এশিয়ার চমক সত্যিই উপভোগ্য

বলছেন সাবেক তারকা ফুটবলার সৈয়দ মাসুক সাথী

বিশ্বকাপ ফুটবলের শুরুতে এশিয়ার দুই ফুটবল শক্তি কাতার ও ইরান হতাশ করলেও এশিয়ানদের চমক দিতে সময় লাগেনি। চমকের সূচনা করে সৌদি আরব। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার সাথে প্রথম ম্যাচে সব অনুমান মিথ্যা প্রমাণ করে আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে পরাজিত করে সৌদি আরব। বিশ্বকাপের প্রথম বড় অঘটনও এটি।

কিন্তু এই অঘটনের উত্তাপ মিলতে না মিলতেই আরেকটি অঘটনের জন্ম দেয় এশিয়ার আরেক বন্ধুপ্রতীম দেশ জাপান। সৌদি আরবের মতো জাপানও চারবারের বিশ্বকাপজয়ী জার্মানিকে ২-১ গোলে পরাজিত করে আরেকটি ইতিহাস তৈরি করে। এরপর সাউথ কোরিয়ার দিকেও তাকিয়ে ছিল সবাই। কিন্তু চমক দিতে না পারলেও উরুগুয়েকে আটকে দেয় সাউথ কোরিয়া। ম্যাচ ড্র করে উরুগুয়ের কাছ থেকে তারা এক পয়েন্ট ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়।

আজ এশিয়ার দুই দেশ কাতার ও ইরান গ্রুপে ফের লড়বে। ইরানের প্রতিপক্ষ ওয়েলস। অন্যদিকে কাতারের প্রতিপক্ষ সেনেগাল।

বিশ্বকাপে এশিয়ানরা কেমন করছে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় সাবেক তারকা ফুটবলার সৈয়দ মাসুক সাথীর সাথে। সাবেক এই ফুটবলার বলেন, ‘প্রথম দু’ম্যাচে হতাশই হয়েছিলাম। বিশেষ করে কাতার এবং ইরানের পরাজয়ের পর নিজের মধ্যেও অনেক প্রশ্ন তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু না, সৌদি আরব এবং জাপান অসম্ভব দৃঢ়তায় যে অঘটন ঘটিয়েছে তা এই বিশ্বকাপের সেরা চমক।’

‘আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরব জিতবে এমন অনুমান কোনো ফুটবল বিশেষজ্ঞই করেনি। আর্জেন্টিনা কত বড় ব্যবধানে জয়ী হয় সেটাই ছিল আলোচ্য। কিন্তু মাঠে ঘটেছে আসল ঘটনা। সৌদি আরব দ্বিতীয়ার্ধে আসল রূপে উদ্ভাসিত হয়। মেসির পেনাল্টি শুটে পিছিয়ে পড়েও তারা সবাইকে বিস্ময়কর এক জয় উপহার দেয়।’

‘আর্জেন্টিনা যত ব্যাখ্যাই দিক তারা জয় ঘরে তুলতে পারেনি এটিই সত্য। আর এই সত্যের কারণে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা এখন অনেক অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌদি আরবের বিপক্ষে জয়ী হলে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠাটা এখন এতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতো না। কিন্তু সৌদি আরবের জয় গ্রুপের সব হিসেবে নিকেশ একবারে উল্টে-পাল্টে দিয়েছে। যদি এমন হয় আর্জেন্টিনাকে গ্রুপ থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে— সেটা মেনে নিতেই হবে। সমর্থকদের অশ্রুপাত করে কোনো কাজ হবে না।’

সৌদি আরব কি দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটা অনেক কঠিন। তবে আর্জেন্টিনাকে হারানোর অনুপ্রেরণাতে তারা পরবর্তী দুম্যাচে আরও উদ্ভাসিত হলে এশিয়ার মুখ আরও উজ্জ্বল হবে। কিন্তু প্রতিপক্ষ যেহেতু মেক্সিকো এবং পোল্যান্ড তাই তেমন নিশ্চয়তা নেই। আর আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অফসাইড ট্রাপ এর কার্যকর যে কৌশল সেটাওতো সামনের দুই প্রতিপক্ষ দেখে ফেলেছে। সুতরাং সৌদি আরব-এর সামর্থ্য

সৈয়দ মাসুক সাথী

ও কৌশল আরও পরিষ্কার হবে পরবর্তী ম্যাচেই।’

