জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করবেন, যদি…

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলরত শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

তবে আন্দোলনের মুখে কোনোভাবেই উপাচার্যের পদ থেকে সরবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ড. ফারজানা ইসলাম।

উপাচার্য বলেন: মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি নির্দেশ দেন তবে পদ থেকে সরে যাবো। যদি আমাকে নির্দেশ না দেন তবে আন্দোলনকারীদের গালমন্দ খেয়েও থাকবো। হয়তো তাদের আন্দোলন আরও দীর্ঘায়িত হবে কিন্তু নির্দেশ আসা না পর্যন্ত আমি আমার দায়িত্ব পালন করবো।

বৃহস্পতিবার দুপুর একটায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, নতুন কলা ভবন হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবি জানান আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সকল পরীক্ষা কেন্দ্রে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

আন্দোলকারীরা জানান, আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে কোন ভবনে উপাচার্যকে প্রবেশ করতে দেখলে তা প্রতিহত করা হবে।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ারি জানিয়ে উপাচার্যকে বলতে চাই, আমাদের আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পূর্বে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন। না হলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে আপনার পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে। জাহাঙ্গীরনগর কখনো কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে নাই আর করবেও না।’

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্রলীগ নেতা চাঁদাবাজি করেছেন যারা টাকা পেয়েছেন তারা স্বীকার করেছেন যে উপাচার্য টাকা নাকি ছাত্রলীগ নেতাদের হলে পৌঁছে দিয়েছেন। এই লজ্জা আমরা আর রাখতে পারি না। জনগণের রক্ত পানি করা টাকা থেকে আপনি লুটপাট করবেন আর হাসি তামাশা করবেন তা হতে পারে না।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, ‘সমগ্র রাষ্ট্রের জনগণ জেনে গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এই অবস্থায় দেশের কেউ চায় না, উপাচার্য পদে থাকুক।’

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম শুধু বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করেন নাই বরং এর সঙ্গে তার পুরো পরিবারকে জড়িয়েছেন। স্বামী, পুত্রকে সবরকম অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। আমরা উপাচার্যের আশপাশের শিক্ষকদের জানাতে চাই, আপনারা এই দুর্নীতির ঘটনার পর তার পাশে না থেকে পদত্যাগে বাধ্য করবেন। জাহাঙ্গীরনগর আর এক মুহূর্তের জন্য এই দুর্নীতিবাজ উপাচার্যকে দেখতে চায় না।’

নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তসলিমা নাসরিন বলেন,’আমরা আজকের অবস্থানে আসতে বাধ্য হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমন গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার পরে আর কোনোভাবেই এমন সম্মানীয় পদে থাকতে পারেন না।’

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘উপাচার্য একবার বলছেন, ছাত্রলীগ তার কাছে চাঁদাবাজি করেছে, আরেকবার বলছেন চাঁদাবাজি করেন নাই। একজন উপাচার্য কোনোভাবেই এভাবে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিতে পারেন না। আমরা বারবার বলেছি উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কখনো বলিনি, আপনি দুর্নীতিবাজ তবে আপনার কার্যক্রমের মাধ্যমে আপনি সেটা প্রমাণ করছেন। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

তবে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম আন্দোলন কিংবা আল্টিমেটামে পদত্যাগ করবেন না বলে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি কোনো আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করব না। আমাকে যারা এই পদে বসিয়েছেন, তারা চাইলে পদ ছেড়ে দেব। তাছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয় তো শুধু আন্দোলনকারীদের নয় আরও অনেকে তো আছে। তারা তো আর পদত্যাগ চাইছেন না।’

ফারজানা ইসলাম