করোনা মহামারিসহ পূর্বসূরির রেখে যাওয়া নানান সমস্যায় ধুকতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে ৪৬তম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ নিতে যাচ্ছেন জো বাইডেন।
গত নভেম্বরে নির্বাচনের পর থেকে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবির নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিবেন।
ইতিহাসে নতুন অধ্যায়
এই ঘটনা হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়। সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হবেন জো বাইডেন। গত নভেম্বরে তার বয়স ৭৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। এর আগে দেশটির বয়স্ক প্রেসিডেন্টের রেকর্ড ছিল বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
ওবামা প্রশাসনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবার তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেয়েছেন একজন নারীকে। সেটিও একটি ইতিহাস। কারণ কমলা হ্যারিস দেশটির প্রথম নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। আজ তারা দুজন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৯তম প্রেসিডেন্সিয়াল শপথ অনুষ্ঠানে শপথ নেবেন।
সামনে কঠিন সময়
তারা এমন এক কঠিন সময়ে শপথ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন- যখন যুক্তরাষ্ট্র করোনা মহামারিতে আক্রান্ত শীর্ষ দেশ। অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব, সীমান্ত ও অভিবাসন সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। তার ওপর মার্কিন ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে গেছে কয়েকদিন আগে। ২০০ বছর পর এই প্রথম কংগ্রেস ভবনে দাঙ্গা হয়েছে। ট্রাম্প শিবিরের আক্রমণে কলঙ্কিত হয়েছে কংগ্রেস ভবন।
গত ৬ জানুয়ারির সেই দাঙ্গার পর সতর্ক আমেরিকা, সতর্ক জো বাইডেন প্রশাসন এবং ডেমোক্র্যাট দলও। তাই শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত বাহিনী। শুধু তাই নয়, ক্যাপিটল হিলে তোলা হয়েছে কাঁটাতারের বেস্টনি।
বাইডেনের বৈচিত্র্যময় জীবন
জো বাইডেনের জীবন বৈচিত্র্যময়। বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী তিনি। বাইডেন বহুবার হেরেছেন। কিন্তু মানসিকভাবে হারেননি। হারিয়েছেন পরম প্রিয় আপনজনদের। কিন্তু নিজেকে হারাতে দেননি। তাই তো ৭৮ বছরে যেখানে মানুষ মৃত্যুর ক্ষণ গণনা করেন সেখানে তিনি গ্রহণ করছেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব।
বাইডেনের জন্ম ১৯৪২ সালে পেনসিলভেনিয়ার স্ক্রাটনে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় বাইডেন পরে স্ক্রাটন ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে ডেলাওয়ারে চলে আসেন। বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র আর আইরিশ বংশোদ্ভূত মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান।
বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন
ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন বাইডেন। পরে তিনি আইন বিষয়ে পড়ালেখা করেন। ১৯৬৬ সালে বিয়ে করেন নিলিয়া হান্টারকে। কিন্তু এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া মারা যান। মেয়েও সেদিন মারা যান। এরপর ভেঙে পড়েছিলেন চরমভাবে। তবে পরে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন আবার। পদাচারণা করেছেন রাজনীতিতে।
সিনেটর হিসেবে শুরু
১৯৭২ থেকে মাত্র ২৯ বছর বয়সে ডেলাওয়ারের মার্কিন সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন বাইডেন৷তার সেনেটর জীবন ৩৬ বছরের। তরুণ বয়সেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের দৌঁড়ে নামতে গিয়েও থেমে যেতে হয় তাকে। লেখা চুরির ঘটনায় দায় শিকার করে নিজের অবস্থান ছেড়ে দেন। তবে বিরতির পর আবারও ফিরে আসেন। ওবামার সঙ্গে নেমেছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তবে ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন তিনি। যদিও ওবামা তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাাইডেনকেই তার ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়েছিলেন সেবার।
২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ওবামা আমলে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি৷ বারাক ওবামার খুব বিশ্বস্ত সহকর্মী ছিলেন বাইডেন। এরপরও তিনি চেষ্টা করেছেন প্রেসিডেন্ট হতে। সেবারও হয়নি। সর্বশেষ তিনি মহামারীর কঠিন সময়েই আমেরিকার দায়িত্ব পেয়েছেন।
আলোর পথে যাত্রা
প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ের শুরু থেকে বাইডেনের বক্তব্য ছিল, অন্ধকারের পথ বর্জন করা। দেশকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে লড়াইয়ের স্লোগান। সেই পথেই তিনি এগিয়ে গেছেন। এখনো একই বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই নিজ বক্তব্যে ঐক্যের ডাক দেন বাইডেন। বলেছেন, তিনি ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান দলের নয়, সকল মার্কিন নাগরিকের প্রেসিডেন্ট; যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।