এশিয়ার আরেক জায়ান্ট জাপানকে নিয়ে ভীষণ আশাবাদী সাবেক ফুটবলার সাথী। তিনি বললেন, ‘জাপানের খেলা খুব ভালো লেগেছে। ওরা আগে থেকেই লড়াকু। দৈহিক উচ্চতায় পিছিয়ে থাকলেও ওরা যে স্কিলের দিক দিয়ে অনেক এগিয়েছে তা প্রথম ম্যাচেই প্রমাণ করেছে জার্মানিকে হারিয়ে। এমন একটি প্রাণময় জয় প্রয়োজনও ছিল। জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পরও তাদের ম্যাচে ফিরে আসা এবং জয় নিয়ে ঘরে ফেরা অলৌকিক মনে হয়েছে।’

‘তবে পুরো টিমের সাথে গোলকিপার গোন্ডাকে আলাদা করে কৃতিত্ব দিতে হবে। দুর্দান্ত সব সেইভ করেছেন তিনি। জাপানের এমন প্রাপ্য দরকার ছিল। ফুটবলের নেশায় ওরা অনেক ত্যাগ স্বীকার ও অর্থ বিনিয়োগ করেছে। অবশেষে তারা নতুন এক শক্তির সন্ধান পেয়েছে।’

সাথীর মতে, ‘ভাগ্য ভালো হলে জাপান ‘ই’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যাবে। সেক্ষেত্রে কোস্টারিকাকে তাদের হারাতেই হবে। কোস্টারিকা স্পেনের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে মানসিকভাবে ভীষণ পিছিয়ে আছে। জাপান এই সুযোগটা নেবে বলে আশাবাদী। ২৭ নভেম্বর জাপানের সাথে কোস্টারিকার খেলা। এরপর পহেলা ডিসেম্বর স্পেনের সাথে জাপানের ম্যাচ। ২৭ নভেম্বর জাপান আমাদেরকে আরও নতুন চমক উপহার দিক এটিই কামনা।’

সাউথ কোরিয়া এর আগে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছে। এই নিরিখে সাবেক ফুটবল তারকা সাথী বলেন, ‘সাউথ কোরিয়া সবসময় লড়াকু ফুটবল খেলে। কিন্তু সামনের দুই ম্যাচে তাদের লড়াই আফ্রিকার ঘানা এবং পর্তুগালের সাথে। ২৮ নভেম্বর ঘানার সাথে খেলবে তারা। এই ম্যাচটির ফলাফলের মধ্যে দিয়েই সাউথ কোরিয়ার দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা বা না ওঠার বিষয়টি ঠিক হয়ে যাবে।’

‘ঘানা রোনালদোর পর্তুগালের সাথে খুবই ভালো খেলেছে। ওদের খেলার মধ্যে এ টু জেড কমিটমেন্ট থাকে। পর্তুগালের কাছে হারার কারণে ওরা ক্ষিপ্র হয়ে আছে। সাউথ কোরিয়ার পক্ষে এদেরকে সামাল দেয়া খুব কঠিন হয়ে যাবে। তবে এও মনে রাখতে হবে ২০ বছর আগে স্পেনকে হারিয়েও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও উঠেছিল।’

কাতার এবং ইরান হতাশ করলেও এশিয়ানরা আসলেই বিশ্বকাপে ভালো খেলছে। ভালো খেলেই তারা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। সাউথ আমেরিকা আর ইউরোপের দুই সেরা দল এশিয়ার কাছে পরাভূত হওয়ায় এশিয়ানদেরকে কেউ এখন আর খাটো চোখে দেখছে না।

সৈয়দ মাসুক সাথী বলেন, ‘সৌদি আরব, জাপান, সাউথ কোরিয়ার পারফরম্যান্স দেখার পর আমাদের টালিখাতা দেখতে ইচ্ছে করে। আমাদের ফুটবলের কোনো অগ্রগতিই হল না। সবকিছু কোথায় যেন আটকে থাকল। ফুটবল নিয়ে আমাদের যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস তা আমরা মাঠে দেখাতে পারলাম না। শুধু আলোচনা আর মূল্যায়ন করেই গেলাম। স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।’

কাতার বিশ্বকাপ-2022ফিফা বিশ্বকাপ ইরানফিফা বিশ্বকাপ জাপানফিফা বিশ্বকাপ জার্মানিফিফা বিশ্বকাপ সৌদি আরববাংলাদেশমাসুকসেমিলিড ফিফা বিশ্বকাপস্পট কিক