যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ ও মাকরুহ হয় না

রোযা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট কতেক কারণ রয়েছে। এর বাইরে রোযা ভঙ্গ হয় না। সেগুলোর কিছু রয়েছে, যাতে ভঙ্গ না হলেও রোযাটি মাকরুহ হয়ে যায়। ফলে তা পরিপূর্ণ সওয়াব লাভের উপযোগী হয়ে উঠে না। এর সওয়াবে কমতি আসে। আমরা যখন মাকরুহ থেকে মুক্ত রেখে আমাদের রোযাগুলোকে স্রষ্টার দরবারে উপস্থাপন করতে পারব, তখনই সেই রোযাগুলোর বিনিময়ে সর্বোচ্চ সওয়াবের আশাবাদী হতে পারব। যেসকল ক্ষেত্রে রোযা ভঙ্গ না হয়ে মাকরুহ সাব্যস্ত হবে এবং যেসকল ক্ষেত্রে মাকরুহ সাব্যস্তও হবে না– তা নিম্নরূপ।

যেসকল কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না
১. মিথ্যা বলা, চোগলখোরি, গীবত, গালি দেয়া, অনর্থক কথাবার্তা, কাউকে কষ্ট দেয়া– ইত্যাদি কাজ যা শরীয়তে নাজায়েজ ও হারাম; তাতে লিপ্ত হলে রোযা মাকরুহ হয়। তবে ভঙ্গ হবে না। গীবত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘গীবত হলো আপন মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ সমতূল্য।’ (সূরা হুজরাত, আয়াত: ১২)। হাদিস শরীফে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: গীবত করা জেনার চেয়েও ভয়ঙ্কর। (মুজামুল আওসাত, হা. নং: ৬৫৯০)। সুতরাং গীবত করার কারণে রোযার নুর চলে যায়। (আদ দুররুল মুখতার)।
২. অকারণে কিছু চেখে দেখা বা চিবিয়ে নিলে মাকরুহ হবে। যদি স্বামী বদস্বভাবের হয়। আর তরকারি মজাদার না হলে অত্যাচার করে, তাহলে রোযা অবস্থায় স্ত্রী তরকারির স্বাদ চাখতে পারবে। তবে চাখার সাথে সাথে থুতু নিক্ষেপ করে ফেলে দিবে।
৩. রোযাবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন, আলিঙ্গন করা এবং শরীর স্পর্শ করা মাকরুহ৷ যদিও বীর্যপাত ও সহবাসের আশংকা থাকুক বা না-ই থাকুক। এছাড়া স্ত্রীর জিহ্বা বা ঠোঁটে চুম্বন করাও মাকরুহ।
৪. রোযা অবস্থায় টুথপেস্ট/ মাজন ব্যবহার করা মাকরূহ। টুথপেস্টের কোন অংশ পেটের ভিতর চলে গেলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
৫. গরগরাসহ কুলি করা এবং নাকে অধিক পরিমাণে পানি পৌঁছানো।
৬. অধিক পরিমাণে থুথু মুখে জমিয়ে রেখে তা গিলে ফেলা অপছন্দনীয় কাজ। এরফলে রোযা মাকরুহ হবে।
৭. অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে যদি পূর্বে থেকেই রোযা ভাঙনের প্রবল ধারণা থাকে, এমন পরিশ্রমে রোযা মাকরুহ হয়ে থাকে।
৮. শেষ সময়ের দিকে সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব। কিন্তু সেটা যদি এত দেরীতে হয় যে, সকাল হয়ে যাবার শংকা জাগে, এক্ষেত্রেও মাকরুহ হবে।
৯. যেকোনো প্রকারের অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়া মাকরুহ।
১০. গোসল ফরজ হয়েছে, এমন অবস্থায় নাপাক থেকে সারাদিন অতিবাহিত করলেও মাকরুহ হবে।
১১. ঠোটে লিপিস্টিক লাগালে যদি মুখের ভিতর চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাতে মাকরুহ হবে।

যেসব ক্ষেত্রে রোযা মাকরুহ হয় না
রোযাবস্থায় কিছু কাজ রয়েছে যা সংগঠিত হলে রোযার কোনোরূপ ক্ষতি হবে না। তা নিম্নরূপ:
১. মিসওয়াক করা
২. মাথা বা গোফে তেল দেয়া
৩. চোখে সুরমা লাগানো
৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা
৫. তৃষ্ণার্ত বা উষ্ণতা অনুভূত হলে গোসল করে নেয়া
৬. ভুলবশত খাওয়া দাওয়া করে ফেলা
৭. অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি চলে আসা
৮. স্বপ্নদোষ হয়ে যাওয়া
৯. দাঁত হতে রক্ত বেরোনোর পর যদি তা কণ্ঠনালি পর্যন্ত না পৌঁছায়
১০. যদি স্বপ্নে বা সহচর্যের কারণে গোসল ফরজ হয়ে যায় এবং সুবহে সাদিক হওয়ার আগ পর্যন্ত যদিও গোসল না করে থাকেন; এমতাবস্থায় রোযার নিয়ত করে নিলে তাতে কোনো সমস্যা হবে না।

রোযাসাহরী