মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির ‘পরিবর্তে’ আসামি হিসেবে ৩ বছর ধরে কারাগারে থাকা আরমানের মামলার সকল নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। আজকের এই আদেশের কপি পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে ঢাকা মহানগর দায়রা জজকে হাইকোর্টে নথি দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবং আগামী ৬ মে এবিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এছাড়া আদালত আজ রুল জারি করেছেন। রুলে আরমানকে আটক রাখা কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবে না, তাকে কেন মুক্তি দেওয়া হবে না, তাকে হাইকোর্টে হাজির করার কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, ঢাকার পুলিশ সুপার, পল্লবী থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের ১০ দিনের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিষ্টার হুমায়ুন কবির পল্লব। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। এ বিষয়ে রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে রোববার হাইকোর্টে রিটটি করে ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল সহ আদেশ দিলেন।
গত ১৮ এপ্রিল ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরমানের মা এবং আরও কিছু সূত্রের বরাতে বলা হয়: ২০০৫ সালের ৩০ আগস্ট গভীর রাতে পল্লবীর ৬ নম্বর সেকশনের সি-ব্লকের ৮ নম্বর লেনের ৭ নম্বর ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ শাহাবুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এসময় শাহাবুদ্দিন ছাড়াও গ্রেপ্তার হয় তার দুই সহযোগী সোহেল মোল্লা ও মামুন ওরফে সাগর। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে পল্লবী থানায় মামলা করা হয়। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর এ মামলায় দুবছর জেল খেটে জামিন পান শাহাবুদ্দিন।
পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্বাক্ষরযুক্ত জামিননামার মাধ্যমে জামিন নেন তিনি। কিন্তু পরে আর আইনের মুখোমুখি না হয়ে ফেরারি হয়ে যান শাহাবুদ্দিন। অবশেষে ২০১২ সালের ১ অক্টোবর শাহাবুদ্দিন ও তার দুই সহযোগীর প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেন জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী ঢাকার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই সাথে পলাতক শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এরপর ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সকালে পল্লবী এলাকায় অভিযান চালায় পল্লবী থানা পুলিশ।
এসময় পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান বাসায় নাশতা সেরে পাশের একটি চায়ের দোকানে যান। সেখান থেকে তাকে আটক করে। এর তিন দিন পর থানার এক পুলিশ সদস্য গোপনে আরমানের মাকে জানান, আরমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এবং তাকে একটি মাদক মামলায় সাজা পরোয়ানাভুক্ত আসামি হিসেবে আদালতে সোপর্দ করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে আরমানের মা ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে আরমানকে মেঝেতে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান।
এরপর অসুস্থ অবস্থাতেই আরমানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (বকশীবাজার) নেয়া হয়। এরপর তাকে স্থানান্তর করা হয় কাশিমপুর কারাগারে। বর্তমানে আরমান কাশিমপুর কারাগারেই আছেন।আরমানের পরিবারের অভিযোগ: পুলিশের ভুলে অথবা গোপন কারসাজিতে শুধু পিতার নামে (মৃত ইয়াসিন) মিল থাকায় মৃত ইয়াসিন ওরফে মহিউদ্দিনের ছেলে শাহাবুদ্দিনের পরিবর্তে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে ‘নির্দোষ’ আরমান (৩৬) সাজা ভোগ করছেন।
অন্যদিকে প্রকৃত আসামি শাহাবুদ্দিন আরমানের বন্দিত্ব নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য লাগাতার চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। যে শাহাবুদ্দিন এর আগে ২০০৫ সালে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী হয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল।আরমানের স্ত্রীর বরাতে পত্রিকার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়: শাহাবুদ্দিন গত ২৭ মার্চ তার ছোট স্ত্রী চান্দাকে নিয়ে কাশিমপুর-২ নম্বর কারাগারে আরমানের সঙ্গে দেখা করেন এবং হুমকি দিয়ে বলেন, মামলা নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না করা হয়। ‘‘বাড়াবাড়ি করলে ডিবি, থানা-পুলিশ, উকিল সব কিন্তু ফাঁসবে। তারা ফাঁসলে তোমাকে ছাড়বে না।
আমার মামলায় তুমি জেল খাটছ, তাই আমিই তোমাকে বের করব। তোমার মাকে বলো, তোমার উকিলের কাছ থেকে যেন লিখিত নিয়ে আসে যে আমি এই মামলা আর পরিচালনা করব না। তোমাকে ছাড়াতে যা যা করার লাগে সব করব। আর বাড়াবাড়ি করলে পুলিশ সবার মাজায় রশি দিয়ে সব ধরে আনবে। তখন কিন্তু আমারে কিছু কইতে পারবা না।’’ হাইকোর্টে করা রিটে পত্রিকায় প্রকাশিত এ প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।