শাকিব খান এমন না করলেও পারতেন

ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার শাকিব খান এবং তার স্ত্রী অপু বিশ্বাস। বর্তমানে বিনোদন পাতার হিট খবর। তাদের দু’জনের নাম কোথাও ‍যুক্ত হলেই সেই খবর আলোচনার শীর্ষে উঠে আসবেই। অলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর কাছে তারা পাঠকদের নিউজ খাওয়ানোর অন্যতম হাতিয়ার। অবশ্য কারণে-অকারণে আলোচনায় উঠে আসাতে সব রকম পথ সমানভাবে খুলে রেখেছে দুজনই। জীবনকে তারা এমনভাবে সাজিয়েছেন যে কেউ তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে যখন-তখন ঢুকে যেতে পারেন। একজন সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলতে গেলে অন্যরা অন্তত দশবার চিন্তা করেন। কিন্তু বাংলাদেশের একসময়ের জনপ্রিয় এ জুটি, যারা একসঙ্গে অন্তত ৯০টি ছবিটিতে কাজ করেছেন; তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চা-দোকানদার থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষ অনায়াসে কথা বলতে পারেন। যখন ইচ্ছা নিজের পছন্দ মত তাদের নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন।

হ্যাঁ সত্যি, সেলিব্রেটি হলে এ ধরনের আলোচনার মধ্য অনেকেই বেঁচে থাকতে হয়। একজন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী  বলেছিলেন, সেলিব্রেটিদের সব আছে কিন্তু একটি জিনিস নেই সেটি হলো নিজের ব্যক্তিগত জীবন। এটি শুধু আমাদের দেশে নয় টালিউড, বলিউড ও হলিউড এর বাইরে নয়।

এতগুলোর কথার পেছনে হয়তো অনেক কথা লুকিয়ে আছে। এখন সেই লুকিয়ে রাখা কথা বলি। এটি যেহেতু আমার মতামত, সেহেতু তা আমারই। এখানে অন্যজন কি ভাবলো, সেটি আমার ভাবার নয়। আগেই বলেছি, একসময়ের জনপ্রিয় জুটি শাকিব খান ও অপু। আর এখন শাকিব-অপু দম্পতির ঘরে তাদের এক বছরের ফুটফুটে পুত্র সন্তান, যার নাম আব্রাহাম খান জয়। পৃথিবীতে তাকে অনেক যুদ্ধ করে আসতে হয়েছে বলে তার নাম জয়। কি অবাক করার কথা যার বাবা-মা দেশের এতো নামকরা সেলিব্রেটি আর তার সন্তানকে কিনা এতো কষ্ট করে পৃথিবীর মুখ দেখতে হয়েছে। ঘটনা পেছনে হয়তো ঘটনা ছিল বলেই জয়কে এতো কষ্ট করে আসতে হয়েছে।

ছেলের সঙ্গে মা অপু

কিছুদিন বিনোদন সাংবাদিকতার কারণে আগেও আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো অপু বিশ্বাস ও শাকিব খানকে নিয়ে অনেক নিউজ করার। প্রথম দিকে সেই নিউজের বিষয়বস্তু ছিল তাদের কাজ। তার কয়েক মাস পর নিউজের বিষয় পাল্টে গেলো। তখন লিখতে শুরু করলাম-অপু বিশ্বাস চলচ্চিত্র থেকে উধাও। চলচ্চিত্রমহল, অপুর আত্মীয়-স্বজন এমনকি শাকিব খানও জানেন না অপু কোথায়। এ প্রসঙ্গে শাকিব বারবার গণমাধ্যমে বলেছেন, অপু তাকে কোনো কিছু বলে যায়নি। এর কিছুদিন পর গণমাধ্যমের চাপাচাপিতে শাকিব বলতে বাধ্য হলেন; অপুর মা অসুস্থ তাই কলকাতায় আছেন। তবে এরইমধ্যে অনেকগুলো গণমাধ্যমের বদৌলতে অনেকেই জেনে যান অপু মা হতে চলেছে। কিন্তু বিষয়টি শাকিব বা অপু কেউই স্বীকার করেনি। যে কারণে এ বিষয়ে হাজারো রকম নিউজ হয়েছে। তবে সেইসব হিট নিউজ নিয়ে তাদের কখনোই আপত্তি করতে দেখা যায়নি।

