‘চুম্বক কম্পাস কেন উত্তর দিকে নির্দেশ করে থাকে? কারণ দক্ষিণ দিকে রজনীকান্ত বাস করেন, আর কম্পাস তার দিকে নির্দেশ করার সাহস পায় না!’ কিংবা ‘টাইটানিক ছবিতে রজনীকান্ত থাকলে কী ঘটতো? অবশ্যই তিনি এক হাতে নায়িকাকে নিয়ে আটলান্টিক পার করে ফেলতেন, এবং তার অন্য হাতে থাকতো টাইটানিক’। দক্ষিণ ভারতের সুপারস্টার রজনীকান্তকে নিয়ে আছেন এমন আরো অসংখ্য জোকস!
তাকে নিয়ে যতোই কৌতুক হোক, কিংবা সিনেমায় তার চরিত্র নিয়ে মানুষ যতো মজাই করুক কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতীয় দর্শকদের কাছে তিনি সত্যিকারের সুপারস্টার! কারণ সিনেমার নায়কের মতো তার ব্যক্তি জীবনেও আছে সংগ্রামের অতীত!
রজনীকান্ত। প্রায় বুড়ো একটি মানুষ। ১২ ডিসেম্বর পা রাখলেন ৬৯ বছরে! তার বয়সের আর আর মানুষেরা যেখানে বয়সের ভারে ন্যুজ বনে গেছেন সেখানে এখনো একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার নামে এখনো টানা কয়েক দিন প্রেক্ষাগৃহে মানুষের তিল ধরার ঠাঁই থাকে না। শুধু তাই নয়, তার সিনেমা মুক্তি মানেই দক্ষিণ ভারতে অফিস আদালতে ছুটি ঘোষণা হয়ে যাওয়া! অথচ একদিন এই সুপারস্টার মানুষটি ছিলেন বাস চালকের সহকারি (কন্ডাক্টর)!
কিন্তু রজনী কী করবেন সেটাই নাকি ভেবে পেতেন না। বন্ধু বাহাদুরের তুমুল উৎসাহে একদিন চেন্নাইয়ের একটি অভিনয় একাডেমিতে ভর্তি হয়ে যান রজনীকান্ত। কিন্তু কোচিংয়ের জন্য বেশিক্ষণ কাজ করতে পারেন না বলে সেই মত পয়সাও উপার্জন করতে পারেন না তিনি। ফলে দুই বছরের মেয়াদে যে অভিনয়ে কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছেন তার খরচ মেটানোও দায় হয়ে পড়ে। কিন্তু এবারও পাশে দাঁড়ান সেই বন্ধু বাহাদুর। কোর্স শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত রজনীকান্তকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন তিনি।
কারণ ওই বন্ধুটির বিশ্বাস ছিল যে রজনীকান্ত যদি অভিনয়ে যান তাহলে কাঁপিয়ে দিতে পারবেন! নিজের উপর বন্ধুর এই বিশ্বাস পুঁজি করে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলেন রজনী। ধীরে ধীরে চেন্নাইয়ে দুই বছরের কোর্স শেষ করেন তিনি। এরপর আসে সেই গর্বিত হওয়ার মত দিন। তামিল নির্মাতা কে বালাচন্দন ‘অপূর্ব রাগাঙ্গল’ নামের সিনেমায় প্রথমবার কাস্ট করেন রজনীকে।
নিজের প্রথম সিনেমাতেই মাৎ করে দেন রজনীকান্ত। এরপর আর পিছু ফিরতে হয়নি রজনীর। অভিনয়ে যে বারুদ তার মধ্যে প্রযোজক ও নির্মাতারা দেখেন তা আর বাকি ক্যারিয়ারে হতাশ করেননি রজনী। চারদিকে মানুষেরা ভিন্ন এক অভিনেতাকে দেখতে পায়। বিশেষ করে তিনি যে অবস্থান থেকে উঠে গিয়ে নায়ক হয়েছেন সে বিষয়টাও মানুষকে সম্মোহিত করে। সেই সাথে তার দুর্দান্ত অভিনয়েও মানুষ মগ্ন হয়ে যান। একের পর এক সিনেমায় প্রস্তাব পেতে থাকেন তিনি।
কিন্তু ওইদিকে মুচকি হাসেন রজনীর সেই বন্ধুটি। কারণ তারজন্যইতো আজ রজনী সুপারস্টার! অন্যদিকে বন্ধুর এমন বদন্যতা ভুলেননি রজনীকান্ত। যখন তিনি পুরোপুরি স্টার হওয়ার পথে তখনও ভুলে যাননি। কখনো অকৃজ্ঞ আচরণ করেননি রজনী। এমনকি এখন যখন পুরো ভারতের সুপারস্টার বনে গেছেন তখনও ভুলেননি সেই বাসের সহকারি বন্ধুটিকে।
নতুন ছবি সিনেমা আসার আগেই এখনও সেই বন্ধুটির বাড়ি যান রজনীকান্ত। তার থেকে আশির্বাদ নিয়ে এখনো সিনেমারে কাজে যান তিনি। এমনকি সিনেমা মুক্তির পর কোনো সিনেবোদ্ধার কাছে নন, বরং সেই বন্ধুটির কাছে রিভিউ চান রজনীকান্ত। কারণ আজকের যে অবস্থান তার তৈরি হয়েছে তার পুরোটার মালিকই তো সেই বন্ধু রাজ বাহাদুর!
সুপারস্টার হওয়ার পর বাহাদুরকে অর্থ বিত্ত দিয়ে সহায়তার চেষ্টা করেছেন রজনীকান্ত। কিন্তু কোনোভাবেই সেই অর্থ কিংবা বিত্ত গ্রহণ করেননি বন্ধুটি। বিশেষ করে নায়ক হওয়ার পর বাহাদুরকে বাস সহকারির চাকরিও ছেড়ে দিতে পীড়াপিড়ি করেছেন কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটুট ছিলেন বাহাদুর। তিনি মনে করেন, বন্ধুত্বের বিচার অর্থ বিত্ত বৈভবে হয় না। বরং বন্ধুত্বের অসাধারণ সম্পর্কের মধ্যে এইসব ঢুকলে বরং সম্পর্ক নষ্টই হয়!