চোখে দেখা ৭৫ বছরের রাজনীতি

বয়সটা ৯০ হতে চলেছে। মাত্র মাস চার পাঁচেক বাকি। রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি ৭৪ বছর। এর মধ্যে পাকিস্তান সরকার-কী সামরিক, কী বে-সামরিক, বিনাবিচারে কারাগারে আটক করে রেখেছিল প্রায় ১৪ বছর।

ভাষা আন্দোলন করেছি ১৯৪৮ ও ১৯৫২ তে। ১৯৬৯ পর্যন্ত গণ-আন্দোলন, গণ-অভ্যূত্থানে পাবনা শহরে নেতৃত্বের প্রথম সারিতেই ছিলাম। অতঃপর ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ। এই ঘটনাগুলির প্রতিটি ছিল ইতিহাসই ছিল বিশাল। এতই বিশাল যে তা এরকম একটি নিবন্ধে নিখুঁতভাবে তুলে ধরা যাবে না। রীতিমত কয়েক ভলিউমের বই লিখতে হবে। তা-ও হয়তো করতে পারতাম। কিন্তু বয়স ও স্বাস্থ্যজনিত কারণে তেমন কিছু আর ভাবার অবকাশ নেই।

অনেকে প্রশ্ন করেন, এত দীর্ঘ দিন ধরে একটানা রাজনীতি করলেন কিন্তু পেলেন কি? বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে?

এদের মধ্যে যাঁরা বয়স্ক এবং ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন, জানেন ও বাল্যকাল থেকে রাজপথে ও কারাগারে বছরের পর বছর থাকতে দেখেছেন স্রেফ রাজনৈতিক কারণে এবং সম্পূর্ণ বিনাবিচারে, তাঁরা বলেন, জীবন শুরু করেছিলেন রাজনীতি দিয়ে সেই পাকিস্তান আমলের গোড়া থেকে। তার পরে ১৯৫০ এ সমমনা ১০-১৫ জন মিলে পাবনাতে গড়ে তুলেছিলেন পাকিস্তানোত্তর প্রথম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান শিখাসংঘ। লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন বাঙালি সংস্কৃতি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ সাধন। ১৯৫০ এ পাশ করলেন ম্যাট্রিকুলেশন। দরিদ্র ও সৎ শিক্ষক পিতার সন্তান হওয়ায় কলেজে ভর্তি না হয়ে যোগ দিলেন বেসরকারি এক চাকুরীতে। দুটি বছর চাকুরী করে সংসারের লক্ষ্যনীয় কোন উন্নতি না হওয়ায় ১৯৫২ তে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হলেন। কিন্তু মাথায় তো রাজনীতিন পোকা কিলবিল করতো-আজও করছে।

তাই বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হলেন। কিছু দিন পর প্রগতিমনা বন্ধুদেরকে নিয়ে গঠন করলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন। পাবনা জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন। ১৯৫৫ তে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য এবং পরবর্তীতে পর পর দুই দফা নির্বাচিত হলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। জেল খাটা তো শুরু হয়েছিল ১৯৫৪ সালে-প্রথম দফায় এক মাস। পরবর্তীতে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা বাতিলের পর দ্বিতীয় দফায় একটানা দেড় বছর। ষাটের দশকে প্রায় পুরো দশকটাই থাকলেন কারারুদ্ধ।

ইতোমধ্যে ১৯৫৪ সালে হারালেন বাবাকে। সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় মা ও ছোট তিনটি ভাই নিয়ে গঠিত সংসারের দায়িত্ব পড়লো আপনার কাঁধে। বাবার একক সামান্য আয়ে কোনরকমে সংসারটা চলছিল কিন্তু সে পথও বাবার মৃত্যুতে রুদ্ধ হয়ে গেল। লেখাপড়া চালিয়ে চাকুরী করা যাবে না-নিত্যদিন রাজনীতির ব্যস্ততা আয় উপার্জনের প্রতিকূলে। বাধ্য হয়ে শুরু করলেন টিউশনি সঙ্গে সংসার, রাজনীতি ও লেখাপড়া। চললো কায়ক্লেশে।