এরই কয়েকমাস পর হঠাৎই একদিন অপু বিশ্বাস তার ফেসুবক আইডি থেকে জানান দেন; কয়েকদিনের মধ্যে তিনি সবার সামনে আসবেন এবং কিছু বললেন। এরপর এলো ১০ এপ্রিল। সেদিন সবাইকে অবাক করে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে লাইভ অনুষ্ঠানে ছেলে জয়কে নিয়ে হাজির হন অপু। বলেন, এটি তার আর শাকিবের সন্তান। সারাদেশের মানুষ চোখে-মুখে বিস্ময় তাকিয়ে থাকে নেই লাইভ অনুষ্ঠানের দিকে। অপু সেদিন বলতে থাকেন, ২০০৮ সালে শাকিব আর তার বিয়ে হয়েছে। সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য তিনি এতোদিন কলকাতায় ছিলেন। এ বিষয়ে  শাকিব খান ডাহা মিথ্যা কথা বলেও দাবি করেন অপু। শুধু তাই-ই নয়; বারবার অনুরোধ করে বলার পরও এই সন্তানকে জন্ম দেওয়ার সময় শাকিব তার পাশে ছিলেন না। শাকিব নিজের ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবে বলে তাকে লুকিয়ে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য করে বলেও ওই লাইভ অনুষ্ঠানে দাবি করেন অপু বিশ্বাস। এই অনুষ্ঠানের পরই শুরু হয় মূলত মিডিয়ার আসল ব্যস্ততা। কেউ শাকিবকে নিয়ে  লাইভ  আবার কেউ অপুর সঙ্গে যোগাযাগ। এই ইস্যুতে মিডিয়াগুলো কেউ কারো পেছনে পড়তে রাজি নয়; সবাই এগিয়ে থাকতে চায়।

নায়িকা বুবলির পরিবারের সঙ্গে একান্তে শাকিব খান 

লাইভ অনুষ্ঠানে অপু বিশ্বাসের মুখে নিজের বিয়ের কথা শুনে নিজেই যেন আকাশ থেকেই পড়লেন শাকিব খান। প্রথমে কোনো প্রতিক্রিয়া না দিলেও পরে বললেন, ছেলের দায়িত্ব নিবেন কিন্তু অপুর নয়। শাকিবের এরকম কথা শুনে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠে। অনেকেই আবার শাকিবের শাস্তি কামনা করে। তবে সহকর্মীদের কাছে বুদ্ধিমান হিসেবে পরিচিত দেশের এক নম্বর হিরো গণমাধ্যমকে বলেন, আমি অপুর দায়িত্বও নিলাম।

বলতে গেলে এখান থেকেই শুরু হয় প্রায় নয় বছর লুকিয়ে রাখা অপু ও শাকিব দম্পতির নতুন সংসার জীবন। বিয়ের সময় ধর্ম পরিবর্তন করা অপু ছেলে ছোট বলে তার মায়ের সঙ্গে নিকেতনের বাসায় থাকেন। তবে শাকিব থাকেন তার গুলশানের বাসায়। ছেলেকে দেখতে ইচ্ছে করলে চাচাতো ভাইকে পাঠিয়ে তাকে নিয়ে আসেন। তাদের সংসার জীবনের টুকিটাকি সবই দ্রুত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ত। আর যতটুকু জানা যেতো না, তাও সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দিতেন শাকিব খান। যেমন; তার স্ত্রী ও সন্তানের প্রথম জন্মদিনে কত টাকা খরচ করেছেন। হয়তো দেশের কিং খান বলে কথা, তার স্ত্রী ও বাচ্চার জন্য কতটাকা খরচ করছে সেটিও তো দেশের মানুষকে জানানোর অধিকার আছে তার।

