অপরাধীদের বিচার করে সাঁওতালদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা হোক

গত বছর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে আগুন লাগানোর ঘটনায় স্থানীয়দের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জড়িত ছিল বলে বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। তার ওই প্রতিবেদনের বরাতে দেশের প্রায় সবগুলো গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বলেছে, আগুন লাগানোর ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিনজন সদস্য জড়িত ছিলো বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের দুইজন পুলিশ এবং একজন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য। জনগণের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাষ্ট্রের অন্যতম একটি বাহিনীর সহায়তায় কিভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা আর্থ-সামাজিক মানদণ্ডে সবদিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল একটি নৃগোষ্ঠিকে নির্মমভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেই চিত্র উঠে এসেছে ৬৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে। যা ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়েছে। গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেয়ার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত এমন একটি প্রতিবেদন প্রথম প্রচার করে একটি  আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। তাতে দেখা যায়, পুলিশের পোশাক পরা অনেক সদস্যের উপস্থিতিতে একাধিক ব্যক্তি আগুন দিচ্ছে সাঁওতালদের ঘরে। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, সমালোচনার ঝড় ওঠে বিভিন্ন মহলে। এরপর গত ১৪ ডিসেম্বর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিমকে বিষয়টি তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। আমরা জানি, গত বছরের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে  সংঘর্ষে তিনজন সাঁওতাল নিহত হন। তাতে আহত হয় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় সাঁওতালদের বাড়ি-ঘর। যদিও ঘটনার পরপরই গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা সাঁওতালদেরকে ঘটনার জন্য দোষারোপ করে। ক্ষতিগ্রস্থ সাঁওতালদের মামলা না নিয়ে উল্টো আসামী করা হয় তাদেরকেই। এমনকি চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই সাওঁতালকে আটক করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ। গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার কথা উঠে এলেও তাদের নাম-ঠিকানা নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি ঘটনার দিন সেখানে দায়িত্ব পালন করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নামের তালিকা চাওয়া হলেও পুলিশ সুপার সেটি দেননি বলেও বিচারিক তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা মনেকরি, সেই তালিকা না দিয়ে পুলিশ সুপার প্রচ্ছন্নভাবে অপরাধীদের আড়াল করার অপচেষ্টা করেছেন। এ জন্য তাকেও জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা প্রয়োজন। আমরা দেখেছি ঘটনার পর থেকে এভাবেই সাঁওতাল পল্লীতে হামলাকারীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে প্রশাসনের একটি অংশ। যাদেরকে আজ পর্যন্তও শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। অথচ গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনেক ছবিতেই স্পষ্ট দেখা গেছে কারা সেখানে আগুন লাগিয়েছিলো। আমরা বলতে চাই, অপরাধীকে অাড়াল রাখার অপচেষ্টা না করে দ্রুত তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করে আতঙ্কিত সাঁওতালদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা হোক। জনগনের সামনে ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক