মেসির আগে যুক্তরাষ্ট্রে খেলেছেন যে ফুটবল রথী-মহারথীরা

বার্সেলোনা নয়, আল হিলালেও নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মিয়ামি লিওনেল মেসি পরের গন্তব্য। ইউরোপ ছেড়ে আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে আর্জেন্টাইন মহাতারকার যাওয়ার সিদ্ধান্তে মেজর লিগ সকার (এমএলএস) নিয়ে শুরু হয়েছে বাড়তি কৌতূহল। মেয়েদের ফুটবলে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও ছেলেদের ফুটবলে যুক্তরাষ্ট্র বড় নাম নয়। লিওনেল মেসির কারণে সেই দেশটিই ফুটবল বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন।

বিশ্বকাপজয়ী এলএম টেনের আগেও অবশ্য ফুটবলের অনেক রথী-মহারথী যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাবে খেলেছেন। তাতে দেশটিতে খেলাটির জনপ্রিয়তা বেড়েছিল। ইউরোপের লিগগুলোর পাশাপাশি এমএলএস নিয়েও ছিল আলোচনা, ছিল খোঁজখবর রাখার তাড়না।

এক নজরে দেখে নেয়া যাক বিশ্বের যেসব খ্যাতিমান ফুটবলার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মাঠ মাতিয়েছিলেন, তাদের ইতিবৃত্ত-

পেলে: কিংবদন্তি পেলে ১৯৭৭ সালে সবধরনের ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন। তার আগে, ১৯৭১ সালে জাতীয় দল থেকে অবসর নেন। সান্তোসের হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর খেলার পর ১৯৭৫ সালে বছর প্রতি ১৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিকে তিনি নিউইয়র্ক কসমস ক্লাবে যোগ দেন। চূড়ান্ত অবসরের আগে কসমসের হয়ে ৬৪ ম্যাচে করেছিলেন ৩৭ গোল। যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ার পেছনে তার ছিল বড় ভূমিকা।

লোথার ম্যাথিউস: ‘তিনি আমার জীবনের সেরা প্রতিদ্বন্দ্বী। আমার ধারণা এটাই তাকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য যথেষ্ট’- জার্মানদের সাবেক লোথার ম্যাথিউসের প্রশংসা করতে গিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ১৯৯০ সালে বিশ্বকাপজয়ী জার্মানির অধিনায়ক ছিলেন ম্যাথিউস। মাঠে তার খেলার ধরনকে যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করা হতো। তিনি ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব নিউইয়র্ক মেট্রোস্টার্সে যোগ দেন। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় দলটির হয়ে ১৬ ম্যাচ খেললেও অবশ্য গোলের দেখা পাননি।

জার্ড মুলার: জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি জার্ড মুলার ১৯৭৯ সালে ফোর্ট লডারডেল স্ট্রাইকার্সে যোগ দেন। জার্মানি ও বায়ার্ন মিউনিখ জার্সিতে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলে নেয়া মুলার যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাবটির হয়ে ৭১ ম্যাচ খেলে করেন ৩৮ গোল। ব্যালন ডি’অর জয়ী ফুটবলার ১৯৮১ সালে এ ক্লাব থেকেই অবসরে যান। তার দুবছর পর ফোর্ট লডারডেল স্ট্রাইকার্স নামটি আর থাকেনি। ক্লাবটির নাম রাখা হয় মিনেসোটা স্ট্রাইকার্স।

আলেসান্দ্রো নেস্তা: ইতালিয়ান সেন্টার ব্যাক আলেসান্দ্রো নেস্তাকে সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন বিবেচনা করা হয়। ২০০৪ সালে জীবিত ফুটবলারদের মধ্যে সেরা ১০০ জনের তালিকায় ছিল তার নাম। ২০০৬ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন আজ্জুরিদের জার্সিতে রেখেছিলেন বড় ভূমিকা। ২০১২ সালে কানাডার ক্লাব মন্ট্রিল ইমপ্যাক্টে ফ্রি-ট্রান্সফারে চুক্তি করেন। চারবারের উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় দলটিতে দুবছরে খেলেন ৩১ ম্যাচ। কানাডিয়ান ক্লাব হলেও মন্ট্রিল ইমপ্যাক্ট মেজর লিগ সকারে অংশ নেয়।

ইয়োহান ক্রুইফ: সত্তরের দশকে টোটাল ফুটবলের জনক নেদারল্যান্ডসের কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ ১৯৭৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অ্যাজটেকসে যোগ দেন। ২২ ম্যাচ খেলে করেন ১৪ গোল। পরের বছর ওয়াশিংটন ডিপ্লোম্যাটসে গিয়ে ২৪ ম্যাচে ১০ গোলের মালিক হন। ১৯৮১ সালে স্প্যানিশ ক্লাব লেভান্তে তার ঠিকানা হলেও কয়েক মাসের ব্যবধানে আবারও ওয়াশিংটন ডিপ্লোম্যাটসে ফেরেন। স্বল্প সময়ের জন্য ফিয়ে পাঁচ ম্যাচে দুই গোল পান।

