জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা অর্থমন্ত্রীকে যে ভাষায় সমালোচনা করেছেন, তা অগণতান্ত্রিক ছিল বলে দাবি করেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সংসদের পর সচিবালয়ে তিনি আবারও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেন: সংসদে তারা (জাপা ও বিএনপির সংসদ সদস্য) যে ভাষায় কথা বলেছে তা গণতন্ত্রের ভাষা না। তারা আমাদের (সরকারের) কাজ পছন্দ করে না। একজন বলেছেন আমি ‘ব্যবসায়ী মন্ত্রী’! আমি ব্যবসায়ী ছিলাম আবার ভালো ছাত্রও ছিলাম। আমি একজন সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ (সিএ)।
একটা সময় ব্যবসা করলেও ১২ বছর ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে দূরে রয়েছেন বলে এসময় দাবি করে ব্যবসা করা অপরাধ না বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করতে সরকার স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত তহবিল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, সে সংক্রান্ত বিল পাস নিয়ে গতকাল (বুধবার) উত্তপ্ত ছিলো জাতীয় সংসদ।
বিরোধীদল জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির সাংসদেরা এ বিলের বিরোধীতায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে অভিযোগ করেন: শেয়ারবাজার, ব্যাংক খাত ধ্বংস হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী এখন বিভিন্ন স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দিয়েছেন।
বিল পাসের পক্ষে অর্থমন্ত্রীর অবস্থান এবং বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের জবাব পাল্টা জবাবের রেশ ছড়িয়েছে সর্বত্র।
বৃহস্পতিবার সীমিত সময়ের নোটিশে সংবাদ সম্মেলন ডাকে অর্থ মন্ত্রণালয়। জানানো হয় ‘সহজে ব্যবসা করার সূচক- ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন অর্থমন্ত্রী।
তবে পুরো সংবাদ সম্মেলন জুড়ে ছিলো সংসদে গতকাল ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান বিল-২০২০’ পাস ইস্যু। এ বিলের ওপর আলোচনা প্রস্তাবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিজের অবস্থান আরেকবার পরিষ্কার করেন তিনি।
এসময় গতকাল বিরোধীদের সমালোচনার মুখে কিছু সময়ের জন্য মেজাজ হারানোর কথা স্বীকার করেন আ হ ম মোস্তফা কামাল। বলেন: আমি কখনও মেজাজ হারাই না। গতকাল কিছু সময়ের জন্য মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিলাম।
বুধবার সংসদে বিরোধীদলের সাংসদরা অর্থপচারের যে পরিমাণগত বক্তব্য দিয়েছেন তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, বিরোধীদের এমন বক্তব্যে দেশবাসী বিভ্রান্ত হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
বিলের সমর্থনে অর্থমন্ত্রী তার অবস্থান আরও একবার পরিস্কার করে বলেন: অর্থ সংকটের জন্য নয়, ন্যূনতম শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করতে সরকার স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত তহবিল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বুধবার আলোচিত এ বিলটির ওপর আলোচনা শুরু হলে বিরোধীরা অভিযোগ করেন: এভাবে টাকা নিলে ব্যাংকে টাকা থাকবে না। শেয়ারবাজার, ব্যাংক খাতে লুট হয়েছে। এখন চোখ গেছে এসব প্রতিষ্ঠানের দিকে। ব্যাংকে মানুষের যে টাকা, কয়েক দিন পর হয়তো সেটাও নিয়ে নেওয়া হবে। টাকার মালিক জনগণ। পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার, টাকা পাচার বন্ধ করা এবং ব্যাংকিং খাতের দিকে নজর দেওয়ার জন্য তারা অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন।
বিলের বিরোধীতায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ, জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সাংসদ ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু, রুমিন ফারহানা, শামীম হায়দার পাটোয়ারীসহ অনেকে।
সকালে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী। বিডিবিএল ভবনে অনুষ্ঠানে ব্যাংকারদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন: মুজিব বর্ষে সবাই আন্তরিক থাকবেন যাতে খেলাপী ঋণে কমিয়ে আনা যায়।
৬১টি প্রতিষ্ঠান হলো
জাতীয় কারিকুলাম এবং টেক্সটবুক বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, ‘ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, দিনাজপুর’ উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), পল্লী উন্নয়ন একাডেমি-বগুড়া, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সেরিকালচার বোর্ড, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি), বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ চা বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
এছাড়াও রয়েছে: বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), চট্টগ্রাম ওয়াসা, ঢাকা ওয়াসা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন,বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক), জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।