সাদমানের বাবার কাছে ‘সব ক্রিকেটারই সমান’

বাবা-ছেলের দূরত্ব ঘুচছে তাহলে

ছেলের টেস্ট অভিষেক হচ্ছে বাবার কর্মস্থলে! বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অফিস থেকেই দেখা যায় শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের সবুজ চত্ত্বর। সব ঠিক থাকলে শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ মাঠেই টেস্ট ক্যাপ পড়বেন সাদমান ইসলাম অনিক। বাবা শহিদুল ইসলাম ছেলের আন্তর্জাতিক অভিষেক দেখবেন কাচেঘেরা কক্ষে বসেই।

সাদমানের বাবা শহিদুল ইসলাম বিসিবির সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৯৯৮ সাল থেকে। ২০০৪ থেকে গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগে কর্মরত তিনি। বর্তমানে সহকারী ব্যবস্থাপক। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট পরিচালনা, ক্রিকেটার তুলে আনা এবং তাদের পরিচর্যা করে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত করা তার কাজের অংশ। যে প্রক্রিয়ার অধীনে সাদমান ছিলেন পাঁচ বছর।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

অবাক করা ব্যাপার হল, ক্রিকেট বোর্ডের অনেকেই জানেন না ক্রিকেটার সাদমান শহিদুলের সন্তান। মাশরাফী-সাকিবরাও জেনে অবাক হয়েছেন, আপনার ছেলে ক্রিকেট খেলে কখনোই বলেননি!

সাদমান বাংলাদেশের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলছেন ২০১৪ সালে। নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সেই আসরে হন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তখন সাদমানকে নিয়ে বেশ হইচই হয়েছিল। সম্ভাবনাময় এ বাঁ-হাতি ওপেনার বাংলাদেশ দলে খেলবেন তা; অনুমেয় ছিল। কিন্তু জাতীয় দলের ঠিকানা খুঁজে পেতে এতটা সময় লেগে যাবে সেটি ছিল অভাবনীয়।

বিসিবির নির্বাচকদের সঙ্গে সাদমানের বাবা শহিদুল ইসলাম

বাংলাদেশ ‘এ’ দল, এইচপি দল, বিসিবি একাদশ হয়ে সাদমান টেস্ট দলে জায়গা পেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে। চার বছরেও বেশি সময় বাবার বিভাগের ছাত্র ছিলেন সাদমান। অথচ মাঠে বাবা-ছেলে দূরত্ব রাখার চেষ্টা করে গেছেন শুরু থেকেই।

চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে শহিদুল ইসলাম জানালেন কেন বাবা-ছেলের সম্পর্ক ক্রিকেটের মানুষদের জানতে ও বুঝতে দেননি এতদিন।

‘আমি বিসিবিতে কাজ করি বিধায় অন্য ক্রিকেটাররা ভাবতে পারে সাদমান বেশি সুবিধা পাবে বা বাবা হিসেবে আমি বাড়তি সুবিধা দেব। কখনো বিন্দুমাত্র সে চেষ্টা আমি করিনি। সাদমানকে একটা কথাই বলেছি, নিজ যোগ্যতায় দলে আসতে পারলে আসবা। ক্রিকেটীয় দক্ষতায় যদি অন্য কেউ ১৯ হয় তোমার ২০ হতে হবে। এক ধাপ এগিয়ে থাকতে হবে। কোনো ক্রিকেটার যেন ভুল ভেবে আশাহত না হয় সেজন্য দূরত্ব রেখেছি। ঘরে আমরা বন্ধুর মতো কিন্তু অন দ্য ফিল্ড আমাদের মাঝে অনেক দূরত্ব।’

‘২০১৪ সালে বাংলাদেশ যখন যুব বিশ্বকাপ খেলে এল তখনও কেউ জানত না সাদমান আমার সন্তান। আমার বিভাগের কেউ কেউ জানত কিন্তু বিসিবির অন্য বিভাগের তেমন কেউ জানত না। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যাতে প্রভাব না পড়ে সেটি চেয়েছি সবসময়।’

সাদমান ইসলাম অনিক

গেম ডেভেলপমেন্টের অধীনে বিভিন্ন জায়গায় খেলেই ধীরে ধীরে বিশ্বতারকা হয়েছেন সাকিব-মাশরাফীরা। লিটন-মোসাদ্দেক-মিরাজ-সাদমানদেরও শুরু বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলে। তবে কখনোই কাউকে আলাদা চোখে দেখেননি; গর্ব করেই সে কথা জানালেন শহিদুল।

