সংরক্ষিত নারী আসন থেকে মেম্বার অব পার্লামেন্ট (এমপি) হয়ে সংসদে যাওয়ার জন্য বুধবার (১৬ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আরিফা পারভিন জামান ওরফে চিত্রনায়িকা মৌসুমি। রাজনীতিতে সক্রিয় না থেকেও হঠাৎ কেন এমপি হতে চান, তার রাজনীতির ভাবনা, সংসদের যেতে পারলে কোন বিভাগে কাজ করতে চান সেসব নিয়ে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে কথা বলেছেন এই তারকা অভিনেত্রী। যার কিছু অংশ চ্যানেল আই অনলাইন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো…
হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসতে চাইছেন কেন?
রাজনীতি ও চলচ্চিত্রকে কখনও আদালা করে দেখি না। চলচ্চিত্রের মানুষদের লাইফস্টাইল ও রাজনীতিবিদদের লাইফস্টাইল একই রকম। আমাদের যেমন দর্শকদের সঙ্গে কানেকশন, যাদের নাড়ি নক্ষত্র বুঝে আমাদের চলতে হয়, রাজনীতিবিদদেরও তাই। এই নেটওয়ার্কের বাইরে আমরা না। আমি স্বপ্ন দেখে বসে ছিলাম, ভালো পরিবেশ ও রাজনীতির সুন্দর প্রেক্ষাপট আসবে, যেখানে বর্ষিয়ান নেতাদের পাশপাশি নতুন আনকোরারা কাজের সুযোগ পাবে। সেই অপেক্ষায় ছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার মন্ত্রী সভায় নতুনদের সুযোগ দিয়ে যে চমক দেখিয়েছেন তা সত্যি প্রশংনীয়। এজন্য রাজনীতিতে আমার মতো নতুনরা আসা উচিত বলে মনে করেছি। প্রধানমন্ত্রী নিজে এই জায়গাটা তৈরি করেছেন।
অনেক অভিনয় শিল্পীকে নির্বাচনের আগে নৌকায় ভোট চাইতে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে অনেককেই সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনতে দেখা গেছে। কিন্তু আপনাকে নির্বাচনী কোনো প্রচারণায় দেখা যায়নি কেন?
আমি মনে করছি প্রচারণার জায়গায় এতবেশী যুক্ত হতে পারিনি, তবে আমি সাপোর্ট করেছি সবসময়। কথা হয়েছে আমার সাথে। বলেছি, আমি তো আপনাদের সাপোর্টে করছি। কিন্তু আমি প্রচারণা সেভাবে বুঝিনা। আমি দলের সঙ্গে কখনও কর্মী হিসেবে কাজ করিনি। তবে হ্যাঁ, যখন কাজ করবো আজ হোক কাল হোক তখন সবকিছু বুঝে যাবো যে মানুষের সঙ্গে আমাকে কীভাবে ফেস করতে হবে। এগুলো আমার আয়ত্বের বাইরে ছিল। আমি ইনসিকিউরড ফিল করেছি। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলেছি, আমি পারছি না। তাছাড়া সাহসের একটা ব্যাপার থাকে। ওই সময় আমার প্রস্তুতিগুলো ছিল না। এসব সবকিছুর কারণে আমি মাফ চেয়ে নিয়েছি। ভবিষ্যতে প্রচারণায় অংশ গ্রহণের কথা বলেছিলাম।
অনেকেই বলছেন আপনি বিএনপি’র সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ফেসবুকে একটি ছবিও বেশ চর্চিত হচ্ছে ক’দিন ধরেই?একজন শিল্পী হিসেবে আমার বিচরণ সবখানেই থাকবে। আমি সব মানুষের সঙ্গে ছবি তুলবো, সব মানুষের সঙ্গে কথা বলবো। এটাই স্বাভাবিক। আমি তো আমার এক্সপ্রেশন কখনও বলিনি। আমি কোন দল পছন্দ করি এটাও কখনও বলিনি। কোন নেতা পছন্দ করি, কোন দলের হয়ে আমি কাজ করতে চাই এসব অনুভূতি কখনই প্রকাশ করিনি। তাহলে এ প্রশ্ন কেন আসছে যে আমি কোন দল করেছি, কোন দল করছি? এটা তো সম্পূর্ণ আমার সিদ্ধান্ত। আমি কখনোই কোনো দল করিনি। আশা করছি আমার দর্শকরা আমাকে ভুল বুঝবে না। যদি কেউ বোঝে তাহলে আমার কিছু আসে যায়না। আমার যদি মনে হয় যে এই নেতার জন্য কাজ করলে আমার এখন ভালো লাগবে তাহলে আমি সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এটা আমার অধিকার আছে। এখানে বলার কিছু থাকে না। কিন্তু অনেকেই নেতিবাচক প্রশ্ন তুলছেন আমি বিনয়ের সাথেই বলতে চাই, আপনারা এ ধরণের প্রশ্ন তুলে আমার রাজনীতি নিয়ে উৎসাহকে বাধাগ্রস্ত করবেন না। আমি ২০-২৫ বছর ফিল্মে কাজ করেছি। সততার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার দর্শকদের ভালোলাগা, ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেছি। আজকে আমার প্রতিদান দেওয়ার সুযোগ।
যদি আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে তার সিলেকশনে আমি যদি সংসদে যেতে পারি তাহলে আমাকে কোনো একটা সেক্টরে কাজের সুযোগ দেবেন। একটা দায়িত্ব পাবো। সেই দায়িত্ব পালন করতে পারলে আমি ধন্য মনে করবো। আমার দর্শক, দেশের মানুষ কেউ আমাকে ভুল বোঝার সুযোগ নেই। কিন্তু ওই পর্যন্ত আমাকে যেতে হবে। আমার একটা ভাল চিন্তা আছে। এটাকে অ্যাপ্রিসিয়েট করা উচিত। শুধু যারা দল করবে তারাই রাজনীতিতে আসতে পারবে এমন নজির কিন্তু নেই। এর বাইরেও অনেক নজির আছে। রাজনীতিতে নতুন এসে অনেকেই ভালো করেছেন।
সংরিক্ষত আসন পাওয়ার ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকারে দেখেছি, ৫০ জন সংরক্ষিত নারীর সিলেকশন তিনি নিজে করবেন বলেছেন এবং সেটা নিরপেক্ষ হবে। তার এই কথাটা আমাকে খুবই উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করেছে এবং সাহসী করেছে। আমি তখন বুঝেছি এখানে অন্য কোনো হেজিটেশনে পড়তে হবে না। তার কর্মকাণ্ড দিয়ে তিনি জনগণের মনে আস্থা অর্জন করেছেন। সে জন্য আমারও আস্থা এসেছে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে যোগ্য মনে করলে অবশ্যই আমাকে কাজে লাগাবেন বলে বিশ্বাস করি। আর আমার আগে থেকেই ইচ্ছে ছিল কোনো একদিন সংসদ সদস্য হবো। এই সময়টা উপযুক্ত মনে হয়েছে। এখন মেয়েরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে।
সংসদ সদস্য হলে কোন বিষয়ে কাজ করতে চান?
আমার স্বপ্নগুলো কখনও বলা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে নির্বাচন করার সুযোগ দেন তবে আমি প্রথমে মহিলা ও শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাই। আমি দীর্ঘদিন ধরে ইউনিসেফের সহায়তায় কাজ করেছিও তাদের নিয়ে। এই সেক্টরে আমি কাজ করতে বেশী আগ্রহী। কারণ, আমাদের দেশের মহিলারা এখনও সবখানে নিরাপদ নয়। তাদের এই জায়গাটায় যদি আমাকে কাজের সুযোগ দেওয়া হয় আমি বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো।
সংসদে গেলে ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব পড়বে?
আমার পরিচিতির জন্য কোনো দল গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার স্থান থেকে দর্শকদের ভালোবাসা, সাপোর্ট নিয়ে সবার কাছে পরিচিত নাম। শুটিং না করলেও চলচ্চিত্র থেকে আমার পাওয়ার নেই। শুটিং না করলে এমন কোনো সমস্যাও হবে না। আমার ক্য্যারিয়ারে কোনো সমস্যা হবে না। নতুন করে মৌসুমী আবার হতে পারবে না।
ছবি : ওবায়দুল হক তুহিন