ভুল পরিকল্পনার জন্য ঢাকা যদি ডুবে যায়!

যানজটে নাকাল রাজধানীর মানুষ-৪ (শেষ পর্ব)

যানজট থেকে উত্তরণে পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও দৃঢ় প্রত্যয় লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে, তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজধানীর গণপরিবহনের উন্নয়নে প্রথম কৌশলগত পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০০৫ সালে। এরপর ২০১৩ সালে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু, স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে সেটি বাস্তবায়ন হতে পারছে না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সত্যিকার অর্থে যদি আমরা গণপরিবহনভিত্তিক একটা টেকসই নগরী করতে চাই, তাহলে সমীক্ষা রিপোর্টগুলোতে যা বলা ছিল, সে অনুযায়ী খুব দ্রুত জনবলকাঠামো পরিবর্তন করে পেশাদারি লোকগুলোকে আনতে হবে।

‘আজকে আমরা একটা সুন্দর বিদ্যুৎ অবকাঠামো পেয়েছি। হতে পারে অপেশাদারি লোক, সিন্ডিকেট রয়েছে পরিবহন খাতে, সবকিছুই জটিল এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এক্ষেত্রে তাই রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা লাগবে সর্ব্বোচ পর্যায় থেকে। একটা ধাক্কা লাগবে। তারপরে আস্তে আস্তে আমরা ফিক্স করতে পারবো।’

তিনি বলেন: বিজ্ঞানসম্মত সমাধান ভাবার ধ্যান-জ্ঞানের লোক সরকারের অনেক স্তরে নেই। অনেক দিন হয়ে গেছে, এরপরও ভুলের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বারবার। তার মানে আমরা কিছু শিখিনি। আমরা কোন সমীক্ষা রিপোর্টের কোন সুপারিশমালা নেইনি। এটা বেশিদিন চলতে পারে না। কারণ আমাদের অন্যান্য বড় বড় শহর ঢাকাকে ফলো করছে । ভুল পরিকল্পনার জন্য যদি ঢাকা ডুবে যায়, তাহলে সাড়া বাংলাদেশের কিন্তু একই পরিণতি হবে।

জোড়-বিজোড় কতটা বাস্তবসম্মত
সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম যানজট কমাতে জোড় সংখ্যার নম্বর প্লেট জোড় তারিখে এবং বিজোড় সংখ্যার নম্বর প্লেটের গাড়ি বিজোড় তারিখে চলাচলের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন।

কিন্তু, এরকম প্রস্তাব কতটা বাস্তবসম্মত?

ধানমণ্ডি নিবাসী ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক শোয়েব মাহমুদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমার গাড়ির নম্বর প্লেট জোড় সংখ্যার, তো এখন কি আমি ও স্ত্রী সপ্তাহে তিনদিন অফিস করবো! সন্তানেরা তিনদিন স্কুল করবে!

তিনি বলেন, ‘মেনে নিলাম যে জোড়-বিজোড়ে যানজট কমবে, কিন্তু জোড়-বিজোড় তারিখে আলাদা গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করা হলে স্কুল শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা পরিবহন সঙ্কটে পড়বেন। আমাদের গণপরিবহন ব্যবস্থা মানসম্মত না করে এবং নগরীর সব স্কুলের জন্য আলাদা বাস চালু না করে এসব সিদ্ধান্ত কতোটা যৌক্তিক হবে জানি না।’

পরিবহন ও সড়ক বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এই পদ্ধতিতে যানজট কিছুটা কমলেও ঢাকার প্রেক্ষাপটে তা বাস্তবসম্মত নয়। বেশ কিছু দেশ এমন পদ্ধতি বাতিল করেছে।

তিনি বলেন, আমরা যেখানে ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে পারি না, সিগন্যালে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে পারি না; সেখানে এমন পদ্ধতির চিন্তা না করাই ভালো। যানজটমুক্ত নগরী গড়তে হলে কম সংখ্যক গাড়িতে বেশি যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমানোর চিন্তা করা হয়। কিন্তু উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া এ চিন্তা বাস্তবায়ন করা যাবে না।

ড. এম শামসুল হক

শোয়েব মাহমুদের মতো অন্যরাও বলছেন, হয়তো মেয়র হতাশা থেকে এরকম কথা বলেছেন।

কারণ হিসেবে তারা বলেন, মেয়র যখন ‘রাস্তা আমার, কতগুলো গাড়ি চলবে সেই ক্ষমতা আমার নাই। তা হলে কীভাবে হবে? রাস্তা আমার আন্ডারে, ট্রাফিক পুলিশ আমার আন্ডারে না, তাহলে তো হবে না। রাজধানীর কোন রাস্তায় কী পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে, কোন কোন রাস্তায় বেশি যানজট এসব বিষয়ে গবেষণা করে কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’– তখন এটা হতাশা ছাড়া কিছু নয়।

