যেত। একটা বছর কিন্তু বিপিএলে এমনই হয়েছে।

ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩ফরচুন বরিশালবিপিএল-২০২৩বিসিবিমিরাজলিড স্পোর্টস