সাব্বিরের সেঞ্চুরির পরও নিউজিল্যান্ডের সহজ জয়

প্রথমসারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আবারও ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়া সাব্বির রহমান হারের ব্যবধানই কেবল কমাতে পারলেন। ৩৩১ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বাংলাদেশ সবকটি উইকেট হারিয়ে তোলে ২৪২, রয়ে যায় ১৬টি বল।

ডানেডিনে ৮৮ রানের হারে তিন ম্যাচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হল বাংলাদেশ। নেপিয়ার ও ক্রাইস্টচার্চে ৮ উইকেটে হেরে আগেই সিরিজ থেকে ছিটকে পড়ে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দল। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি হ্যামিল্টনে শুরু হবে টেস্ট সিরিজ। চলতি সফরে কিউইদের বিপক্ষে তিনটি টেস্ট খেলবে সাকিব আল হাসানের দল। চোটের কারণে ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন না এ অলরাউন্ডার।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে ৩৩১ রান তোলার চ্যালেঞ্জে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই পড়ে বিপর্যয়ে। দুই রানে ৩ উইকেট হারানো সফরকারীদের স্কোর কিছুক্ষণ পর হয়ে যায় ৬১/৫। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন সাব্বির। ১১০ বলে ১০২ রান করে থামে ১২টি চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি। দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে এ ডানহাতি যখন আউট হন, বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ২৪২। তখনই লেখা হয়ে যায় আরেকটি হোয়াইটওয়াশ। তাতে  নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয়ের স্বপ্ন অধরাই থাকল।

ওয়ানডেতে সাব্বিরের আগের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ৬৫, টেস্টে ৬৬, আর টি-টুয়েন্টিতে ৮০ রান। এবারই প্রথম তিন অঙ্ক ছুঁলেন। তিন ফরম্যাট মিলে একশর বেশি ম্যাচ খেলে পেলেন সেঞ্চুরির দেখা। ১০৯তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ আর ১১৩তম ইনিংসে ১০৫ বলে শতকে পৌঁছান।

সাব্বির ছাড়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সেঞ্চুরি আছে বাংলাদেশের কেবল দুই ব্যাটসম্যানের। ২০১৫ বিশ্বকাপে করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার আগে ২০১০ সালে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সেঞ্চুরি হাঁকান ইমরুল কায়েস।

তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা যেখানে দাঁড়াতেই পারছেন না সেখানে সাব্বির এদিন করলেন সাবলীল ব্যাটিং, খেললেন লম্বা ইনিংস। কঠিন কন্ডিশনকেই বানালেন সেঞ্চুরি উদযাপনের মঞ্চ।

৬১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর বড় জুটির দেখা পায় বাংলাদেশ। সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ব্যাটে ভদ্রস্থ হয় স্কোর। দুজনে গড়েন ১০১ রানের জুটি। সাইফউদ্দিন করেন ৪৪। মেহেদী হাসান মিরাজের ৩৪ বলে ৩৭ রানের ইনিংস হারের ব্যবধান কমাতে আর সাব্বিরকে সেঞ্চুরি পাইয়ে দিতে সহায়তা করে। মিরাজ সেঞ্চুরিয়ানকে দেন দারুণ সঙ্গ।

৩৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং নেমে নিউজিল্যান্ড পেসারদের গতির সঙ্গে সুইংয়ের বৈচিত্র্য বুঝতে হিমশিম খায় বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ৪০ রান তুলতেই হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। কিউই পেসার টিম সাউদি তার প্রথম ২ ওভারেই সাজঘরে পাঠিয়ে দেন তামিম ইকবাল (০), সৌম্য সরকার (০) ও লিটন দাসকে (১)। পরে আরও তিন উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। ৯.২ ওভারে ৬৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন দুই ম্যাচ পর একাদশে ফেরা এ ডানহাতি পেসার।

২ রান তুলতে তিন উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মিলে ধ্বংসস্তুপ থেকে দলকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। খানিকটা থিতু হয়ে মুশফিক সাজঘরে ফিরে যান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৩৮ রান।

ট্রেন্ট বোল্টের বলে কলিন মুনরোর হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে পাঁজরের চোট নিয়ে খেলা মুশফিক করেন ১৭ রান। ২৭ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চারের মার।

সাব্বিরের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর পঞ্চম জুটিটি ২১ রানের। কলিন গ্র্যান্ডহোমের বলে মুনরোর হাতেই ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৬ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় করেন ১৬ রান।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৩০ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নিলেও ছিলেন বেশ খরুচে। ১০ ওভারে দিয়েছেন ৯৩ রান।

ওয়ানডে ক্রিকেটে এমন কঠিন দিন আগে আসেনি এ বাঁহাতি পেসারের। তবে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান দেয়ার রেকর্ডটি শফিউল ইসলামের দখলেই থাকল। এ ডানহাতি পেসার ২০১০ সালে বার্মিংহামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ ওভারে দিয়েছিলেন ৯৭।

১০ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নিয়েছেন একটি উইকেট। এছাড়া মেহেদী হাসান মিরাজ ৯ ওভারে ৪৩, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ১০ ওভারে ৫১, রুবেল হোসেন ৯ ওভারে ৬৪ রান দিয়েছেন। প্রত্যেকেই শিকার করেছেন একটি করে উইকেট। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২ ওভার বোলিং করে দেন ২৮ রান।

এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নেয়া নিউজিল্যান্ড শেষ ম্যাচে আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পায়। শুরুতেই কলিন মুনরোকে (৮) এলবিডব্লিউ করে সাজঘরে ফিরিয়ে দেন মাশরাফী। দলীয় ফিফটি পেরিয়ে সাইফউদ্দিনের বলে তামিম ইকবালের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন মার্টিন গাপটিল। এ ডানহাতি ওপেনার ২৯ রান করেন ৪০ বল খেলে।

হেনরি নিকোলস ও রস টেলরের মাঝে গড়ে ওঠে ৯২ রানের দারুণ একটি জুটি। দলীয় দেড়শ পার করে মিরাজের বলে তামিমের ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন নিকোলস। এ বাঁহাতি করেন ৭৪ বলে ৬৪ রান। তার ইনিংসে ছিল ৭টি চারের মার।

দুইশ পার করে রুবেলের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দেন টেলর। এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান করেন কিউইদের সর্বোচ্চ ৬৯ রান। ৮২ বলের ইনিংসে চার মারেন ৭টি।

জেমস নিশাম ২৪ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলে কিউইদের রান তোলার গতি বাড়িয়ে মোস্তাফিজের বলে বোল্ড হন। ল্যাথাম সাজঘরে ফেরেন দলীয় রান তিনশর কাছাকাছি রেখে। ফিজের দ্বিতীয় শিকার হওয়া এ ব্যাটসম্যান ৫১ বলে করেন ৫৯ রান। হাঁকান ২টি চার ও ৩টি ছক্কা।

কলিন গ্র্যান্ডহোমের ১৫ বলে ৩৭ ও মিশেল স্যান্টেনারের ৯ বলে ১৬ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৩৩০ রানের বিশাল পুঁজি পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। দুই ব্যাটসম্যানই থাকেন অপরাজিত।

লিড স্পোর্টস