মেয়েদের পিছিয়ে রাখার বাসনা দেশকেই পিছিয়ে দেয়া

অতীতে নারীদের নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক মন্তব্য করে আলোচনায় আসা হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফি আবারো নতুন করে আলোচনায়। এবার তিনি মেয়েদের পড়াশুনা নিয়ে মন্তব্য করে তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।

শুক্রবার চট্টগ্রামের আল জমিআতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দি সম্মেলনে মেয়েদের স্কুলে-কলেজে না পাঠানোর জন্য সেখানে উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষকে ওয়াদা করিয়েছেন। তার মতে, স্কুল-কলেজে মেয়েদের না পড়ানোই ভালো। আর পড়ালেও সেটা সর্বোচ্চ চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত।

এখানেই থেমে থাকেননি শাহ আহমদ শফি। তিনি আরো বলেছেন, ‘মেয়েদের স্কুল-কলেজে দেবেন না। যদি বেশি পড়ান তাহলে পত্র-পত্রিকায়তো দেখতেছেন। মেয়েকে ক্লাস এইট, নাইন, টেন, এমএ, বিএ পর্যন্ত পড়ালে ওই মেয়ে কিছুদিন পর আপনার মেয়ে থাকবে না। বেশি পড়ালে আপনার মেয়েকে টানাটানি করে অন্য পুরুষ নিয়ে যাবে।’

তার এ মন্তব্য এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষই এর সমালোচনা করে বলছেন, আহমদ শফির এই বক্তব্য নারীদের পিছিয়ে রাখার জন্য নতুন অপচেষ্টা। কেননা বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী তার যোগ্যতার প্রমাণ রেখে পুরুষের পাশাপাশি থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে নারী তার সাফল্যের চিহ্ন রাখেনি। দেশের উন্নয়ন সূচকেও নারীর এ অবদানের কথা উঠে এসেছে। সেই প্রশংসা বার্তা এসেছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকেও।

আহমদ শফির এ বক্তব্য রাষ্ট্র পরিচালনার মূল সনদ সংবিধানেরও বিরোধী। কেননা সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, ‘‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান।” একইভাবে সংবিধানের ২৮ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।”

শুধু সাংবিধানিকভাবেই নয়, দেশের কোনো বিধান বা আইন; এমন কি কোনো ধর্মেও মেয়েদের শিক্ষায় কোনো রকম বিধি-নিষেধ রাখা হয়নি বলেই শিক্ষাবিদরা জানিয়েছেন।

আমরা জানি, দেশে নারী-পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটিরও বেশি। যদিও আন অফিসিয়ালি এই সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। আর সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের যে সংখ্যা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে, তাতে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন।

এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, এদেশে নারী-পুরুষের সংখ্যা সমান। দেশের এই অর্ধেক জনগোষ্ঠিকে কোনোভাবেই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রাখার চিন্তা শুধু অস্বাভাবিকই নয়, অবাস্তব ও অবান্তর। আর এ জন্যই সরকার নারীদের শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এখনো নিচ্ছে। 

আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, আহমদ শফির ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, যিনি এই মন্তব্যটা করেছেন, তিনি তার ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সংবিধান অনুসারে আমাদের সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

আমরাও মনে করি, শিক্ষাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সব মানুষের অধিকার সমান। হোক তিনি নারী, পুরুষ বা অন্য কেউ। আর এই সমতার ভিত্তিতেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলছে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। কোনোভাবেই যেন সেই অগ্রযাত্রা ব্যাহত না হয়।

আল্লামা শফীনারী শিক্ষাহেফাজত ইসলাম