বারবার নাকচ করে দেওয়ার পরও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে বসেছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর আগেরবারের মতোই অনেকটা নাটকীয়ভাবে নতুন করে সংলাপের কথা জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রোববার তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রী গতকাল বলেছেন, যাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে তাদেরকে নিমন্ত্রণ করবেন।’ অথচ একদিন আগেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জাতীয় সংলাপের আহ্বানকে ‘হাস্যকর ও মামা বাড়ির আবদার’ বলে নাকচ করে দিয়েছিলেন কাদের।
আমরা জানি, গত বছরের ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ চারটি দলের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করে। সেই জোটই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলোচনা করতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে চিঠি দেয়। তার উত্তরে গণভবনে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রী।
এরই মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিঙ্কুশ জয়ের পর টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে। তবে ওই নির্বাচনে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ৮টি আসন পাওয়া ঐক্যফ্রন্ট শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের দাবি এ নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। এরই মধ্যে নতুন করে আন্দোলনের কর্মসূচিও দিয়েছে সংগঠনটি।
আমরা দেখেছি, নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতনের পর পরের বছর ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফিরে আসে। তারপর থেকে বেশ কয়েকবার রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দাবি নিয়ে সংলাপে বসেছে। সেসব সংলাপের বেশিরভাগই ফলাফল ছাড়াই শেষ হলেও রাজনীতিতে একে অন্যের ‘শত্রু’ হিসেবে পরিচিত দলগুলোর মধ্যে একরকম খোলামেলা আলোচনার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল।
সর্বোপরি, রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার টেবিলে বসছে, সেটাও কম অর্জন নয়। কেননা, আলোচনার মাধ্যমেই বড় বড় সংকট সমাধানের বহু নজির রাজনীতির ইতিহাসে রয়েছে। আর আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান গণতন্ত্রের অন্যতম উপায়।
আমরা মনে করি, নতুন এ সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো খোলামন নিয়ে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে সমস্যার সমাধান করবে। অর্থবহ সংলাপই হবে সবার জন্য শান্তি আর মঙ্গলের।