শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

দুইদিন আগে রাজধানীর ওয়ারীতে নিজেদের বাসার উপরের ফ্ল্যাটে সাত বছরের শিশু সামিয়া আক্তার সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় সারাদেশের মানুষ যখন ঘৃণা, ধিক্কার আর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছিল, তখনই সামনে এলো শিশুদের যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ এক পরিসংখ্যান। গত ৬ মাসে কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বলেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ৩৫৫ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে ধর্ষণের পর নিহত হয়েছে ১৬ জন। এছাড়াও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে আরো ৪৪ জন শিশু। এর বাইরে নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৪৯ জন শিশু। যৌন হয়রানির এসব ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৪৯ জন শিশু।

শিশু ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগঠনটি এসব সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠন করে ধর্ষণ প্রতিরোধেরও আহ্বান জানায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

শিশু ধর্ষণের এই পরিসংখ্যান নিশ্চিত করেই দেশের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। তবে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি প্রকৃত পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। কেননা দেশের সার্বিক সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ষণের ঘটনা বেশির ভাগই আড়াল করে রাখা হয়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা আরো বেশি। তাছাড়া এদেশে এই ধরনের ঘটনার শিকার শিশুদের বিচার পাওয়ার পথও মসৃন নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোনো কোনো শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আরো কিছু ঘটনার শিকার হতে হয়েছে।

এর বাইরে বিচারহীনতা, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে, পুলিশের সঠিক তদন্ত না করা এমন আরো কিছু কারণে এই ঘটনাগুলো চাপা পড়ে যায়। আর তাতেই উৎসাহিত হচ্ছে এই পাষণ্ড নরপশুরা। দিন দিন বেড়েই চলছে শিশু ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনা।

তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির ‍উপায় কি? এভাবেই কি চলতে থাকবে? বাড়তে থাকবে ধর্ষণ-হত্যা? শিশুরা যদি নিজের বাড়ি-বাসা, মাদ্রাসা, স্কুল বা পরিচিত স্থানে নিরাপত্তাহীনতায় থাকে; তাহলে তারা আর কোথায় যাবে? আর এসব ঘটনায় অন্য শিশুদের মধ্যে ভীতির জন্ম দিচ্ছে তা থেকেই বা মুক্তি মিলবে কিভাবে?

আমরা মনে করি, এমন অপরাধের একমাত্র সমাধান কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। কেউ শিশু ধর্ষণের মতো গর্হিত অপরাধ করে কোনোভাবেই পার পাবে না; সরকারকে এমন কড়া বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি কাজটা করেও দেখাতে হবে। তবেই আমাদের শিশুদের ভবিষ্যত নিরাপদ ও সুন্দর হবে।

ধর্ষণমানুষের জন্য ফাউন্ডেশনশিশু ধর্ষণশিশু নির্যাতনশিশু সামিয়া ধর্ষণ