‘ডাক্তারের কাছে যেমন সব রোগী সমান আমার কাছেও সব ছেলে সমান। সাদমান বাংলাদেশ দলে খেলবে সেজন্য বাড়তি কোনো উচ্ছ্বাস আমার কাজ করছে না। মাশরাফী, সাকিব ওদের শুরুতে দেখে যেরকম লেগেছে মিরাজ, সৈকতদের ক্ষেত্রেও তাই। এখনো ওরা সবাই অবাক হয়ে যায়। বলে, আপনার ছেলে খেলছে! কত কথা হয় আপনার সঙ্গে অথচ আপনার ছেলে খেলছে সেটিই কখনো বলেননি!’

‘বাবা হিসেবে গর্ববোধ করি ছেলে টেস্ট খেলবে। ও (সাদমান) আমার স্টুডেন্ট যেহেতু…ওর ব্যাচে আরও যে বাচ্চারা আছে শান্ত, মিরাজ, লিটন সবাইকে আমি সমান চোখে দেখি। একটা কথাই সবাইকে বলি; বাবা তোমরা খেল। মন-প্রাণ দিয়ে খেল। অন্তত ৫টা বছর দলে থাক। ঢুকলাম বের হলাম, এমন যেন না হয়।’

এবার জাতীয় লিগে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে সাদমান সুযোগ পান বিসিবি একাদশের হয়ে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে চট্টগ্রামে দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের ২২ গজে ১৬৯ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলে কোচ-নির্বাচকদের আস্থা নিয়ে তৃতীয় ওপেনার হিসেবে চলে আসেন সিরিজের প্রথম টেস্টের দলে।

কাঁধে চোট থাকায় ওপেনার ইমরুল কায়েস মিরপুর টেস্টের দল থেকে ছিটকে যাওয়ায় সৌম্য সরকারের সঙ্গে সাদমানেরই নামার কথা উইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে।

অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কথা কান পেতে শুনছেন সাদমান

বাবার চোখে সন্তানের বিশেষ গুণ

‘বাংলাদেশ যখন টেস্ট ক্রিকেট শুরু করে একটা সময় আমাদের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। তখন ২-৩ দিনের বেশি আমরা খেলতে পারতাম না। বোর্ড থেকে বলা হতো, ৩ দিন খেলতে পারলে ক্রিকেটারদের বোনাস দেয়া হবে। তখন বিসিবি থেকে আমরা অনুভব করতাম নিজের উইকেটের মূল্য বোঝে এমন ক্রিকেটার দরকার। সাদমানের মাঝে যেটা ইতিবাচক হলো, ও উইকেটের মূল্য বোঝে। ভ্যালু অব রান ও ভ্যালু অব উইকেট, দুইটা ভিন্ন জিনিস। উইকেট নষ্ট করা যাবে না বা বোলারকে উপহার দেয়া যাবে না, তখন থেকেই সাদমানকে বলে এসেছি। যেটি ও এখন নিজেই বুঝতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল ওর শৃঙ্খল জীবন। কখনোই বাজে আড্ডায় সময় দেয়নি। সময়ের কাজ সময়ে করার ব্যাপারটি ওর মধ্যে আছে। ক্রিকেট ডিসিপ্লিনের খেলা, যেটা ও নিজেও বিশ্বাস করে।’

গোপীবাগে বড় হওয়া শহিদুল ইসলাম ছিলেন ক্যাডেট কলেজের ছাত্র। সবধরনের খেলাধুলাই করেছেন ছাত্রজীবনে। দ্বিতীয় বিভাগ লিগ খেলেছেন ক্রিকেট, ফুটবল ও হ্যান্ডবলে।

বড় পরীক্ষায় নামার আগে ব্যাটের সঙ্গেই নিজের কথা সেরে নিচ্ছেন সাদমান!

সাদমানেরও ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক ছোটবেলা থেকে। পড়াশোনাতেও ছিলেন ভালো। একদিন গৃহশিক্ষক জানান, সাদমান ভাল ক্রিকেট খেলে। পরে ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করান বাবা। নানা ধাপ পেরিয়ে ২৩ বছর বয়সী সাদমান এখন স্বপ্নপূরণের পথে।

সাদমান ইসলাম অনিকস্পোর্টস বিশেষ