জৈবসার উৎপাদন করে নজর কেড়েছেন ঝিনাইদহ কৃষক মর্জিনা

কৃষিজমির জৈবশক্তি অটুট এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত মহেশ্বরচাঁন্দা গ্রামের কৃষক মর্জিনা। কৃষককে তিনি উদ্ধুদ্ধ করে যাচ্ছেন জমিতে রাসায়নিক সারের বদলে জৈব সার ব্যবহার করতে। আর এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি নিজ এলাকাতে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোষ্ট) উৎপাদন খামার তৈরি করে কৃষি বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

তিনি মনে করেন জমিতে যত বেশি জৈব সার ব্যবহার করা যাবে তত বেশি নিরাপদ সবজি ও অন্যান্য খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। জৈব সারের ব্যববহারসহ কৃষকদের হাতেকলমে তিনি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করছেন। ‘কেঁচো সার’ উৎপাদনে তিনি যে জ্ঞান অর্জন করেছেন তা ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তার দেখাদেখি আরও অনেক নারী ‘কেঁচো সার’ উৎপাদন করে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করেছেন। এমন কাজের স্বীকৃতি হিসেবেই ২০১৪ সালে তিনি ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার’ লাভ করেন।

কৃষক মর্জিনা এখন কেঁচো সার উৎপাদন এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ‘রোল মডেল’-এ পরিণত হয়েছেন। অনেকেই এখন তার কাছে আসেন। তার থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ নেন। মর্জিনা জানিয়েছেন তার ফার্মের নাম ‘স্বপ্ন ভার্মি কম্পোষ্ট’। প্রতিমাসে তার ওখানে গড়ে চার টন কেঁচো সার উৎপাদন হয়। দূর দূরান্তের কৃষক এসে তার কাছ থেকে উৎপাদিত জৈবসার ক্রয় করেন। বেশ কয়েকজন কর্মী তার এই কাজের সাথে যুক্ত। তাদেরকে তিনি নিজে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন।

মর্জিনা জানিয়েছেন, কৃষিজমির জৈবশক্তি অটুট এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের যে লড়াই তিনি শুরু করেছেন এটি তার বাবার কাছ থেকে দেখেই উদ্ধুব্ধ হয়েছেন। তার বাবার নাম কৃষক ওমর আলী। বেশ আগেই তিনি প্রয়াত হয়েছেন। অনেকেরই হয়ত জানার কথা কৃষক ওমর আলী আশির দশকে কৃষিতে নিজের চিন্তা ও নতুন ধারণায় চাষাবাদ শুরু করে অধিক ফসল উৎপাদনের মধ্য দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। সে সময় তার নাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তারই কন্যা তিনি।

মর্জিনা জানিয়েছেন, ২০০২ সালে তিনি ‘ভার্মি কম্পোষ্ট’ নিয়ে ড. এম গুল হোসেনে, ড. মার্টিন এবং ড. জোসেফ-এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। দুই সপ্তাহের এই প্রশিক্ষণে তিনি অনেককিছু জানতে পারেন। এরপর তিনি ভার্মি কম্পোষ্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই কাজের মূল উদ্দেশ্য ছিল ফসল ভাল হবে, পরিবেশ ভাল থাকবে, জনস্বাস্থ্য ভাল থাকবে- ইত্যাদি।

মর্জিনার সংগঠনের নাম ‘কার্ড মহিলা সমিতি’। বর্তমানে তিনি নিজ এলাকায় নিরাপদ সবজি উৎপাদনে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মর্জিনা মনে করেন তিনি প্রকৃতি রক্ষায় কাজ করে চলেছেন। প্রকৃতির সাথেই তার নিবিড় সম্পর্ক। প্রকৃতিকে সুরক্ষা করতে না পারলে কোনোকিছুই টেকসই হবে না। সম্প্রতি কৃষি উদ্যোক্তা মর্জিনা ‘নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন’ বিয়য়ক একটি ওর্য়াকশপে যোগদান করতে নেপাল গিয়েছিলেন। তাকে এই সেমিনারে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। এর আগেও মর্জিনা আরও একবার কৃষি উৎপাদন কার্যক্রম হাতে-কলমে দেখতে ভিয়েতনাম গিয়েছিলেন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)