১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। এরপর ১৯৮৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। খালেদা জিয়া ২০১৮ থেকে কারাবন্দি ছিলেন দুর্নীতি মামলায়। পরবর্তীতে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান তিনি। বর্তমানে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় অবস্থান করছেন। এ বছর খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কাটা হলো না। তবে খালেদা জিয়ার আরোগ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে দোয়া ও মাহফিল করবে দলটি। কিন্তু কেন এই দোয়া মাহফিল? বেগম খালেদা জিয়া কি এই দিনে জন্মেছিলেন?
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার পাঁচ পাঁচটি জন্মদিনের উল্লেখ পাওয়া গেছে৷ ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ তারিখে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সরকারি বার্তা সংস্থা- বাসস থেকে প্রেরিত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবনীতে তার জন্মদিন উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৪৫ সালের ১৯ আগস্ট। ম্যাট্রিক পরীক্ষার মার্কশিট অনুসারে তার জন্মদিন ছিল ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। বিয়ের কাবিননামায় ১৯৪৪ সালের ৯ আগস্ট। পাসপোর্ট অনুসারে তার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ আগস্ট। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ভোটারের তথ্য বিবরণী ফরমে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উল্লেখ করা হয় ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর দৈনিক বাংলায় বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন হিসেবে ১৯৪৫ সালের ১৯ আগস্ট উল্লেখ করা হলেও ১৯৯৩ সালে তার জন্মদিন ১৫ আগস্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৯৯৩ সালের ১৫ আগস্ট থেকেই বেগম জিয়ার জন্মদিন পালন শুরু হয়। কেন এর আগে কি দলীয় ও পারিবারিকভাবে তার জন্মদিন পালিত হয়নি?হলে তা কত তারিখে?
বিএনপি বিরোধী দলে যাওয়ার পরও বেগম খালেদা জিয়ার ১৫ আগস্টে কেক কেটে জন্মদিন পালন হতে থাকে। জানা যায় একজন যুবদল নেতা ও বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে তিনি এ জন্মদিন পালনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কে এই যুবদল নেতা ও বুদ্ধিজীবী। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে জাতীয় শোক দিবসে আনন্দ হতে থাকে। বিএনপি, ছাত্রদল, মহিলা দল, যুবদল জন্মদিনের আনন্দ করতে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে শোকের দিনে আলোচনা সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে যেতে থাকে। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যার দিনে এমন ভুয়া জন্মদিন কি কোন মানবিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে?
প্রতিটি গ্রামেই গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব থাকে৷ কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর কেউ মারা গেলে সবাই প্রতিদ্বন্দিতা ভুলে শোক জানাতে ছুটে যায়। অথচ এসব মানবিক রীতির একমাত্র ব্যতিক্রম হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু। মুজিব হত্যার পর পশ্চিম জার্মানীর নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নেতা উইলী ব্র্যান্ট বলেছিলেন, বাঙালীদের আর বিশ্বাস করা যায়না। যে বাঙালী মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা আরও জঘন্য কাজ করতে পারে। মুজিব হত্যাকে ঘিরে বাঙালীদের এমনই একটি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল সারা পৃথিবীতে। এই নেতিবাচকতার আরও একটি কারণ কি শোক দিবসে ভুয়া জন্মদিন পালনও নয়? এটা কি আরও একটি জঘন্য অপকর্মের সংযোজন নয়? আসলে বেগম খালেদা জিয়ার আসল জন্মদিন কবে? দেশবাসীর সামনে এই ধূম্রজাল দূর করতে জন্মদানের সত্যতা অসত্যতা যাচাই কমিটি করা হোক। নিরপেক্ষ গবেষকরা এ উদ্যোগ নিতে পারেন৷
কেন মার্কসিটে, বিয়ের কাবিনে, পাসপোর্টে, ভোটারের তথ্য বিবরনীতে ও সংবাদ পত্রের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জন্মদিনের ভিন্নতা। তাও কোন সাধারন মানুষের নয় একটি বৃহৎ দলের প্রধানের ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর। এই ধূম্রজালের অবসান আবশ্যক নয় কি? এক ব্যক্তি একদিনেই জন্মগ্রহন করবেন এটাই মানবিক প্রকৃতি। ৫ দিনে জন্মগ্রহণ কোন অবতারের পক্ষেও সম্ভব নয়। হযরত মুহম্মদ(সাঃ), যিশু খ্রীষ্ট, শ্রীকৃষ্ণ, গৌতম বুদ্ধ সকলেই একবারই জন্মেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া ৫ বার জন্মেছেন তা নিশ্চয়ই সত্য হতে পারেনা। তাই আমাদের দাবী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনের সত্যতা অসত্যতা যাচাই কমিটি করে এই বিতর্কের অবসান ঘটানো হোক।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)