বিএ পরীক্ষা দিলেন ১৯৫৮ সালে এডওয়ার্ড কলেজ থেকে। পরীক্ষা শেষের পরদিনই পাকশী চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জোর করে নিয়ে গেলেন ওই স্কুলে। গিয়েই সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র দিলেন। পেলেন এক কোয়র্টারও। অতঃপর বিয়ে ১৯৫৯ সালে। ছাত্র শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও সকল প্রতিষ্ঠানকে জানালো-কোন বামপন্থী শিক্ষককে চাকুরি দেওয়া যাবে না। আগে থেকে দেওয়া হয়ে থাকলে সার্কুলার পাওয়ামাত্র অপসারণ করতে হবে। কমিটিসহ সকলেই অনিচ্ছুক। তাই স্কুলে কমিটির চেয়ারম্যান এসডিও স্বয়ং পাবনা থেকে এসে সিদ্ধান্ত নেওয়ালেন সার্কুলার অনুযায়ী। ফিরে গেলেন পাবনা।

এরপরে চাকুরি করাকালে দিবারাত্র আই.বি’র ওয়াচারদের পাহারা গেটের সামনে। কোথায় যাতায়াত করি-কারা আসে যায় তার বিবরণ লিখে ওপরে পাঠানো তাদের কাজ কিন্তু অত্যন্ত গোপনে। চাকুরিতে থাকাকালেই বে-আইনী বই রাখার অজুহাতে গ্রেফতার। সামরিক আইনে। ছয় মাস পর বইটি বে-আইনী নয় প্রমাণ করে মুক্তিপেলাম কিন্তু সার্কুলার অনুযায়ী চাকুরি হারালাম। ফিরে এলাম পাবনার ভাড়াটিয়া বাসায়। আবার টিউশনি,রাজনীতি ও গ্রেফতার দফায় দফায়। ষাটের দশক জেলেই কাটালো। এলো ১৯৬৯ এর গণ অভ্যূত্থান আবার গ্রেফতার তবে স্বল্পমেয়াদী। এক মাস পর মুক্তি। সহধর্মিনী পূরবী সংসার চালাতে যে কঠিন অবস্থায় পড়লেন তাকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভর্তি হয়ে আই.এ.বি-এ ও এম.এ ফার্স্ট পার্ট পাশ করে গলষ্টোন অপারেশনের জন্য এম.এ ফাইনাল দিতে পারলেন না। কিন্তু চাকুরি? কে দেবে চাকুরি রণেশ মৈত্রের স্ত্রীকে?

পাকশীর চাকুরি চলে যাওয়ার পর এক বেসরকারি ব্যাংকে কেরানীর পদে চাকুরির জন্য আবেদন জানালে তাঁরা গোটা প্রদেশব্যাপী পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। পাবনা থেকে সেই পরীক্ষা দিয়ে প্রদেশের মধ্যে প্রথম স্থান পেলেন। চাকুরীরর নিয়োগ পত্র হেড অফিসে স্বাক্ষরিত হয়ে ‘ডেসপ্যাচ’ সেকশনে গেলে ডি.এস.বি হস্তক্ষেপ করে বললো ওনাকে চাকুরী দেবেন না-দিলে সরকারের রোষানলে পড়বেন। হলো না সে চাকুরীও। বোঝা গেল সরকার কোথাও চাকুরী করতে দেবে না।

হয়ে গেলাম গ্রেফতার-পাঠালো রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে। অদম্য সাহসী স্ত্রী পূরবী রাজশাহী জেলে গিয়ে জানালেন-যত কষ্টই হোক তিনি সংসার চালিয়ে নেবেন। তবে আমাকে ল’ পড়তে বললেন। রাজী হলাম। পরীক্ষার জন্য ১৯৬৭ সালে পাঠালো ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা হলো। বঙ্গবন্ধু তাঁর ডায়েরীতে “রাজবন্দীর রোজনামচা” বইতে আমার নাম ৬ বার উল্লেখ করেছেন। ওখান থেকে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে পাবনা জেলা জজ আদালতে ১৯৬৯ সালে ওকালতি শুরু করার কিছুদিন পরেই গণঅভ্যূত্থান এবং গ্রেফতার। মুক্তির পর আবার ওকালতি এক বছরের কিছু বেশী-শেষ হতেই ১৯৭১ এর শুরুতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট করার জন্য নদীয়া জেলার করিমপুরে পাবনা জেলার যুবশিবির স্থাপন ও মাঝে মাঝেই ভাল সংখ্যক যুবককে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতাম গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য-প্রশিক্ষণ শেষে অস্ত্র হাতে তাদের দেশে পাঠানো। যুব শিবির নয় মাসব্যাপী পরিচালনার পর ১৬ ডিসেম্বর এলো বিজয় ২৫ ডিসেম্বর ক্যাম্প গুটিয়ে পাবনা ফিরে এসে দেখা গেল বাড়ি ঘর নেই-শুধু ভিটে-মাটি পড়ে আছে।
অতঃপর বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ গঠনের কাজে আত্ননিয়োগ-সাথে ওকালতি। ১৯৭২ এ পূরবী জোগাড় করে নিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা। এই নিয়ে সংসার চললেও কোন বাড়ি বা জমি কেনারর শক্তি হয় নি আজও। পূরবী করেছে-আমি শ্রবণশক্তিহীন-তাই ২০০০ সাল থেকে ওকালতি বন্ধ।