তবে, জোড়-বিজোড়ের উদাহরণ যে একেবারে নেই তা নয়।

যেমন ফিলিপিন্সে একসময় তীব্র যানজট ছিল। সেখানকার আইন অনুসারে সেখানে কোনো গাড়ির লাইসেন্স প্লেটের নম্বরটা যদি ১ অথবা ২ দিয়ে শেষ হয়, তবে সেই গাড়িটি রাস্তায় সোমবারে থাকার অনুমতি পাবে না। আবার যদি সেটা ৩ বা ৪ দিয়ে শেষ হয়, তাহলে মঙ্গলবার গাড়িটাকে থাকতে হবে ঘরে। ৫ ও ৬ যাদের গাড়ির লাইসেন্স প্লেটের শেষ নম্বর, তারা তাদের গাড়ি নিয়ে বেরোবেন না বুধবার। বৃহস্পতিবারে রাস্তায় থাকবে না সেসব গাড়ি যেগুলোর লাইসেন্স প্লেটের শেষে রয়েছে ৭ ও ৮। আর ৯ ও ০ যাদের গাড়ির লাইসেন্স প্লেটের শেষ নম্বর, শুক্রবার তাদের গাড়ি বাড়িতেই থাকে।

আরও দেশের উদাহরণ
ঢাকার চেয়ে কলকাতায় একসময় যানজট বেশি ছিল। সেই কলকাতার যানজট এখন ঢাকার তুলনায় তুচ্ছ। আয়তনের তুলনায় লন্ডন-সিঙ্গাপুরেও রাস্তা কম। অথচ দুই নগরীতে দুঃসহ যানজট নেই। হংকংয়ের ৯০ শতাংশ লোক গণপরিবহন ব্যবহার করে। লন্ডনেও একই অবস্থা।

কলকাতাও একসময় যানজটের শহর ছিল, যা খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। তবে আজকের কলকাতা গতিময় আধুনিক শহর। সেখানে কোনো ট্রাফিক সিগন্যালে বড়জোর দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে। কলকাতার এ উত্তরণ কী করে সম্ভব হল?

কলকাতা শহরের এখন দুটি প্রধান অংশ। একটি পুরাতন কলকাতা, অন্যটি নতুন কলকাতা বা নিউ টাউন। নিউ টাউনে প্রশস্ত রাস্তা, সুশৃঙ্খল যানবাহনের সারি, দৃষ্টিনন্দন উঁচু ভবন। নতুন কলকাতার রাজপথে গাড়ির গতি ৫০ থেকে ৬০ কিমি.।

২০২০ সালে হাওড়া স্টেশনের পথে যানজট, বর্তমানে সেটা নেই

পুরাতন কলকাতায়ও যানবাহন বেশ দ্রুত গতিতেই চলে। সেখানে এভিনিউগুলো দ্বিমুখী এবং স্ট্রিটগুলো একমুখী ট্রাফিক করা হয়েছে। ফলে গাড়িগুলোকে দুঃসহ জটে পড়তে হয় না।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কলকাতা নগরীর গাড়ি চালকদের শৃঙ্খলাবোধ ও পেশাদারী মনোভাব। কলকাতার গাড়ি চালকরা কিছুতেই ট্রাফিক সিগন্যাল বা ট্রাফিক আইনকে অবজ্ঞা করেন না। স্বল্পশিক্ষিত গাড়ির চালকদের মাঝে এই বোধ সৃষ্টিতে সফলতা কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের একটি বড় অর্জন।

কলকাতায় গণপরিবহনে যাত্রী তোলার জন্য বাসগুলোর মাঝে কোনো প্রতিযোগিতা বা তাড়াহুড়ো নেই। কলকাতা শহর বা শহরতলির আশপাশের রাস্তাঘাটে কোথাও পুলিশ, পরিবহন শ্রমিক ও দলীয় গুণ্ডাদের চাঁদাবাজিও নেই।

