হত্যার কারণ সাংবাদিকতা নাকি পারিবারিক বিরোধ?

সাংবাদিক সুবর্ণা নদী হত্যা

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি সুবর্ণা আক্তার নদী (৩২) হত্যায় পরিবারের পক্ষ থেকে তার সাবেক স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, তারা পেশাগত এবং পারিবারিক বিরোধসহ নানান দিক খতিয়ে দেখছে।

পুলিশের ভাষ্য, তাদের হাতে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কয়েকটি কারণ থাকলেও স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সাথে মামলা নিয়ে চলমান বিরোধকেই অন্যতম কারণ বলে মনে করছে তারা। তাই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সে বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিয়ে এগোবে পুলিশ। তবে তদন্ত করতে গিয়ে অন্য কেনো বিষয় বেরিয়ে আসলে বা ঘটনা নতুন দিকে মোড় নিলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখবে তারা।

পুলিশ জানিয়েছে, সুবর্ণা যে দুটি মামলা করেছিলেন তাতে স্বামী ও শ্বশুরকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা যৌতুক মামলা আদালতে বিচারাধীন।

সুবর্ণার বোন চম্পা খাতুনের স্বামী জিয়া চ্যানেল অাই অনলাইনকে বলেন: মঙ্গলবার এ মামলার সাক্ষ্য দেয়ার দিন ছিল। এতে সুবর্ণা তার পক্ষে আদালতে সাক্ষ্যও উপস্থাপন করেন। সেজন্য সুবর্ণার পরিবারের জোরালো দাবি মামলায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় তার সাবেক স্বামী রাজীব ও শ্বশুর আবুল হোসেন পরিকল্পিতভাবে সুবর্ণাকে হত্যা করেছে।

আরেকটি মামলা সুবর্ণাকে মারধরের। এছাড়া সুবর্ণা থানায় অন্য কাউকে অভিযুক্ত করে আর কোনো মামলা দায়ের করেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, আবুল হোসেনের ছেলে রাজীবের সাথে বছর চারেক আগে বিয়ে হয় সুবর্ণার। রাজীব ছিল সুবর্ণার দ্বিতীয় স্বামী। বছরখানেক আগে রাজীবের সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

এরপরই সুবর্ণা তার সাবেক স্বামী রাজীব ও তার শ্বশুর আবুল হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন।

মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টায় নিজ বাসার সামনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি সুবর্ণা নদীকে কুপিয়ে হত্যার করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ নিহতের সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে আটক করেছে।

পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান চ্যানেল অাই অনলাইন কে জানান: পাবনা পৌর সদরের রাধানগর মহল্লায় আদর্শ গার্লস হাইস্কুলের সামনে ভাড়া বাসায় মা ও সাত বছরের একমাত্র  মেয়ে জান্নাতুল রোশনী জান্নাতকে নিয়ে বাস করতেন সুবর্ণা। রোশনী সুবর্ণার আগের ঘরের সন্তান।

‘মঙ্গলবার রাত সোয়া দশটার দিকে নিজ কর্মস্থেল থেকে বাসায় ফিরে কলিংবেল চাপ দেয়া মাত্রই দুবৃত্তরা পেছন থেকে এসে উপর্যুপরি সুবর্ণাকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেউ না থাকায় মৃত্যুর পূর্বে সুবর্ণা তার বোন এবং মাকে যা বলেছেন সে কথার ভিত্তি ধরেই পুলিশ অনুমান করছে আক্রমণকারীর সংখ্যা ২ থেকে ৪ জন। তাদের মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিলো এবং তারা খুব দ্রুততম সময়ে সুবর্ণাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।’

তাৎক্ষণিক সুবর্ণাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ পাবনার ইদ্রাল ইউনানি কোম্পানি ও শিমলা ডায়াগনস্টিকের মালিক সুবর্ণার শ্বশুর আবুল হোসেনকে আটক করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সুবর্ণা নদী আনন্দ টিভির পাশাপাশি দৈনিক জাগ্রতবাংলা নামে একটি অনলাইন পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন। তিনি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত গ্রামের মৃত আয়ুব আলীর মেয়ে।

নারী সাংবাদিকপাবনালিড নিউজসুবর্ণাহত্যাকাণ্ড