দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে তা দেশের জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। দুর্নীতি যখন একটি দূরারোগ্য নিরব ঘাতকের মতো রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশে প্রায় স্থায়ী রুপ নেবার পথে, তখন এই অভিযান ‘ম্যাজিক্যাল টনিক’ এর মতো কাজ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সফরে যাবার আগে এ শুদ্ধি অভিযানের সূচনা করে দিয়ে যান। তারপরে দলমত নির্বিশেষে চলা ওই শুদ্ধি অভিযান একমাস পূর্ণ করেছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে চালানো অভিযানের মাধ্যমে শুরু ওই বিশেষ অভিযানে সরাসরি দায়িত্ব পালন করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাবকে সহায়তা করছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
র্যাবের তথ্যমতে গত এক মাসের অভিযানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মোট ২৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, এর মধ্যে ১১টি মামলার তদন্ত করছে র্যাব। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার দু’টি, জি কে শামীমের দু’টি, শফিকুল আলম ফিরোজের দু’টি, ফুয়াং ক্লাবের দু’টি, সেলিম প্রধানের একটি ও সম্রাটের দু’টি মামলার তদন্তভার পেয়েছে র্যাব। এসবের ফলে জনমনে দারুণ আস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
তবে অভিযান শুরু হবার দুয়েকদিনের মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমসহ নানা ক্ষেত্রে অভিযানের স্থায়ীত্ব নিয়ে সন্দেহ ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই শুদ্ধি অভিযান যেহেতু শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীনদের ঘর থেকে, সেজন্যই হয়তো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে মর্মে জনমনে এসব সন্দেহ। যদিও প্রধানমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন দায়িত্বশীল মন্ত্রী এই অভিযানের ভবিষ্যত ও কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন আজও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এই অভিযান অব্যাহত করতেই হবে। আমি শুদ্ধি অভিযান বলব না, আমি বলব দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান। দুর্নীতিবাজ দুর্নীতি আর দখলবাজরা দখলের চিন্তা যতদিন করবে; ততদিন এই অভিযান চলবে। আপনারা দেখছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। আমরা অবশ্যই টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজদের কন্ট্রোলে নিয়ে আসব। প্রধানমন্ত্রী গত মেয়াদে বলেছিলেন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দূর করবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসকে তিনি দূর করে দিয়েছেন।’
এই মূহুর্তে প্রধানমন্ত্রীসহ দায়িত্বশীলদের কথার প্রতি বিশ্বাস রেখে পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তবে একটি জিনিস খেয়াল রাখা জরুরি যে, দুর্নীতিবাজ-কূচক্রীরা যেনো একজোট হয়ে কোনো সমস্যা তৈরি করতে না পারে। আমাদের আশাবাদ, শুদ্ধি অভিযান জনমনে যে সাময়িক আস্থা তৈরি হয়েছে, তার প্রতি নজর রেখে দায়িত্বশীলরা অভিযানকে একটি স্থায়ী বিশ্বাসে রূপান্তরিত করবেন।