এছাড়া টাউন সার্ভিসের বাসগুলো বড়, মাঝে প্রশস্ত দরজা। ফলে যাত্রীরা সহজে ও দ্রুত বাসে উঠতে ও নামতে পারেন। বাসের আসনগুলো দু’ভাগে বিভক্ত। বাম পাশের আসনগুলো নারীদের জন্য ও ডান পাশের আসনগুলো পুরুষ যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত। ফলে নারীরা সহজে ও স্বচ্ছন্দে বাসে যাতায়াত করতে পারেন।

সমাধান স্মার্ট সিটিতে
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: কম পরিবহনে, কম ফুয়েলে, কম ড্রাইভারে, কম ম্যানেজমেন্টে স্মার্ট সিটি গড়তে হবে। স্মার্ট সিটি হলো সংখ্যা কমাও প্রোডাক্টিভি বাড়াও, প্রোডাক্টিভির সঙ্গে থাকবে সুশৃঙ্খলা ও গতি। এই দুটো কাজই আমাদের দেশে বিশৃঙ্খল হয়ে আছে।

‘আমাদের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রোডাক্টিভির কাছে যেতে হবে,’ মন্তব্য করে তিনি বলেন: রুট কজ বুঝতে গেলে পেশাদারি হতে হয়, এখানে পেশাদারি লোকের সংখ্যা অনেক কম। মনে হওয়ার উন্নয়ন আর দেখার উন্নয়ন করেই কিন্তু আমরা সহজ সরল সমস্যাকে অনেক জটিল বানিয়ে ফেলেছি।

দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা
পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও দৃঢ় প্রত্যয় লাগবে বলে মনে করেন ড. এম শামসুল হক। তিনি বলেন, নগর উন্নয়নে যেসব সংস্থা যুক্ত, তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই। সবাই নিজেদের কৃতিত্ব দেখাতে প্রকল্প করে।

‘গণপরিবহনের উন্নয়নে আমাদের পরিকল্পনা, দলিল সবই আছে, কিন্তু যথাযথ প্রয়োগ নেই। ঢাকার গণপরিবহনের উন্নয়নে প্রথম কৌশলগত পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০০৫ সালে। এরপর ২০১৩ সালে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হতে পারছে না স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন: সাতটা ফ্লাইওভার করেও আমরা যানজট মুক্ত হতে পারিনি। পদ্মা সেতু আমার দুই ঘণ্টা সময় বাঁচিয়ে দিল, কিন্তু মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে যানজটে আটকে থাকলাম দুই ঘণ্টা, তাহলে লোকাল সমাধান হলো; কিন্তু যাত্রা পথের পুরো সমাধান পেলাম না।

‘সেই ধরণের চৌকস, সমন্বিত, পরিকল্পিত উন্নয়ন করার জন্য পেশাদারি ও রাজনৈতিক দুটোর মিশ্রণে যদি আমরা কাজ করতে পারি এখনো সম্ভাবনা আছে।’

এছাড়াও আরও কিছু পরামর্শ আছে তার।

ডাবল ডেকারে মিলবে স্বস্তি
এই পরিবহন ও সড়ক বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক বলেন, আমাদের গণপরিবহনের ডাবল ডেকার প্রাইভেট কারের বিকল্প হতে পারে। যদি ডাবল ডেকার ৫০ জন যাত্রী নিতে পারে তাহলে পঞ্চাশটা সিএনজি কমে গেল, ১০০টা বাইক কমে গেল কিংবা ৫০টা প্রাইভেট কার কমে গেল।

‘প্রাইভেট কার অভিশাপ, এটি চলার জন্য জায়গা চায়, থামার জন্য আরও বেশি জায়গা চায়,’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, উপযুক্ত জায়গা থেকে উপযুক্ত গন্তব্যে আমার ও স্বস্তিদায়ক গণপরিবহন মিললে মানুষ প্রাইভেট কারের বদলে সুন্দর-পরিচ্ছন্ন বাসেই চলাচল করবে।

রাইড শেয়ারিং
প্রাইভেট কারকে নিরুৎসাহিত করতে রাইড শেয়ারিং যানকেও কিছুটা বিকল্প মানছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, এতে করে দুয়েকজনের বাহন না হয়ে বহুমুখী যাত্রী সেবায় ভূমিকা রাখতে পারে রাইড শেয়ারিং।

ড. শামসুল হকও একইরকম মনে করেন। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: প্রাইভেট কারকে নিরুৎসাহিত করতে সকলেই চাইছে, আমি পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে দেখেছি তারা প্রাইভেট কার বাদ দিয়ে রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে কার ব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে আমি তাদেরকে প্রাইভেট কারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করি, তারা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয় এক সময় ছিল, এটা এখন মাথা ব্যথার কারণ। ইন্স্যুরেন্স, ফিটনেস, আবার দুর্ঘটনা ঘটলে জেলেও যেতে হতে পারে। তাদের ভাষ্য রাইড শেয়ারিংয়ে কার নিয়মিত ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয় ওই কোম্পানি।

