‘আজীবন সম্মাননার বিষয়টি শুনলেই মনে হয়, আমি বোধহয় ফুরিয়ে গেলাম। কিন্তু আমার মনে হয়, আমি ফুরিয়ে যাবো না। এটুকু আপনাদের কথা দিতে পারি, যতোদিন জীবন থাকবে, যতোদিন কর্মক্ষম থাকবো কাজ করে যেতে চাই।’
বাংলাদেশের স্বাধীন চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘১৫তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব’-এ হীরালাল সেন আজীবন সন্মাননা স্মারক প্রদান প্রাপ্তির পর এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সংগঠক মোরশেদুল ইসলাম।
বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের আয়োজনে শাহবাগের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে পর্দা উঠলো ১৫তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবের। আর এখানেই মোরশেদুল ইসলামকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়।
যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এম.পি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের সুযোগ্য শিষ্য প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা কুমার সাহানী ও ভারতের প্রখ্যাত স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্য রচয়িতা-কমল স্বরূপ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব পরিচালক এন. রাশেদ চৌধুরী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জাহিদুর রহিম অঞ্জন।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন অতিথিরা। আর এরপরেই মোরশেদুল ইসলামকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ এবং তার হাতে আজীবন সম্মাননা পদক তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এম.পি।
নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে মোরশেদুল ইসলাম বলেন, এই সম্মাননা পাওয়ার মতো যোগ্য এখনো আমি হইনি। তবে একই সঙ্গে এই সম্মাননাটি পেয়ে আমি গর্বিত, কারণ এই সম্মাননাটি এমন একজন মানুষের নামে, যিনি এই উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের পথিকৃত। আর এই সম্মাননাটি দিচ্ছে এমন একটি সংগঠন যে সংগঠনের সাথে আমার দীর্ঘদিনের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমার অনেক আবেগ, ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। এই সংংগঠনের জন্মের সাথে আমার অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে।
নির্মাতা কুমার সাহানী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মাধুর্যের কথা বলেন। বলেন এ ছন্দ যেন তার মনকে প্রসন্ন করে, শুভ কাজের জন্য উৎসাহিত করে।
নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার কমল স্বরূপ বলেন, ঢাকা বলতেই ‘ঢাকা কি মাল মাল’ মনে পড়ে যার মাধ্যমে আমরা শৈশবে ঢাকাকে চিনতাম। এখানে এসে পুনের এফটিআিআই এর পুরনো বন্ধুদের সাথে দশক পরে আড্ডা দিতে পেরে ভালো লাগছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন উৎসব আয়োজন করতে গিয়ে আর্থিক জটিলতার কথা। তিনি বলেন, এই উৎসব বাংলাদেশের একমাত্র উৎসব যেখানে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা নিজ উদ্যোগে খেটে একটা উৎসব দাঁড় করান। কিন্তু ইদানিং বিভিন্ন জায়গা থেকে আর্থিক সহযোগিতা একেবারেই কমে গিয়েছে এমনকি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতারও অভাব দেখা দিচ্ছে। তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলে – আমরা একেবারেই সহযোগিতা পাইনি তা নয় কিন্তু আর্থিক সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এরকম একটি উৎসবের আয়োজন করতে গেলে।
উদ্বোধনী সন্ধ্যায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব পরিচালক এন. রাশেদ চৌধুরী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জাহিদুর রহিম অঞ্জন।
৭ থেকে ১৩ ডিসেম্বর এ উৎসবের মূল কেন্দ্র হিসেবে থাকছে-কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর-সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন, জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন এবং একাডেমির সেমিনার হলসমূহ।
এবারের ১৫ তম উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে- সম্প্রতি প্রয়াত স্বাধীন চলচ্চিত্র ধারার অন্যতম গুণী নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সম্পাদক সাইদুল আনাম টুটুল, সূর্য দীঘল বাড়ি খ্যাত অসংখ্য চলচ্চিত্রের-চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন ও চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ খসরু- এঁর স্মৃতির প্রতি।
উৎসবে পুরস্কারের মূল্যমাণ হিসেবে থাকছে-শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈঘ্য প্রামাণ্যচিত্র এক হাজার ইউএস ডলার, শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র এক হাজার ইউ এস ডলার, শুধুমাত্র বাংলাদেশী তরুণ প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতিযোগীতা বিভাগ (অনূর্ধ-১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যরে) বিভাগ-তারেক শাহরিয়ার বেস্ট ইন্ডিপেনডেন্ট শর্ট ২৫ হাজার টাকা ও নেটপ্যাক জুরি এওয়ার্ড ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট ।
এবারের উৎসবে সদ্যপ্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মাঝে ইরানের-আব্বাস কিয়ারোস্তামী, আমেরিকার-মায়া ডেরেন, জোনাস মেকাস, ফ্রান্সের-এগনেস ভার্দা, গ্রীসের থিও এঞ্জেলোপোলাস, ভারতের মৃণাল সেন সহ বাংলাদেশের সাইদুল আনাম টুটুল ও চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন এর স্মৃতি স্মরণে-বিশেষ ট্রিবিউট শীর্ষক-চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।