দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর একটি অংশ ডিমেনশিয়া নামক ভয়াবহ মস্তিষ্ক রোগে আক্রান্ত। মস্তিকের কার্যক্ষমতা যদি এমনভাবে হ্রাস পায় যা স্বাভাবিক জীবন যাপনকে ব্যাহত করে তাই ডিমেনশিয়া।
ডিমেনশিয়ার কারণসমূহকে সাধারণভাবে দুইভাগে ভাগ করা যায়- নিরাময়যোগ্য ও অনিরাময়যোগ্য। অনিরাময়যোগ্য কারণগুলোর মধ্যে প্রধানত রোগ হলো আলজেইমার’স ডিজিজ। সাধারণত ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ডিমেনশিয়ার কারণ আলজেইমার’স ডিজিজ।
এটি একটি স্নায়ুক্ষয়জনিত রোগ। বয়সের সাথে সাথে এর প্রার্দুভাব বাড়তে থাকে এবং মূল সমস্যা দেখা যায় স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া এবং পরবর্তীতে মস্তিকের অন্যান্য কার্যক্ষমতা ও হ্নাস পায়। সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে ধাবিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে অবনতির ধারা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্থির রাখা যায়।
বর্তমানে সারা বিশ্বে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি যা ২০৩০ সালে দাঁড়াবে ৮ কোটি এবং ২০৫০ সালে ১৫ কোটির অধিক। সারা বিশ্বে ডিমেনশিয়ার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৯০ সালে ছিল ১০ লক্ষ এবং ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ লক্ষ। বাংলাদেশে ষাটোর্ধ্ব মানুষের মাঝে ডিমেনশিয়ার হার ৮ দশমিক ১ শতাংশ।
মঙ্গলবার ২২ আগস্ট সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন, কুমিল্লা কর্তৃক আয়োজিত ডিমেনশিয়া বিষয়ক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মালিহা হাকিম।
দেশের স্বনামধন্য ঔষধ প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড-এর সৌজন্যে শিল্পকলা একাডেমি, কুমিল্লাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান
অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. মোস্তফা কামাল আজাদ। মূখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মালিহা হাকিম।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, ‘এ রোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ রোগের লক্ষণ এবং সঠিক পরিচর্যা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জ্ঞান খুবই সীমিত। এ কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সামাজিক কুসংস্কার, অযত্ন, অবহেলার শিকার হন। অপরদিকে যে পরিবারে এ রোগে আক্রান্ত কোনো রোগী রয়েছেন, তাদেরও মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক দিক দিয়ে যন্ত্রণাময় দিন পার করতে হয়। দ্রুত ডিমেনশিয়া মোকাবেলার জন্য জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিৎ।’
অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ প্যানেলিস্ট হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক (কর্নেল) ডা. গোলাম কাওনাইন, বিভাগীয় প্রধান, নিউরোলজি বিভাগ, ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল; অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসান চৌধুরী নাসিম, বিভাগীয় প্রধান, নিউরোলজি বিভাগ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল; ডা. মুদুল ইসলাম, সহকারি অধ্যাপক, নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, পরিচালক, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল; ডা. নাছিমা আকতার, সিভিল সার্জন, কুমিল্লা; ডা. মোরশেদুল আলম, ইসি সদস্য, বিএমএ, কুমিল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক, স্বাচিপ, কুমিল্লা। ধন্যবাদ প্রদান করেন ডা. মো. মুজিবুর রহমান, সহ-সভাপতি, বিএমএ, কুমিল্লা এবং আশরাফ উদ্দিন আহমেদ, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এছাড়াও অনুষ্ঠানটিতে বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণসহ দেড় হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ডা. মালিহা হাকিমকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
বিজ্ঞাপন