রমজান: তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি’র গুরুত্ব ও তাৎপর্য

তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি অর্জন মানব জীবনের অপরিহার্য বিষয়। তাকওয়ার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে অন্তর। মুমিন তার অন্তরে তাকওয়ার বীজ বপন করার ফলে তাঁর অন্তর সবসময় তরতাজা থাকে। এর মাধ্যমে মুমিন জান্নাত লাভের আশাও করেন। যে ব্যক্তির মধ্যে তাকওয়া থাকে,  তাকে মুত্তাকী বা মুমিন বলে। মানুষের সব ধরনের সৎগুনাবলীর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাকওয়া।

একজন মুমিন পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও মঙ্গলের কাজে সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখে। এর মাধ্যমে সে জান্নাত লাভের পথ সুগম  করে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১০২]

তাকওয়া অবলম্বন বিষয়ে মানবতার মুক্তির দিশারী, দোযাহানের বাদশাহ, নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: দুটি চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না, একটি চোখ যা আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে আর অপরটি হলো আল্লাহর রাস্তায় পাহারারত অবস্থায় রাত্রি যাপন করে।

আমরা জানি, তাকওয়া শুধু জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয় না, বরং তা জান্নাতে প্রবেশ করতেও সাহায্য করে। এজন্য আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে হাকিমে বলেছেন:  আর যে ব্যক্তি তাঁর রবের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং নিজেকে কুপবৃত্তি খেকে বিরত রাখে তার জন্য রয়েছে জান্নাতের অবাসস্থল।

যারা আল্লাহকে ভয় করে, তারা পরকালে সর্বোচ্চ নিরাপদে থাকবে। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়ে বলেন: নিশ্চই মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে।[ সূরা আদ দুখান, আয়াত নং ৫১]

মুত্তাকী ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সর্বদা সম্মানিত হন। খোদাভীতি অর্জনের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা যায়। মুত্তাকীদের সম্মাননার বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন: তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী।[ সূরা হুজরাত, আয়াত নং ১৩]

এছাড়াও আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা লাভের অন্যতম মাধ্যম তাকওয়া। তাইতো আল্লাহ কুরআনে বলেছেন: নিশ্চই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন। [সূরা আত তাওবা, আয়াত নং ৪]

রমজান মাসে তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সর্বোচ্চ আনুগত্য নিশ্চিত করে মুমিন। আল্লাহভীরুতার বিষয়ে হাদিসের বিশুদ্ধ গ্রন্থ ইবনে মাজাহ’তে বলা হয়েছে: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: হে আয়েশা! ক্ষুদ্র- নগন্য গুনাহ থেকেও  আত্নরক্ষা করে চলবে। কেননা আল্লাহর দরবারে সেগুলো সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হবে।

 হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কোন মানুষই ততক্ষন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না, যতক্ষণ না সে আল্লাহর নির্ধারিত রিজিক লাভ করবে। শোনো, তাকওয়া অবলম্বন কর। জীবিকা উপার্জনে হালাল তথা জায়িয ‍উপায় অবলম্বন কর। রিজিক লাভে বিলম্ব তোমাদের যেনো হারাম তথা না-জায়িয পন্থা অবলম্বনের দিকে ঠেলে না দেয়। কেননা আল্লাহর নিকট যা কিছু আছে, তা কেবল তাঁর অনুগত  থাকার মাধ্যমেই লাভ করা যেতে পারে।

সুতরাং রিজিক লাভে ব্যর্থতা বা বিড়ম্বনা অনুভব করে কখনোই নিরাশ হওয়া উচিত নয়। আল্লাহ তায়ালা যার জন্যে যে রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন তা শীঘ্র হোক বা দেরিতে হোক সেটি সে লাভ করবেই।

শেষপ্রান্তে এসে আল্লাহ তায়ালার কাছে আবেদন- হে আমাদের সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, আমাদেরকে হালাল রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন, হারাম উপার্জন থেকে বাঁচার তাওফিক দেন। আমীন।

তাকওয়ার গুরুত্বমুত্তাকীরমজান