গোলাম রাব্বানীর বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। ছাত্রলীগের বিদায়ী সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসাইনের কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। আর তার আগে এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সিদ্দিকী নাজমুল আলমের কমিটিতে উপ আন্তর্জাতিক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক ছিলেন।
গোলাম রাব্বানী পারিবারিকভাবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তার মা মরহুমা তাছলিমা বেগম ছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও স্থানীয় ইশিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম সামশুল হক মুন্সীর বড় মেয়ে। মরহুম সামশুল হক মুন্সী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর এবং শেখ পরিবারের একজন অন্যতম সুহৃদ। মাদারীপুর অঞ্চলে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় সামশুল হক মুন্সীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। গোলাম রাব্বানীর মা তাছলিমা বেগম ছিলেন রাজৈর কলেজ ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক (১৯৮৩-১৯৯১)।
তিনি নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও এ এলাকায় ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। গোলাম রাব্বানীর মা তাছলিমা বেগম গত ১৯ জুলাই আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। ছেলের বর্তমান অবস্থানটা তিনি দেখে যেতে পারেননি। আর গোলাম রাব্বানীর বাবা এম এ রশিদ আজাদ ভূমি মন্ত্রালয়ের অধীনে কারিগরি কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে ফরিদপুরে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি রাজৈর কেজেএস হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। গোলাম রাব্বানীর একমাত্র ছোট ভাই গোলাম রুহানী সবুজ ৩৫তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার মনোনীত হয়েছেন। এর আগে তিনি ৩৪তম বিসিএসে আনসার ক্যাডার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। পিতার চাকরির সুবাধে গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ীতে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন ঢাকার উত্তরা রাজউক মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখান থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হন। উত্তরা রাজউক মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনাকালে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এরপর ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে। সম্প্রতি নির্বাচনকালীন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন একান্ত সাক্ষাতকারে।
প্রশ্ন: ছাত্রসমাজের আশা আকাঙ্খা কী রাজনীতিবিদদের কাছে?
গোলাম রাব্বানী: ছাত্রসমাজ সবসময়ই চায় তাদের নৈতিক এবং যৌক্তিক যে দাবীগুলো রয়েছে তা যেনো অগ্রজ রাজনীতিবিদদের কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। এটি তাদের মূল চাওয়া।
প্রশ্ন: একজন ছাত্র হিসেবে আপনার কাছে জানতে চাই রাজনীতিবিদের কাছে সুনির্দিষ্ট চাওয়া কী আপনার?
গোলাম রাব্বানী: একজন ছাত্র হিসেবে প্রথমেই আমি চাই- আমার শিক্ষাজীবন যেনো বাধাহীন হয়। এটি আমার প্রথম চাওয়া। এই চাওয়া কিন্তু এই সরকার পূরণ করেছে। গেলো ১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি। ধর্মঘট হয়নি এবং সেশনজট নামের যে অভিশাপ তা ছিল না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এটি একজন ছাত্রের প্রথম চাওয়া। নিয়মিত এবং বাঁধাহীনভাবে শিক্ষা জীবন শেষ করা।
প্রশ্ন: কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়নি?
গোলাম রাব্বানী: না, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি। এই সরকারের সময়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকেনি। জীবনের নিশ্চয়তা এবং নিশ্চিত ক্যারিয়ার একজন ছাত্রের কাম্য। শিক্ষা জীবন শেষ করে এমন একটি জীবন চায় যেখানে তার পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত জীবন যেন নিরাপদ হয়। এর আগে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ৩/৪টি বিসিএস হয়েছে তার মধ্যে দুটি বাতিল হয়েছে দুর্নীতির কারণে। বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ থেকে ৪০ জনকে পুলিশ ক্যাডার দেওয়া হয়েছিল। যা একেবারেই হাস্যকর। এই সরকারের আমলে শেখ হাসিনা ৯টি বিসিএস করেছেন কোন অভিযোগ এবং সমস্যা ছাড়া।
প্রশ্ন: চাকরির বয়স ৩৫ করা নিয়ে আন্দোলনও দেখেছি। এই ব্যাপারে আপনার এবং ছাত্রলীগের বক্তব্য কী?
গোলাম রাব্বানী: কোটা আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরে আরেকটি আন্দোলন কিন্তু মাঠে গড়িয়েছিল তা হলো চাকরির বয়স ৩৫ নিয়ে। শুরুতেই আমি বলেছি- আমাদের ছাত্র সংগঠনের যে বয়সের সীমা রয়েছে ২৯। এতে করে ৪০ লাখ ছাত্রলীগ পরিবারই এর সুফল বেশি পাবে বলে মনে করি। তাই এই আন্দোলনের শুরুতেই আমি শাহবাগ গিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছি।
প্রশ্ন: আপনার সংগঠনের পক্ষ থেকে?
