সৌন্দর্যের আইকন কানিজ আলমাস খান

কানিজ আলমাস খান বাংলাদেশের সৌন্দর্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান পারসোনা হেয়ার অ্যান্ড বিউটি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সুপরিচিত। ১৯৯১, ১৯৯৬, ১৯৯৮ সালে ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর, সানসিল্ক শ্যাম্পুর ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হিসাবে কাজ করেছেন।

এছাড়া তিনি জুঁই হেয়ার অয়েল স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড, জাহি ওয়ারিদ টেলিকমিউনিকেশন এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এর ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবেও কাজ করছেন।

তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিজনেস অ্যাওয়ার্ডস, ২০০৯, ২০০৯ সালে ভারতে ওয়ার্ল্ড লিডারশীপ কংগ্রেস থেকে ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ড লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার জিতেছেন। কানিজ আলমাস খান ৪ ডিসেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে ব্যাচেলর সম্পন্ন করেন। কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, পাকিস্তান, ব্যাংকক এবং চীন থেকে পেশাদারী প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন তিনি। কানিজ আলমাস খান প্রথমে ঢাকার কলাবাগানে গ্ল্যামার নামে একটি সৌন্দর্য সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। পরে গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রূপ বিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিলের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন পারসোনা। বর্তমানে সারা বাংলাদেশে পারসোনার ১১টি শাখা রয়েছে।

২০০৫ সালে কানিজ আলমাস প্রথম বাংলা ফ্যাশন পত্রিকা ক্যানভাস প্রকাশ করেন। ২০০৫ সালে তিনি পারসোনা মেনজ এবং পারসোনা অ্যাডামস শুরু করেন। বর্তমানে এটি পারসোনার পুরুষ সেবা বিভাগ। বর্তমানে ঢাকা ও সিলেটে এই সেবার শাখা রয়েছে। একই ক্রমানুসারে ২০০৭ সালে তিনি পারসোনা হেলথ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি এ্যারোবিক্স, পাওয়ার যোগ, জুম্বা, পাইলটস, স্ক্রিম সেবা প্রদান করে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ এর রাজশাহীতে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে রূপচর্চা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এছাড়াও পারসোনার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন পারসোনা জিম ও পারসোনা ইন্সটিটিউট।

২০১০ সালে বাংলাদেশে রূপচর্চাকে বিশ্বব্যাপী মান নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিজনেস অ্যাওয়ার্ডস লাভ করেন। ২০০৯ সালে ব্যবসায় অসাধারণ নারী হিসাবে এই পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ভারতের ওয়ার্ল্ড লিডারশীপ কংগ্রেস থেকে ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ড লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ড, ২৯ অক্টোবর ২০১৭ এ লা মেরিডিয়ান ঢাকায় রূপ চর্চায় অভাবনীয় নারী নেতৃত্বর জন্য সাউথ এশিয়ান পার্টনারশিপ সামিট, এসএপিএস এবং বিজনেস অ্যাওয়ার্ড পান। ২০১২ সালে সিজেএফবি সাংবাদিক সাংস্কৃতিক ফোরাম এ্যাওয়ার্ড।

২০১৪ সালে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আরটিভি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে নয় জন আলোকিত নারীকে সম্মাননা দেয়। তারা বিজনেস বিভাগে কানিজ আলমাস খান’কে আরটিভি পন্ডস আলোকিত নারী পুরস্কারে ভূষিত করেন। ২০১৫ ব্র্যান্ড ফোরাম বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত নারী উদ্যোক্তা এবং আরএফএল অনুপ্রেরণা নারী পুরস্কার পান।

২০০৫, ২০০৬, ২০০৮ ও ২০০৯ সালের জন্যে শ্রেষ্ঠ রূপ বিশেষজ্ঞ পুরস্কার লাভ করেন বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টারস ইউনিট এসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড, বিসিআরএ। সম্প্রতি বাংলাদেশের সৌন্দর্যের আইকন কানিজ আলমাস খান একান্ত সাক্ষাতকারে বলেন তার জীবনের নানা অজানা কথা।

প্রশ্ন: আপনার কাজের ক্ষেত্রে পরিবারের সাপোর্ট কতোটা পেয়েছেন?

কানিজ আলমাস খান: সেই সময়টা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে, আমার ফ্যামিলিকে কখনো বলতে হয়নি কেন আমি এই প্রফেশন নিচ্ছি? আমার ভাল লাগে তাই তারাও আমার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে এই ক্ষেত্রে কাজের ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন। বাবার বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ির সবাই আমার কাজকে উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু বাইরে থেকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে যে, এতো কাজ থাকতে কেন এই কাজ করতে হচ্ছে? আর কাজই বা কেন করতে হবে? বাসায় তো কতো কাজ থাকে? বাইরে গিয়ে কেন কাজ করতে হবে? ব্যাংকে বা কর্পোরেট চাকরি না করে এই চুল কাটাকাটিতে এলাম তার জন্যে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি ভাগ্যবান তাই যেভাবে পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি সেই রকম সব মেয়ে পেলে যে কেউ যে কোন কিছু করে ফেলতে পারে। যে কোন কাজের প্ল্যাটফর্ম তৈরির সাহস নিজের পরিবার যোগাতে পারে। একবার ফ্যামিলি থেকে সাহসী হয়ে উঠতে পারলে তারপরে বাইরের অনেক কিছু সহজেই অভারলুক করা যায়।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের বেশিরভাগ বড় বড় ইভেন্টের সাথে পার্সোনাকে দেখছি আমরা। বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে এখন পারসোনা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এটি কিভাবে সম্ভব হলো?

কানিজ আলমাস খান: আমাদের প্রতিষ্ঠান এখন যথেষ্ট সুগঠিত। আমরা যারা একসাথে কাজ করি। সবাই নিজের জায়গায় খুবই ডেডিকেটেড। এই সফলতার পেছনে বড় ক্রেডিট আমার কলিগদের। আমার বিরাট বাহিনী সবাই একসাথে কাজ করি। এর মধ্যে আমি তো একা। কাজটা আসলে আমার কলিগরাই করেন।

প্রশ্ন: মেয়েদের কাজের সুযোগ তৈরি করেছেন আপনি?

কানিজ আলমাস খান: হ্যাঁ। কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সবাই সাকসেসফুলি কাজ করছে। এটি একটি সফলতা আর সংগঠিত হয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর করে দাঁড় করিয়ে সেই প্রতিষ্ঠানকে তারা নিজের মনে করছে। নিজেদের জায়গাকে ভালবাসছে এবং সবকিছুকে নিজেদের মনে করছে এটি কিন্তু বড় ব্যাপার। আমি যেভাবে তাদের পথ দেখাই সেই পথেই তারা হাঁটে। আমার এই সফলতার পেছনে আমার কলিগরাই সব।

প্রশ্ন: দল নেতাকেও অবশ্যই যোগ্য হতে হয়, তা না হলে কি সম্ভব?

কানিজ আলমাস খান: আমি আমার যোগ্যতাকে বড় করে দেখতে চাই না। নিজের মত করে কাজ করি। আমার সহকর্মীদের মাঝে স্পিরিট ছড়িয়ে দেই। বাকী কাজটা তারাই ঠিকমতো এগিয়ে নিয়ে যায়- এই আর কি?

কানিজ আলমাস খাননারী উদ্যোক্তা