‘করোনাভাইরাসের কারণে চলচ্চিত্রের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ১৮ মার্চ থেকে সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হলে সরকারী সাহায্য প্রয়োজন। এছাড়া দেশের বড়বড় কোম্পানি আছে যাদের চলচ্চিত্রে সম্পৃক্তা ছিলনা তাদের এখন এগিয়ে আসতে হবে। যেসব দেশে চলচ্চিত্রে সম্পৃদ্ধ ওই দেশের লিডিং কোম্পানিগুলো সিনেমায় লগ্নি করছে। আমাদের দেশেও এই উদ্যোগ নেয়া উচিত। করোনায় ক্ষতি ও পরবর্তীতে আবার চলচ্চিত্রে ভালোভাবে কাজ শুরু করতে সরকারি বেসরকারি সবাইকে পাশে থাকতে হবে।’
কথাগুলো বলছিলেন চিত্রনায়ক নিরব হোসেন। চলমান করোনাভাইরাসে অন্যদের মধ্যে তিনিও দেড়মাস যাবৎ ঘরবন্দি। চলচ্চিত্রাভিনেতা হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতি আগামীর চলচ্চিত্রের যে অশুভ সংকেত তা কাটিয়ে ওঠা প্রসঙ্গে নিরব এসব কথা বলেন।
তার ভাষ্য, প্রায় ৫০ দিন ঘরে আছি। এখন উপলব্ধি একটা ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা। পরিবারের সঙ্গে পুরোটা সময় কেটেছে। গত ৫০ দিনে শুটিং, মিটিংগুলো খুব মিস করছি। ওই মানুষগুলো আমার পরিবারের বাইরে আরেকটা পরিবার, তাদের খুব মিস করছি।
নিরব বলেন, করোনার জন্য অকারণে আড্ডাবাজি বন্ধ হয়েছে, বাইরে ঘোরা বন্ধ হয়েছে। রোজার মাসে পরিবারের সাথে সেহেরি, ইফতার খাওয়া হচ্ছে। করোনায় সবকিছু একটা সিস্টেমের মধ্যে এসেছে।বাংলাদেশে করোনায় যে অবস্থা কমপক্ষে আরও দুমাস এভাবেই ঘরবন্দি থাকতে হবে। সরকার যেভাবে মেনে চলতে বলছে সেভাবেই থাকা উত্তম। চেষ্টা করছি সবকিছু মেনে চলার। নিজে ও নিজের পরিবারের সুরক্ষা করার। বাসায় অনলাইনে সময় কাটে বেশি, মুভি দেখি, করোনার আপটেড নিতে বিভিন্ন দেশের পত্রিকায় মাধ্যমে খোঁজ রাখি। দুই মেয়ের সাথে বেশি সময় কাটে। এছাড়া খুব বেশি পরিবর্তন খুঁজে পাইনি।
এদিকে একাধিক রোগে আক্রান্ত নিরবের মায়ের শরীরটা কয়েক বছর ধরে ভালো যাচ্ছে না। দুই বছর ধরে তার কিডনি ও ডায়াবেটিসের সমস্যা। ৬ বছর আগে করা হয় বাইপাস সার্জারি। এর মধ্যে গত নভেম্বরে আবার হার্টে স্ট্যান্ট পরানোও হয়। কয়েক মাস ধরে মাকে সপ্তাহে দুদিন ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে। করোনার এই সময়টায় মাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা এই নায়কের।
আগে যেখানে বোন আর দুই ভাই মিলে মাকে হাসাপাতালে নিয়ে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করানোর কাজটি করতেন, এখন তা করতে পারছেন না। নিরব বলেন, ড্রাইভার দিয়ে মাকে একা হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিয়ে মা হাসপাতালে যাচ্ছেন। ভয়ের কারণ হচ্ছে যে হাসপাতালে যাচ্ছে সেখানেও করোনা রোগী ধরা পড়েছে।
নিরব জানান, মায়ের এখন ডায়ালাইসিস করাতে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আগে শুটিং থাকুক কিংবা না থাকুক, মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হতো। আমি না যেতে পারলে ভাইয়া আর আপা যেতেন। ডায়ালাইসিসের পুরোটা সময় মায়ের পাশে থাকতাম কেউ না কেউ। এখন তা আর সম্ভব হচ্ছে না। আমি নিজেও বাসা থেকে বরে হতে পারছি না। বাসায় আমার দুটো ছোট মেয়ে। মাকে ড্রাইভার দিয়ে একা পাঠাতে হচ্ছে। কী যে এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছি, বলে বোঝাতে পারব না।
নিরব বলেন, মাকে একা ছাড়তে ইচ্ছা করে না। কিন্তু কিছুই করার নেই। মা–ও চাইছেন না আমরা কেউ যাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বেশ কঠোর এ ব্যাপারে। আগে যেমন উপস্থিতি অ্যালাউ করত, এখন তা করছে না। শুধু রোগীকে যা সেবা দরকার, তারা আন্তরিকভাবে দিচ্ছে।
করোনার এই সময়টায় যা নিয়ম মানা দরকার, তা মেনে চলছি। তবে আশায় বুক বেঁধে আছি একটা সুন্দর আগামীর জন্য।