রাজনৈতিক ফাঁকা বুলি আর কত?

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘গণমানুষের দাবি নিয়ে বিএনপির কোনো কর্মসূচি নেই। দলটি গণমানুষের রাজনীতি করতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু নিজেদের নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন নিয়েই কথা বলে তারা।’

তাঁর কথা পুরোপুরি সত্য। কারণ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশে গণতন্ত্র ফেরানোই তাদের একুশে ফেব্রুয়ারির শপথ।

সরকারের মন্ত্রী এবং বিএনপির মহাসচিবের এই মন্তব্য তাদের দুজনের রাজনৈতিক বক্তব্য কোনো সন্দেহ নেই। তারা তাদের লাইনেই কথা বলেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা যেখানে কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে সেখানে এই বক্তব্য কতটুকু মানবিক, বোধগম্য নয়।

পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম-রাজস্ব ঘাটতির ‘চাপ’ তেল চিনিতে। চিনির দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে ভোজ্য তেলের দাম। চালের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। পেঁয়াজের দাম একশ টাকার নিচে আদৌ আর কখনো নামবে কি না কেউ বলতে পারছে না। বাড়ছে মশলার দাম।

অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য-সরকার এখন বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতিতে আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে রাজস্ব ঘাটতির কারণ কি? কাদের কারণে এই ঘাটতি? কারা ঘাটতিকে দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে? তারা কারা? তাদের ব্যাপারে সরকারের চুপচাপ নীতি আর কতদিন চলবে?

তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি গণমানুষের দাবি নিয়ে কথা বলে না, তারা শুধু নেত্রীর মুক্তি নিয়ে ব্যস্ত। গণমানুষ আসলে কারা? যারা কোটি কোটি টাকার ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেয় না। তারা? যারা ব্যাংক লুটপাট করে দিচ্ছে, তারা? যারা ফুটপাত দখল করে সরকার দলীয় পদ বাগিয়ে কোটি কোটি টাকা মাসে কামাচ্ছে, তারা? নাকি পোশাকশ্রমিক, স্কুল শিক্ষক, ছোটখাটো ব্যবসায়ী? কারা আসলে গণমানুষ? তাদের দাবি চাল-ডাল-তেল মশলার দাম কমানো। এই দাবি যতক্ষণ না পর্যন্ত বিএনপি তুলবে ততক্ষণ এর দাম কমবে না-বিষয়টা কি এরকম? তথ্যমন্ত্রী সাহেব কি এটাই বলতে চেয়েছেন? তারা কি অপেক্ষায় আছেন কখন বিএনপি গণমানুষের দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করবে-তার পরদিনই এসবের দাম কমে যাবে?

অর্থাৎ সরকার কি অপেক্ষায় আছে বিএনপি তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবি বাদ দিয়ে যখনই গণমানুষের দাবির কথা বলবে তখনই চালের দাম কমে যাবে তেলের দাম কমে যাবে, রসুন পেঁয়াজের দাম কমে যাবে, ডালের দাম কমে যাবে?

তথ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্য তো এরকমও হতে পারতো বিএনপি গণমানুষের কথা বলে না। আমরা সরকার গণমানুষের কথা ভেবে চালের দাম কমিয়ে দিয়েছে। ডালের দাম কমিয়ে দিয়েছে। চিনির দাম স্থিতি রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে রাজপথ গরম রাখলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বেই।

গ্রাম্য মহিলাদের মতো- ওরা করেনি, তাই আমরাও করবো না। ওরা গণমানুষের কথা বলে আন্দোলন করেনি তাই নিত্যব্যবহার্য জিনিসপাতির দাম কমানো ব্যবস্থা নেব না-এই মানসিকতা যতক্ষণ না বদলাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব তো হবেই না। বরং বাড়বে।

রাজস্ব ঘাটতি কাদের জন্য? কাদের জন্য পেঁয়াজের জন্য বাড়লো? কারা কোটি কোটি টাকা এই সুযোগে কামিয়ে নিয়েছে তাদের একজনের ব্যাপারেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? হয়নি।

রাজনীতিতে টিকে থাকার কথা না ভেবে সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে হবে সরকারকে। কখন বিএনপি আন্দোলন করবে। সেই অপেক্ষায় থাকলে দুর্ভিক্ষ কখন এসে যাবে কেউ টের পাবে না।
সাধারণ মানুষের কথা ভেবে ওইসব ফাঁকা বুলি বাদ দেয়াটাই ভালো।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

খালেদা জিয়ারাজস্ব ঘাটতি