গোলাম রাব্বানী: জ্বী। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে। তাদের মুখপাত্রের সাথে আমরা কথা বলে তাদেরকে রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে গিয়েছি বঙ্গভবনে। তাদেরকে রাষ্ট্রপতির সাথে কথা বলিয়ে দিয়েছি এবং তাদের দাবির পয়েন্টগুলো রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছেন এবং তিনি আমাদের কথা দিয়েছিলেন, এই ব্যাপারটি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছেও একটি বই আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের মাধ্যমে পৌছে দিয়েছি। তাই বলতে চাই, ৩৫ চাকরির বয়সের পক্ষে নৈতিকভাবে ছাত্রলীগ সমর্থন করে।
প্রশ্ন: আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগ কী কাজ করছে?
গোলাম রাব্বানী: শুরু থেকে ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে যে কমিটি এসেছে একেবারে নির্বাচনের ঠিক আগে। আমরা ৩ মাস সময় পেয়েছি। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির কর্মপরিকল্পনা শুরু থেকেই নির্বাচনমুখি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের উপরে আস্থা রেখে যে পবিত্র দায়িত্ব দিয়েছেন সেই দায়িত্ব সব মেধা শ্রম দিয়ে পালন করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যেই সারা বাংলাদেশের জেলা ইউনিটগুলোর প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিদের নিয়ে সারা দিনব্যাপী বর্ধিত সভা করেছি নির্বাচন নিয়ে। সেখানে আমরা সারাদেশের সমস্ত নেতাকর্মীর কথা শুনেছি। যারা আছেন তাদের কী কী সমস্যা আছে। কী কী সাপোর্ট লাগবে? সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক এবং আবদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তারাও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রশ্ন: এই নির্বাচন নিয়ে আপনাদের প্ল্যান কী?
গোলাম রাব্বানী: নির্বাচনের সময় আমরা প্রথমত বিভাগ ভিত্তিক ৮টি বিভাগে প্রতিটি বিভাগে ২ জন করে ১৬ জন সমন্বয়ক দিয়েছি। যেমন ঢাকা বিভাগের দায়িত্বে আছেন তানভির এবং সুজন, তারা পুরো বিভাগ সমন্বয় করবেন। আর ৩০০ আসনে ৩০০ জন সমন্বয়ক দিচ্ছি। আজকে আমাদের খসড়া হয়ে গেছে। এদের আন্ডারে যারা আছেন সবাইকে নিয়ে নৌকার প্রাথীকে বিজয়ী করতে মাঠে কাজ করবে।
প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামী এখন নিবন্ধিত না। তারপরও তারা বিভিন্ন দলের বা জোটের হয়ে নির্বাচন করছেন। ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে এটাকে কিভাবে দেখেন?
গোলাম রাব্বানী: মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বাইরে এই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী একাত্তরের পুরনো শকুন বারবার জাতির পতাকা খামচে ধরবে তা কখনোই তরুণ ছাত্র সমাজ মেনে নিতে পারে না। ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা দেখেছি বারবার কিন্তু এখন আমরা সত্যিকারের ইতিহাস জানি। কিভাবে তারা আমাদের নিপীড়ন করেছিল। তাদের হয়ে যারা কথা বলে তাদেরকে যারা পুনর্বাসন করেছে। সেই শক্তি কিন্তু আবার এক হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বরণের পর জিয়াউর রহমান খুনীদের পুরষ্কৃত করলো চাকরি দিয়ে। বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিলো খুনীদের। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। সেই জোট এখনো আছে। বিএনপি এবং জামায়াত নয়নের অংশ যেমন নয়নের পাতা। একে অন্যের পরিপূরক তারা কিন্তু কখনো আলাদা হতে পারেনি।
প্রশ্ন: এই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আপনাদের ছাত্র সংগঠনের কি কোন কর্মসূচী থাকবে?
গোলাম রাব্বানী: মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির এই দেশে ভোট চাওয়ার অধিকার নেই। যারা বাংলাদেশ চায়নি, তারা ভোট চাইবে। দিস ইজ সো রেডিকিউলাস অ্যান্ড অ্যাবসার্ড। এই বিষয়টি আমরা মানুষকে বোঝাতে চাই। নির্বাচনে স্বাধীনতা বিরোধীদের ভোট না দিতে আমরা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবো।
ইতোমধ্যে আমরা ইউনিক একটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। ২০০১ সালে এবং তার পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে যে, সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে বাংলাদেশে- ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেওয়া ও হুমকি দেওয়া। একেবারে সুনির্দিষ্ট করে বাংলাদেশে ৫৫টি জায়গা আছে যেসব জায়গায় এই ধণের ঘটনা ঘটে। যেমন, বি. বাড়ীয়ার নাসির নগর। তাই নির্বাচনে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক প্রতিরোধ সেল গঠন করা হয়েছে। এর খসড়া হয়েছে গেছে। খুব শিগগিরই চূড়ান্ত হবে। যাতে সংখ্যালঘুদের ভোটের সময় নির্যাতন করা বা তাদেরকে কেউ ভোটকেন্দ্রে যেতে বাঁধা দিতে না পারে।