ঘুরে আসুন বৃহত্তম ফুলের রাজ্য গদখালী

এ রাজ্যে কেবলই নানান ফুলের সমাহার। চারপাশের মাঠে মাঠে বাহারি রঙের ফুল আর ফুল। আর সেই ফুলের শোভা দেখতে এখন কত যে মানুষ ভীড় করে তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা দায়। যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার ‘গদখালী’ ইউনিয়ন বৃহত্তম ফুলের এক রাজ্য বলে এখন সর্বত্র খ্যাত। ফুল আর ফুলের মাঠ ঘিরে গদখালী এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

ফুলের মৌসুমে তাই পরিবার পরিজন নিয়ে গদখালী ফুলের মাঠ দেখা, পিকনিক করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ফুলপ্রেমীরা। একসময় হয়ত কারো ধারণাতেই ছিল না এদেশে এমন করে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হতে পারে। কিন্তু ‘গদখালী’ এখন এক অনন্য উদাহরণ।

‘গদখালী’ নামটি উচ্চারিত হলে তাই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে রং বেরঙের ফুলের মাঠ। বিয়ে, জন্মদিন যায় বলুন না কেন এখন সবখানেই গদখালীর ফুলের বড় বেশি কদর। আর তাই শখ মেটাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুল ক্রেতারা ছুটে চলেন গদখালীতে।

গদখালির ঝিকরগাছা উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম। এই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার একর জমিতে এখন ফুলের চাষ হয়। দেশী-বিদেশী নানান জাতের ফুল চাষ হয়। গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, লিলিয়াম থেকে শুরু করে জারবেরা, গ্লাভিওলাস সব ধরনের ফুলের চাষ হয়। ফুলের বার্ষিক বাজারটাও এখন অনেক বড়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এখানে নানান জাতের ফুলের বার্ষিক বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। গদখালির ফুল যে শুধু এখন আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে তা নয় এখানে উৎপাদিত ফুলের কদর বিদেশেও। তাই ফুল ব্যবসায়ীরা এখানে উৎপাদিত ফুল বিভিন্ন দেশেও রফতানি করছে।

বিবিসি সূত্রে জানা যায়, গদখালিতে প্রথম ফুল চাষের প্রচলন করেন কৃষক শের আলী সরদার। চার দশক আগে তিনিই ফুল চাষের সূচনা করেন। কৃষক শের আলী এরশাদ আমলের প্রারম্ভে প্রথম রজনীগন্ধা চাষ করেন এক বিঘা জমিতে। শের আলীর দেখাদেখি আরও অনেকেই চাষ শুরু করেন। আর এভাবেই বিস্তৃত হয় ফুলের চাষ। গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে রজনীগন্ধা, গোলাপের বিমোহিত গন্ধ।

যশোর শহর থেকে গদখালী ২৫ কিলোমিটার দূরে। যশোর-বেনাপোলের রাস্তা ধরে যেতে হয়। মূলত গদখালীর উইকিপিডিয়ার মতে, দেশের মোট উৎপাদিত ফুলের ৭০% উৎপাদিত হয় গদখালিতে। এখানে ছয় হাজার চাষী এবং ৫০ হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে ফুল ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। গদখালির উল্লেখযোগ্য গ্রামের মধ্যে রয়েছে বারবাকপুর, বোধখানা, কামারপাড়া, ফতেপুর, জায়রনগর, পটুয়াপাড়া, বেনেয়ালি। এসব গ্রামের সর্বত্রই ফুলের চাষ হয়।

এখন গদখালির মাঠে মাঠে ফুল ফুটেছে। আর এই ফুল দেখার জন্য প্রতিদিনই হাজার হাজার দর্শনার্থী ভীড় করছেন গদখালীতে। আনন্দ  উপভোগে গদখালীর সকাল-বিকেলটা এখন ভীষণ রকম রঙিণ। ফুল চাষ ঘিরে এখানে এখন এক ধরনের পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে। রাস্তার দুপাশে বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টের পাশাপাশি ছোট ছোট বিনোদন কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে। যেখানে বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য রাইডারসহ অন্যান্য ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ফুলের মাঠ দেখার জন্য এখন উদ্যোক্তা বা চাষীদের নির্ধারিত ফি দিতে হয়।

গোলাপ, জারবেরা, লিলিয়াম- এসব ফুলের বাগানে প্রবেশ করতে হলে গড়ে ১০ থেকে ২০ টাকা ফি দিতে হয়। ফি দেওয়ার পর যে কেউ ফুলবাগান ঢুকে প্রাণভরে দেখতে পারবেন, ছবি তুলতে পারবেন। এখানে ফুলের চারাও পাওয়া যায়। রাস্তার দুপাশে রয়েছে বিভিন্ন নার্সারি। নার্সারিতে প্রবেশ করতে গেলেও নির্ধারিত ফি দেওয়া লাগে।

মূলত ডিসেম্বর, জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিত মাসে গদখালীতে দর্শণার্থীদের বিপুল ভীড় জমে উঠে। এখনে গেলে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না। মাঠে মাঠে ফুল আর ফুল। আর চারপাশে ফুলপ্রেমিকদের আনাগোণা। এই বৃহত্তম ফুলের রাজ্যে গেলে আপনার মন আরও প্রাণময় হয়ে উঠবে তা নিশ্চিত বলা যায়।

গদখালীপর্যটনপর্যটন কেন্দ্রফুলযশোর