বৃষ্টির কারণে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার লড়াই নেমে এসেছিল ৪২ ওভারে। মোহম্মদ রিজওয়ানের ৮৬ রানের ইনিংস ও ইফতিখার আহমেদের ক্যামিওতে লড়াই করার মত পুঁজি পেয়েছিল পাকিস্তান। তবে কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমার অনবদ্য জুটির পর চারিথ আশালঙ্কার দৃঢ় ব্যাটিংয়ে লঙ্কানরা লক্ষ্য ছুঁয়েছে ২ উইকেট হাতে রেখে।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটে নেমে বৃষ্টির কারণে ৪২ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫২ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। বৃষ্টিআইনে বেঁধে দেয়া ২৫২ রানের লক্ষ্যে নেমে নির্ধারিত ওভারের শেষ বলে ৮ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে শ্রীলঙ্কা। জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করলো দাসুন শানাকার দল। দুই ম্যাচে দুই জয়ে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা ভারতের মুখোমুখি হবে শিরোপার লড়াইয়ে। রোববার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় গড়াবে ফাইনাল মহারণ।
৪২ ওভারে ২৫২ রান করার লক্ষ্যে নেমে উড়ন্ত শুরু পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। প্রথম ওভারেই ১১ রান করেন দুই ওপেনার কুশল পেরেরা ও পাথুম নিশাঙ্কা। তবে চতুর্থ ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় লঙ্কান বাহিনী। দলীয় ২০ রানে ফেরেন পেরেরা। ৮ বলে ১৭ রান করে রান আউট হন তিনি।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৫৭ রান তোলেন পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। ১৩.২ ওভারে দলীয় ৭৭ রানে শাদাব খানের শিকার হয়ে ফেরেন নিশাঙ্কা। ৪৪ বলে ২৯ রান করেন লঙ্কান ওপেনার। পরে জুটি গড়েন নিশাঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা।
২১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফিফটি করেন মেন্ডিস। ৪৮ বলে ফিফটির পথে ছিল চারটি চারের মার। ২৯.৩ ওভারে শতরানের জুটি পূর্ণ করেন সাদিরা ও মেন্ডিস। পরের বলেই ইফতিখারের শিকার হন সাদিরা। ৫১ বলে ৪৮ রান করেন লঙ্কান টপঅর্ডার।
৩৫.১ ওভারে দলীয় ২১০ রানে মোহাম্মদ হারিসের দুর্দান্ত ক্যাচে ইফতিখারের দ্বিতীয় শিকার হন মেন্ডিস। আটটি চার ও এক ছক্কায় ৮৭ বলে ৯১ রান করেন লঙ্কান উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ৩৭.৪ ওভারে দলীয় ২২২ রানে ইফতিখারের তৃতীয় শিকার হন দাসুন শানাকা। ৪ বলে ২ রান করে ফেরেন নাওয়াজের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
৪১তম ওভারের জোড়া উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদী। চতুর্থ বলে মোহাম্মদ ওয়াসিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ধনঞ্জয়া ডে সিলভা। পরের বলেই রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন দুনিথ ওয়েল্লাগে।
পরপর দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা। শেষ ওভারে লঙ্কানদের প্রয়োজন ছিল ৮ রান। ৪২তম ওভারের চতুর্থ বলে চারিথ আশালঙ্কাকে স্ট্রাইক দিতে গিয়ে রান আউট হন প্রমোধ মাধুশান। পঞ্চম বলে চার মেরে জয়ের লঙ্কানদের জয়ের কাছাকাছি পৌঁছান আশালঙ্কা। শেষ বলে লঙ্কানদের প্রয়োজন ছিল দুই রান। মিডঅনে ঠেলে দিয়ে জয় নিশ্চিত করেন আশালঙ্কা। ৪৭ বলে ৪৯ রান করেন আশালঙ্কা।
পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন ইফতিখার আহমেদ। শাহিন শাহ আফ্রিদী নেন দুটি উইকেট।
বৃহস্পতিবার ম্যাচ শুরুর আগেই হানা দিয়েছিল বৃষ্টি। নির্ধারিত সময়ের সোয়া দু’ঘণ্টা পর গড়ায় ম্যাচ। প্রথম দফায় ওভার কাটা হয় ৫টি করে। পাকিস্তানের ব্যাটের সময় ফের বৃষ্টির হানায় আরও তিন ওভার কাটা হয়। অর্থাৎ, ৪২ ওভার করে ইনিংস নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় খেলা শুরুর কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা হয়নি। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে টস হয়। ৫টা ৪৫ মিনিটে গড়ায় লড়াই।
আগে ব্যাটে নেমে লঙ্কান বোলারদের তোপে ভালো করতে পারেনি পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি। ৪.২ ওভারে দলীয় ৯ ওভারে ফখর জামান ফেরেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৬৪ রান তোলেন আবদুল্লাহ শফিক ও বাবর আজম। ১৬তম ওভারের শেষ বলে বাবর ফিরে যান। ৩৫ বলে ২৯ রান করেন তিনি।
২১.৪ ওভারে তৃতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। ফিফটি করা শফিক ফেরেন পাথিরানার শিকার হয়ে। ৬৯ বল ৫২ রান করেন এই ওপনোর। দুই ওভার পরেই ফেরেন মোহাম্মদ হারিস। ৯ বলে ৩ রান করে শিকার হন পাথিরানার। ২৭.৪ ওভারে মাহেশ থিকাসানার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। ১২ বলে ১২ রান করেন তিনি।
নাওয়াজ ফেরার পরই বৃষ্টি হানা দেয় মাঠে। এ দফায় খেলা বন্ধ ছিল প্রায় ৩০ মিনিট। বৃষ্টির আগে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ২৭.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩০ রান।
বৃষ্টির পর নেমে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। ৩৩.৫ ওভারে তিন চার ও দুই ছক্কায় ৪৮ বলে ফিফটি পুর্ণ করেন রিজওয়ান। ৪০.৩ ওভারে দলীয় ২৩৮ রানে মাথিশা পাথিরানার বলে দাসুন শানাকার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইফতিখার। ৪০ বলে চারটি চার ও দুটি ছক্কায় ৪৭ রান করেন তিনি।
পরের ওভারে দলীয় ২৪৩ রানে প্রমোধ মাধুশানের বলে কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শাদাব খান। এরপর শাহীন শাহ আফ্রিদীকে নিয়ে ইনিংস শেষ করেন রিজওয়ান। ছয়টি চার ও দুই ছক্কায় ৭৩ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত ছিলেন রিজওয়ান। শাহিন অপরাজিত ছিলেন ১ রানে।
লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন মাথিশা পাথিরানা। প্রমোধ মাধুশান নেন দুটি উইকেট। এছাড়া দুনিথ ওয়েল্লাগে ও মাহেশ থিকসানা নেন একটি করে উইকেট।
বিজ্ঞাপন