ফ্রেঞ্চ বেকেনবাওয়ার: জার্মান কিংবদন্তি ফ্রেঞ্চ বেকেনবাওয়ার ১৯৭৭ সালে নিউইয়র্ক কসমসে যোগ দিয়ে তিন মৌসুমে ৮০ ম্যাচ খেলে পান ১৭ গোল। ১৯৭৪ বিশ্বকাপজয়ী দলের ফুটবলার ১৯৮৩ সালে আবারও দলটিতে ফিরে ২৫ ম্যাচে করেন দুই গোল।

ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড: চেলসির সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। ইংলিশদের সাবেক তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবেও বিবেচিত। চেলসির হয়ে ১৩ বছর খেলে করেন ২১১ গোল। ব্লুজদের হয়ে এখনও সর্বাধিক গোলদাতার রেকর্ড তার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দেড় শতাধিক গোল করেছেন, এমন আর কোনো মিডফিল্ডার এত গোল ইপিএলে করতে পারেননি। ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক সিটি এফসিতে যোগ দেন। এ ক্লাবটি থেকেই অবসরে যাওয়ার আগে ২৯ ম্যাচে করেন ১৫ গোল।

জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ: কদিন আগে দীর্ঘ ২৪ বছরের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানা জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ ২০১৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সিতে যোগ দিয়েছিলেন। সুইডেনের সর্বকালের সর্বোচ্চ স্কোরার গ্যালাক্সির হয়ে একবছর খেলে ৫৬ ম্যাচে করেন ৫২ গোল। ১১বার ব্যালন ডি অরের মনোনয়ন পাওয়া ইব্রা ২০১৩ সালে ৩৫ গজ দূর থেকে বাইসাইকেল কিকে গোল দিয়ে জিতেছিলেন পুসকাস অ্যাওয়ার্ড।

কাকা: ব্রাজিলিয়ান সাবেক কাকা ছিলেন তার প্রজন্মের সেরাদের একজন। বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ব্যালন ডি’অর জয়ী মাত্র আট ফুটবলারের একজন তিনি। ক্লাব ক্যারিয়ারে বেশিরভাগ সময় রিয়াল মাদ্রিদ এবং এসি মিলান খেলেছেন। ২০০৬-০৭ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেরা গোলদাতা কাকাও যুক্তরাষ্ট্রে খেলেছেন। অরল্যান্ডো সিটিতে ২০১৪ সালে যোগ দেন। ২০১৭ সালে অবসরের আগ পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৭৫ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ২৪।

ডেভিড বেকহ্যাম: মেজর লিগ সকার ইতিহাসের বিখ্যাত খেলোয়াড় নিঃসন্দেহে ডেভিড বেকহ্যাম। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং রিয়াল মাদ্রিদের মতো ইউরোপের কিছু বড় ক্লাবে খেলা ইংলিশম্যান লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সিতে ২০০৭ সালে যোগ দেন। পাঁচ বছর সেখানে কাটান। ৯৮ ম্যাচ খেলে করেন ১৮ গোল। বেকহ্যাম এখন ইন্টার মিয়ামি এফসির মালিক, যেখানে যোগ দিচ্ছেন লিওনেল মেসি।

দিদিয়ের দ্রগবা: আইভোরি কোস্টের সাবেক স্ট্রাইকার দিদিয়ের দ্রগবা চেলসির অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে আলোচিত এক নাম। নিজ দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাও। দুবার আফ্রিকান বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে এমএলএস দল মন্ট্রিল ইমপ্যাক্টে যোগ দিয়ে ৩৩ ম্যাচে ২১ গোল করেন। ২০১৭ সালে ফিনিক্স রাইজিংয়ে গিয়ে ২১ ম্যাচ খেলে পান ১৩ গোল।

গঞ্জালো হিগুয়েন: আর্জেন্টাইন সাবেক স্ট্রাইকার ২০২০ সালে ইন্টার মিয়ামিতে যোগ দেন। রিয়াল মাদ্রিদ, নাপোলি এবং জুভেন্টাসের হয়ে ইউরোপে খেলেছিলেন। ইন্টার মিয়ামিতে ৬৭ ম্যাচে করেছেন ২৯ গোল।

ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ববি মুর, থিয়েরি অঁরি, ডেভিড ভিয়া, আন্দ্রে পিরলো, গ্যারেথ বেল, ওয়েইন রুনি, স্টিভেন জেরার্ডের মতো ফুটবলাররাও যুক্তরাষ্ট্রে খেলেছেন।

বিজ্ঞাপন

ইব্রাহিমোভিচকাকাদ্রগবানেস্তাপেলেবেকহ্যামমুলারমেসিম্যাথিউসলিড স্পোর্টসল্যাম্পার্ডহিগুয়েন