বিয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বর কনে হাজির হলেন স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা এই অবস্থা দেখে হতবাক! এমন চিত্র দেখা গেছে নাগাল্যান্ডের এক বিদ্রোহী নেতার সন্তান এবং তার কনের বিবাহের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।
নাগার বর-কনের স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে ছবি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
ছবিটি এমন সময় ভাইরাল হয়েছে, যখন কেন্দ্রীয় সরকার ভারতের উত্তর-পূর্বের নাগা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে অধরা একটি ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তিতে চুড়ান্তভাবে পেরেক ঠুকে দেওয়ার চেষ্টায় মত্ত।
ছবিটি নাগাল্যান্ড একত্রীকরণ আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক কাউন্সিল (এনএসসিএন-ইউ) নেতা বোহোটো কিবার ছেলে বলে ধারণা করছে এনডিটিভি। তবে তাৎক্ষণিক বর ও কণের নাম জানা যায়নি। একে ৫৬ এবং এম ১৬ স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে ছবিতে তাদের পোজ দিতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রদর্শন দেখে হতবাক হয়ে যান।
নাগাল্যান্ডের পুলিশ প্রধান টি জন লংকুমার জানান, আমি (বর ও কনের স্বয়ংক্রিয় রাইফেল প্রকাশের ছবি) দেখিনি এবং আমি এ বিষয়ে অবগত নই।
এনএসসিএন-ইউ সাতটি নাগা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে অ্ন্যতম একটি। যৌথভাবে নাগা ন্যাশনাল পলিটিক্যাল গ্রুপস (এনএনপিজি) সঙ্গে কেন্দ্রের সঙ্গে শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে সংগঠনটি। নাগাল্যান্ডের সমাজাতিন্ত্রক কাউন্সিলের (ইসরাক-মুইভা) এবং মিয়ানমার ভিত্তিক নাগাল্যান্ড খাপলাংয়ের সমাজান্ত্রিক কাউন্সিলের নেতাদের দ্বারা এনএসসিএন-ইউ গঠিত হয় ২০০৭ সালের ২৩ নভেম্বর।
স্বাধীনতার দাবিদার নাগাদের সাথে প্রায় দুই যুগ ধরে চলা শান্তি আলোচনা সম্প্রতি কঠিন অবস্থায় পড়েছে। কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতকারী সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫ক বাতিল করার ভারতের সিদ্ধান্তে দেশটির সবচেয়ে পুরনো বিদ্রোহ অবসানের শান্তিপ্রক্রিয়া প্রশ্নে বিদ্যমান অস্বস্তিদায়ক অনুভূতিতে ইন্ধন যোগ করেছে।
ব্রিটিশরা যখন ১৮৪০-এর দশকে ওই অঞ্চলে প্রবেশ করে, তখন থেকেই নাগাদের স্বাধীনতার দাবি উত্থাপিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সময় নাগারা ভীত হয় এই ভেবে যে ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তারা তাদের স্বতন্ত্র স্থানীয় পরিচিতি ও সংস্কৃতি হারিয়ে বিলীন হয়ে যাবে। এই অনুভূতিই তাদেরকে ভারত থেকে নাগাল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবি জানাতে উদ্বুদ্ধ করে।
তারপর ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিল (এনএনসি) সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে।
তখন থেকেই কয়েক দশক ধরে চলছে রক্তপাত। ১৯৬৩ সালে নাগাল্যান্ড রাজ্য গঠন, ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭১(ক)-এর আওতায় বিশেষ সুবিধাসহ বেশ কিছু ছাড় দেয়া সত্ত্বেও শান্তি চুক্তি হতে পারেনি।