মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ত্রাণ সহায়তা কর্মীদের ‘প্রত্যাশিত, স্থায়ী প্রবেশাধিকার’ দিতে সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা।
ত্রাণের অভাবে সেখানে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যকার লড়াইয়ের কারণে ঘর হারিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া ৩৩ হাজারেরও বেশি লোকজন মরতে বসেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক উপমহাসচিব আরসালা মুয়েলার বলেছেন, রাখাইনে আঞ্চলিক সংঘাতে বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তিনি দেখা করার অনুরোধ জানালে মিয়ানমার সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ দলকেই ওই এলাকায় ঢুকতে দেয়া হয়নি।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ছয়দিন ব্যাপী সফর শেষে মঙ্গলবার রাতে মুয়েলার সাংবাদিকদের বলেন,‘আমাদের প্রবেশের সুযোগ দরকার – প্রত্যাশিত, স্থায়ী প্রবেশাধিকার – যেন আমরা বিপদে থাকা মানুষদের কাছে পৌঁছাতে পারি।’
‘ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক থেকে শুরু করে অন্যান্য জরুরি সহায়তা যদি দ্রুত এই লোকজনের কাছে না পৌছায় তবে তারা এই সেবাগুলো আর পাবেই না কারণ সেখানে এগুলো নেই। তাদের এই চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে না এবং এ কারণে লোকজন মারা যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।
জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সহায়তার সহ-সমন্বয়কের দায়িত্বেও আছেন আরসালা মুয়েলার।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় মিয়ানমারের এই রাখাইন রাজ্য। সেনা চৌকিতে জঙ্গিদের হামলার জবাব হিসেবে গণহারে রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে বর্মি সেনাবাহিনীর হামলায় বিপুল সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে।
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বহুবার এই গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য মিয়ানমারের সিনিয়র সেনা সদস্যদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনী এই দায় অস্বীকার করে এসেছে বরাবরই।
সম্প্রতি রাখাইনে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনী আরাকান আর্মির মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। সেই সংঘাতের মধ্যে আটকা পড়েছে রাজ্যটিতে এখনো বসবাস জনগোষ্ঠী।
আরাকান আর্মি মূলত রাখাইনের বৌদ্ধ নৃগোষ্ঠী থেকে সদস্য সংগ্রহ করে। রাজ্যটিকে সায়ত্ত্বশাসনের আওতায় আনতে লড়ছে দলটি।
মিয়ানমার সফরের সময় মুয়েলার রাখাইনের রাজধানী নেপিদোতে উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’র সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। সু চি বলেন, রাখাইনে উন্নয়ন ও সামাজিক সংহতি রক্ষায় কাজ করছেন তিনি।