এরই মধ্যে আবারো দৃশ্যপট আরও ঘোলা হতে থাকলো; হঠাৎই একদিন অপু বিশ্বাস শাকিব খানের নতুন নায়িকা বুবলির উপর ক্ষেপে যান। ফেসবুকে বুবলিকে নিয়ে দেয়া স্ট্যাটাসে তাকে ধুয়ে দিয়ে বুবলিকে সাবধান করেন স্বামী শাকিবকে নিয়ে যেন টানাটানি না করে। মিডিয়া আবারও একটি বড় ইস্যু পেয়ে যায়। নিউজের পর নিউজ হতে থাকে অপু আর বুবলিকে নিয়ে। এতে বুবলিরও জনপ্রিয়তা বাড়ে। কিন্তু যাকে নিয়ে ঝগড়া সে তো তখন দেশের বাইরে ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত। শুটিং শেষে আবারও গণমাধ্যমে অপুকে ছোট করে শাকিব কথা বললেন বুবলির পক্ষ নিয়ে। এই কথা শুনে বুবলিও একটু সাহস পেয়ে গেলেন; ফেসবুকে উল্টো স্ট্যাটাস দিয়ে একহাত নেন অপুকে।

প্রথমে বিষয়টি নিয়ে গরম হলেও ঠাণ্ডা মাথায় অপু পরে বুবলিকে মাফ করে দেন। এখানেও শাকিব খান জিতে যান। এরপর শাকিব খান বলে বসেন, ক্যারিয়ারে অপুর সঙ্গে আর অভিনয় করবেন না। ভক্তদের মন ভেঙ্গে যাওয়ার আগে বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে বোঝান অপু। শাকিব খানকে ভুল বোঝার আর কোনো কারণ রইল না। এখানেও অপুর আরেকটি পরাজয় শাকিবের জয়।

পৃথিবীতে অাসার পর থেকে আজ পর্যন্ত ‍দু’একবার ছাড়া বাবা মায়ের সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমানোর সৌভাগ্য হয়নি জয়ের। অপুর কথা না হয় বাদ দিলাম। কিছুদিন আগে একটি টেলিভেশনের টকশোতে খুব কান্না করেছিলেন অপু। তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিলো দিনশেষে যখন বিছানায় একা শুতে যান তখন কেমন মনে হয়? প্রশ্নটি শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি অপু। হওয়াটাই স্বাভাবিক দিনশেষে সবাই চায় তার সঙ্গীর কাছাকাছি থাকতে। হয়তো শাকিবের বউ বলে তার ভাগ্যে এটি জুটেনি। এত কিছুর পরও বিভিন্ন টকশোতে অপুকে দেখেছি বাঙালি সাধারণ নারীদের মতো স্বামীকে উঁচু রেখে নিজের ভুল বলে স্বীকার করে নিতে। ভুল তো অপু করেছেই সেটি হলো শাকিবের মতো মানুষকে বিয়ে করে। চলচ্চিত্রের সঙ্গী হিসেবে শাকিব যতটা প্রস্তুত, জীবনসঙ্গী হিসেবে শাকিব ততটাই অপ্রস্তুত।

আব্রাহাম খান জয়ের জন্মদিনে মা অপু

প্রথম থেকেই শাকিব-অপুর সংসারের সব খবর সবার আগে, তখন তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদের খবর সবার আগে থাকবে এটি স্বাভাবিক। বিয়ে নিয়ে তারা যতটা জল ঘোলা করেছেন; ঠিক ততটাই ঘোলা হচ্ছে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ নিয়েও। কয়েকদিন ধরে শাকিব-অপুর বিবাহ-বিচ্ছেদ নিয়ে সব মাধ্যমে কথা হচ্ছে। তবে অপু বলেছেন, বিবাহ-বিচ্ছেদ হলে দু’পরিবারকে নিয়ে হবে। আর এ ধরণের গুঞ্জন কোথা থেকে আসলো তাও জানি না। আজ থেকে ঠিক নয় বছর আগে শাকিব অপুর বিয়েটাও কিন্তু গুঞ্জনই ছিলো।

