২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ হবে না মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন: আমরা ফেইল করিনি, আগামীতেও ফেইল করব না। এদেশের মানুষ আমাদের সবকিছু, ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয়ী হবোই হবো।
‘‘বাজেটে যখন যা ঘোষণা দিয়েছি তা বাস্তবায়ন করেছি। এবারও বাজেট বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ হবে না।’’
শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অর্থ মন্ত্রণালয় আয়োজিত বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মানুষের কর্মদক্ষতা ও দায়বদ্ধতার উপর ভর করেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, সবকিছুর মূলে হচ্ছে এ দেশের মানুষ, জনগোষ্ঠী- তাদের কর্মদক্ষতা, দেশের প্রতি তাদের মায়ামমতা, মানুষের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা, এটা অসাধারণ এক উদাহরণ আমি মনে করি।
‘এবং সেজন্য আমার বড় বিশ্বাস, আপনার মত করে আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের পরাজয় নেই। ইনশাল্লাহ আমরা বিজয়ী হবই হব।’
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিগত বাজেটে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছে। ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। এবারও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সম্ভব। এবারও বাজেট বাস্তবায়নে সফল হবে সরকার।
প্রস্তাবিত বাজেটে প্রথমবারের মতো আয়কর রিটার্ন পেতেও ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা টিআইএন খোলে তাদের কর দেওয়ার সামর্থ্য আছে। কর দিতে না চাওয়ার মানসিকতা থেকে জাতিকে বের হতে হবে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আপনারাই আগে বলতেন এ দেশে মিডিল ইনকাম জনসংখ্যার হার বেশি, কিন্তু তারা ট্যাক্স দেয় না। এরা সবাই যদি ট্যাক্স দিতে তাহলে অন্যদের ভাগে কম ট্যাক্স দিতে হত। আমি মনে করি, এখন সময় এসেছে সবাইকে ট্যাক্স পেমেন্ট করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএফএম) পরামর্শে আগামী অর্থবছরের বাজেট করা হয়েছে— বিএনপিসহ বাজেট নিয়ে সমালোচনাকারীদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের পরামর্শে বাজেট করা হয়নি। যতটুকু পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেছি ততটুকু করেছি।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফের শর্ত আছে সবার থেকে কর নিতে হবে। মধ্য আয়ের মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু তারা কেউই কর দেয় না। তারা কর দিলে চাপ কমত।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত আছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, বাজিণ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ সচিব ফাতেমা ইয়াসমিনসহ অনেকে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ১ জুন বিকালে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার পঞ্চম বাজেট।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা বর্তমান বাজেটের চেয়ে ১২ দশমিক ৩/৪ শতাংশ বড়। এই বিশাল ব্যয় মেটাতে আয় ধরা আছে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৫ কোটি যা জিডিপির ৫.২%। বছর শেষে জিডিপির আকার হবে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৫% আর মূল্যস্ফীতি ৬%।
বর্তমান মেয়াদে সরকারের পঞ্চম ও আগামী নির্বাচনের আগে শেষ বাজেট। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের তিন মেয়াদের টানা ১৫তম বাজেট এটি।
এবারের বাজেটের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে- ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’
বিজ্ঞাপন