ভিডিও সাক্ষাতকারে ড. এম শামসুল হক

ভিডিও: জাকির সবুজ

দেশীয় রাইডিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘পাঠাও’, ‘ওভাই’। যদিও ‘সহজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান রাইডিং সেবা শুরু করেছিল কিন্তু প্রথম ধাপের করোনার মধ্যে তারা সম্পূর্ণভাবে এই পরিষেবা বন্ধ করে দেয়।

এছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে রাইড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘উবার’ তাদের সেবা বাংলাদেশেও চালিয়ে আসছে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর  থেকে। ঢাকায় উবারের নিজস্ব অফিস না থাকলেও ভারত থেকে ঢাকায় একটি এজেন্সির মাধ্যমে পরিচালিত হয় তাদের কার্যক্রম।

‘পাঠাও’ কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যবহারকারীদের নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য সেবা নিশ্চিত করতে পাঠাও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাজধানীতে আরও বেশি নির্ভরযোগ্য ও সহজলভ্য সেবা নিশ্চিত করতে চায় তারা।

গ্রাহকের সুবিধার লক্ষ্যে ‘পাঠাও’ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকে।

‘ওভাই’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমান সময়ে যাত্রী ও চালকদের নিরাপদ রাখার প্রয়োজনীয়তা ফুটিয়ে তুলতে গত বছর থেকে তারা সম্পূর্ণ ডিজিটাল ক্যাশলেস পেমেন্টে চলে গেছে। রাইড শেয়ারিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য যা যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করে তারা।

‘উবার’ জানায়, কর্মব্যস্ত শহরে নগরবাসীর যাতায়াত ব্যবস্থাকে নিরাপদ এবং আরামদায়ক করে তুলতে তারা সবসময় প্রস্তুত।

কর্তৃপক্ষীয় বক্তব্য
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যাই করুক, ঢাকার যানজট নিরসনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে সরকার এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষগুলোকে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) জানায়, সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীর ইন্টারসেকশনসমূহের ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, ফুটপাথ দখলমুক্ত করা, অবৈধ যানবাহন বন্ধ, ব্লকভিত্তিক রিক্সা চলাচল, পার্কিং লোকেশন চিহ্নিত করা ও পার্কিং সম্পর্কিত পরিকল্পনা, সিগন্যালিং সিস্টেম, ইউটিলিটি সার্ভিস নির্মাণকালীন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং ঢাকা মহানগরীর সার্বিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বৈঠক হয়েছে।

বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের অগ্রগতি কী সেটা অবশ্য খুব বেশি জানা যায় না।

ডিটিসিএ’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমাদের উদ্দেশ্য ঢাকার সামগ্রিক উন্নয়ন কৌশল ও কাঠামোগত পরিকল্পনার সাথে ট্রাফিক এবং পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনার সমন্বয় সাধন। এছাড়াও ঢাকার ট্রাফিক এবং পরিবহনের জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং আন্তঃসংস্থা সহযোগিতা সমন্বিতকরণে কাজ চলছে।

সেই সমন্বয়ের ফল আসতে কতোদিন সময় লাগবে? যানজট কি আদৌ দূর হবে তিলোত্তমা ঢাকা থেকে?

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রাজধানীর যানজট এবং জনজট নিরসনে সাবওয়ে নির্মাণের কোন বিকল্প নেই। ঢাকা শহর নিয়ে আমাদের লজ্জায় থাকতে হয়। এ লজ্জার অবসান ঘটাতে হবে।’

জানা যায়, ২৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা সাবওয়ে নেটওয়ার্ক এর জন্য স্পেনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টিপসা প্রাথমিক ভাবে ১১টি রুট এলাইনমেন্ট প্রস্তাব করে। এই ১১টি রুটের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০৫কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৪টি রুট ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

সাবওয়েটি নির্মিত হলে ঢাকা শহরের প্রায় ৮০ লাখ কর্মজীবী মানুষের মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ প্রায় ৪০ লাখ মানুষ মাটির নীচ দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে এবং মাটির উপরিভাগ যানজট ও জনজট মুক্ত থাকবে।

জ্যামট্রাফিক জ্যামড. এম শামসুল হকঢাকাপদ্মাসেতুফ্লাইওভারযানজটরাজধানী