‘যাহা রটে, তাহা বটে’ বিষয়টি ঠিক এমন না হলেও গতকাল শুক্রবার তাদের জীবনে আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। হঠাৎ করেই গুলশান থানায় ড়িয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন শাকিব খান। তিনি জানান, সন্তানকে বাসায় গৃহপরিচারিকার জিম্মায় রেখে কলকাতা চলে গেছেন অপু। পুলিশ ব্যাপারটিকে পারিবারিক বলে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এরপর আরও কয়েকটি গণমাধ্যম থেকে জানা গেল, বাথরুমে পা পিছলে পড়ে সন্তান জন্মে দেয়ার সময় করা সিজারের সেলাই ফেটে যাওয়ায় কলকাতায় চিকিৎসার জন্য গেছেন। ধরলাম বিষয়টি এমন না। এরপরও স্বামী হিসেবে শাকিবের কি করা উচিত ছিলো? নিজের স্ত্রী সম্পর্কে এমন বাজে কথা বলা? নাকি স্ত্রী কেমন অাছেন সেটি জানা? ছেলের প্রতি মায়ের কোনো দায়িত্ব নাই- এমনটি বলার পর সত্যিই শাকিবকে স্যালুট না দিয়ে পারলাম না!

স্যালুট, কারণ অাসলেই আপনি একজন আসল নায়ক। কিন্তু তখন আপনি কোথায় ছিলেন- যখন ছেলেকে কোলে নিয়ে অপু একা কেক কেটেছেন? আপনি কোথায় ছিলেন-যখন রাতের বেলা অসুস্থ ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছেন অপু? কোথায় ছিলেন-যখন রাতের পর রাত ছেলের পাশে অপুকে ঘুমহীন একা বসে থাকতে হয়েছে? তখন আপনি ব্যস্ত ছিলেন-কোনো নায়িকার সঙ্গে শুটিংয়ে। আর মাঝে মাঝে টাকার গরম দেখিয়েছেস। কিন্তু শুধু টাকা দিয়েই যদি বাবার দায়িত্ব পালন করা যায়? বাবা হিসেবে কি আর কোনো দায়িত্ব আপনার ছিলো না?

এক সময়ের হিট জুটি শাকিব-অপু

অনেক তো হলো শাকিব খান, এবার না হয় একটু থামুন। এই নাটকের শেষ দৃশ্য দেখান। সমাজের তরুণদেরকে আপনি কি শিক্ষা দিচ্ছেন? প্রেম করবে, বিয়ে করবে কিন্তু কাউকে জানতে দিবে না। ঘরের স্বামীদের আপনি কি শিক্ষা দিচ্ছেন? স্ত্রীকে তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করবে। বাবাদের আপনি কি শিক্ষা দিচ্ছেন? টাকা দিলেই সন্তানের প্রতি সব দায়িত্ব শেষ। আপনি না সুপারস্টার? ছবির জন্য তো অনেক হলো; এবার বাস্তবে অপু আর জয়ের কাছে সুপারস্টার হয়ে উঠুন।

আর অপু বিশ্বাসকে বললো অনেক তো স্বামীর গুণগান গাইলেন। এবার প্রতিবাদ করতে শেখেন। নিজেকে নিজের মতো করে চলতে শেখান, নিজের ওপর নিজের বিশ্বাস রাখেন।  সমাজ আপনাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করে। আপনাদের নায়িকাদের অনেকেই আইডল মেনে জীবনে কিছু অর্জন করতে চায়। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ছেলের জন্য হলেও এসব বাদ দেন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)