যে অবস্থায় দিন চলছে
যাঁদের সাথে আমি ছাত্র আন্দোলন করেছি তাঁরা (মতিন, জয়নুল, খালিদ হাসান নিনু, নূরুদ্দিন আহমেদ, কামাল লোহানী, ভাষা মতিন প্রমুখ) কেউই বেঁচে নেই। যাঁদের সাথে আওয়ামী লীগ করেছি তাঁরা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, আবদুর রব বগা মিয়া, আমজাদ হোসেন, বেগম সেলিনা বানু, মাহমুদ আলম খান প্রমুখও প্রয়াত।

যাদের সাথে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ করেছিলাম সেই মওলানা ভাসানী,অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, আবদুস সামাদ আজাদ, পীর হাবিবুর রহমান, সৈয়দ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আলতাফ হোসেন, বেগম সেলিনা বানু প্রমুখ পরপারে। বেঁচে আছেন মতিয়া চৌধুরী-বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেত্রী। একমাত্র ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য এবং আর যারা আমরা ওই সংগঠন গড়ে তুললাম তারা মোটামুটি যথেষ্ট বয়স হলেও বেঁচে নেই।

কিন্তু বেঁচে থাকলেও নানা কারণে দলটাকে গুছিয়ে তুলতে পারা যাচ্ছে নানা কারণে।
এক. নানা কারণে অতীতে ন্যাপের বিভক্তি;
দুই. হাল আমলে কালো টাকা ও অস্ত্রের রাজনীতি;
তিন. উগ্র সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপক প্রসার রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য;
চার. যুব সমাজকে আকৃষ্ট করতে না পারা এবং
পাঁচ. মুক্তিযুদ্ধের আদর্র্শ দিন দিন বিবর্ণ হয়ে যাওয়া।

তাই রাজনীতি হয়ে পড়েছে অত্যন্ত দুরূহ। পঞ্চাশের দশকে, সত্তরের দশকের রাজনীতি আজ বিদায় নিয়েছে। তখন মওলানা ভাসানী, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী শেখ মুজিবর রহমান প্রমুখ নেতা অসংখ্য বড় বড় জনসভা করেছেন পাবনা টাউন হল বা ষ্টেডিয়াম ময়দানে। হাজার হাজার মানুষ এসেছেন সে সব জনসভায় দূর দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে। কাউকে কোন গাড়ি, গাড়ি-ভাড়া বা খাবার প্যাকেট দেওয়া হয় নি। এগুলি কারও ভাবনাতেও ছিল না।

কিন্তু বঙ্গবন্ধু মর্মান্তিকভাবে নিহত হলেন। সুষ্ঠু রাজনীতিও একই সাথে বিদায় হলো। সামরিক ঊর্দি ছেড়ে জিয়া রাজনীতিতে এলেন। শুরু হলো টাকার খেল। জনসভায় শত শত বাস-ট্রাক ভাড়া করে মানুষ জমায়েত করা শুরু হলো। খালেদা জিয়ার আমলেও তাই চললো। সেই যে শুরু, এখন সবাই সেই পথ ধরেছে আজও তা চালু আছে। কিন্তু আমরা যারা পঞ্চাশ-ষাটের দশকের বাম রাজনীতি করা লোক আজ পর্যন্ত সে পথ ধরিনি। সে পথ পরিত্যাগ করে অতীতের পথকেই আদর্শ ভেবে সে পথেই চলছি। ফলে মানুষের জমায়েত হয় কম। যুব সমাজ আরও কম। জৌলুস নেই, দামী দামী পোষ্টার নেই, বিলবোর্ড নেই-যুব সমাজও নেই। যারা এ পথ চান না-সেই সমাজ নিষ্ক্রিয়-নিস্পৃহ। তাই বাম রাজনীতি আকাংখিতভাবে অগ্রসর হতে পারছে না।

এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে বহু লড়াই সংগ্রামের, বহু আত্মদানের ফসল হলো স্বাধীন বাংলাদেশ। এখানে জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, কালো টাকা, সন্ত্রাস, নারী অবমাননা চলতে পারে না। এখানকার রাজনীতি ধনীদের স্পর্শে নয়-দরিদ্র-শোষিত মানুষের স্বার্থে পরিচালিত হতে হবে-যেমন চলেছে সরকার-বিরোধী রাজনীতি পাকিস্তান আমলে।

বাংলাদেশের মানুষের শোষণ-নির্যাতনের জন্য দায়ী পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রবর্তন ও শোষণ ভিত্তিক অর্থনীতি এবং তার অনুকূল রাজনীতি। তাই যে কোন মূল্যে-অর্থাৎ টাকা সন্ত্রাসের বিনিময়ে হলেও, দলীয় বড় পদ চাই, এম.পির মনোনয়ন চাই, মোটা দাগে ব্যাংকের ঋণ চাই, দামী দামী গাড়ী-বাড়ী চাই এবং এ জাতীয় চাহিদার অন্ত নাই। এ রাজনীতি পুরোপুরি ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে পরিচালিত হওয়ায় তার দ্বারা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধন হচ্ছে না-হবেও না। উল্টো-এই রাজনীতির প্রভাবে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশে প্রতিদিনই কলুষিত হয়ে পড়ছে।

তাই এই রাজনীতি যেহেতু গণ-বিরোধী-তাই এ রাজনীতি পরিত্যাজ্য। একে বিদায় দিয়ে নতুন গণমুখী রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরাই হবে মুক্তিযুদ্ধোত্তর রাজনীতির মূল দিকদর্শন। সেই রাজনীতিতে ব্যাক্তি স্বার্থের ঠাঁই নেই-আছে সমাজের স্বার্থে নিবেদিত প্রত্যয়। সে রাজনীতি মানুষে মানুষে বিভেদ ও অনৈক্যকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে-ধারণ করে জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। সেই ঐক্য কতিপয় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যাওয়ার। লক্ষ্যগুলি হলো-
এক. দেশপ্রেমকে সর্বাধিক গুরুত্বসহ ধারণ করে দেশকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক-সকল ক্ষেত্রে নতুন ধারা প্রবর্তন ঘটিয়ে গণ-বিরোধী পুরাতন ধারার অবসান ঘটানো।
দুই. বাংলাদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী কৃষক-ভূমিহীন কৃষক। দিবারাত্রি পরিশ্রম করে তারাই আমাদের খাবার উৎপাদন করেন-সকল অধিবাসীর আহার জোগান। কিন্তু তারা উৎপাদক হলেও জমির মালিক অন্যরা। ফলে উৎপাদিত পণ্যের একটি অংশ মাত্র তারা পান কিন্তু ঐ অংশের ন্যায্যমূল্য তারা পান না। কৃষি এখনও ১২ মাসের কাজে পরিণত না হওয়ায় ভূমিহীন ও খেতমজুরদের সারা বছরের জন্য কাজের ব্যবস্থা হয় নি। ফলে বছরের প্রায় ৫ মাস তারা বেকার থাকতে বাধ্য হন। তাদের সাম্বৎসরিক কাজ ও উপযুক্ত মজুরীর ব্যবস্থা করতে হবে।
তিন. শিল্প খাত আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থায় সর্বাধিক বড় খাত হওয়ার কথা থাকলেও বেসরকারী বা সরকারী কোন খাতেই উপযুক্ত পরিমাণ শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে নি। ফলে দেশটি থেকে যাচ্ছে আমদানি নির্ভর এবং বেকারত্বের সংখ্যাধিক্য। শিল্প সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশটিকে রপ্তানি নির্ভর দেশে পরিণত করে বেকারত্বের অবসানের প্রতি জোর দেওয়া।

চার. নারীর বেকারত্ব দূরীকরণ ও সেকেলে কুপ্রথা-কুসংস্কারের হাত থেকে নারী সমাজকে রক্ষা করে আধুনিক সভ্যতার আলো-বাতাসে নারী সমাজকে গড়ে তোলা; নারী নির্যাতন কঠোরভাবে দমন করা; পাঁচ.শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে জাতীয় বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান; ছয়.মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা এবং এক কৌণিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা; সাত.দেশে ধর্মের নামে রাজনীতি, ধর্মাশ্রয়ী দলগুলি নিষিদ্ধ করা ও রাষ্ট্রধর্ম বিলুপ্ত করে বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তরের সংবিধান অবিকল পুনরুজ্জীবন এবং আইনের শাসন প্রবর্তন। এই নিম্নতম কর্মসূচি গ্রহণ জাতির জন্য জরুরী।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)